মেসির রেকর্ড গড়া দিনে সহজ জয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ১৪, ২০২২, ০৯:১৩ এএম

মেসির রেকর্ড গড়া দিনে সহজ জয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল ঘিরে সেভাবে উত্তেজনা ছিল না আগে থেকেই। হট ফেভারিট দল আর্জেন্টিনার দিকেই বাজি ছিল। সেই বাজিতে জিতেছেও তাঁরা। লিওনেল মেসির রেকর্ড গড়া দিনে বল পায়ে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। সাথে জোড়া গোলের আলো ছড়ালেন তরুণ হুলিয়ান আলভারেস। ক্রোয়েশিয়াকে প্রথম ধাক্কাটা দেয় তাঁরা পেনাল্টিতে গোল দিয়ে। সেই ধাক্কা থেকে আর উঠতে পারেনি অপেক্ষাকৃত দুর্বল ক্রোয়েশিয়া। তাঁদের ৩-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়ে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে লাতিনের দেশটি।

লুসাইল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে গোল করেছেন মেসি। তিনি করিয়েছেনও। একই সাথে গড়লেন কয়েকটি রেকর্ড। মেসিময় ম্যাচে ৩-০ গোলের জয়ে শিরোপা লড়াইয়ে উঠল আর্জেন্টিনা।

২৫তম মিনিটে ম্যাচে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগটি পায়। তবে এনসো ফের্নান্দেসের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক দমিনিক লিভাকভিচ।

নকআউট পর্বের প্রথম দুই ধাপে দলের জয়ের নায়ক লিভাকভিচ সাত মিনিট পর করে ফেলেন মস্তবড় ভুল। মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা বল বক্সের মুখে বুক দিয়ে আলতো করে সামনে বাড়ান আলভারেস। ঠিক ওই সময় ছুটে এসে সেটি ধরার চেষ্টা করেন। এটি ফাউল হিসেবে ঘোষণা দেন রেফারি। পেনাল্টির বাঁশি বাজানোর পর আর সংশয় থাকেনি। গোলরক্ষককে তিনি দেখান হলুদ কার্ডও।

বুলেট গতির স্পট কিকে ঠিকানা খুঁজে নেন মেসি। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড ছোঁয়ার দিনে গড়ে ফেললেন আরেক রেকর্ড; গাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে বিশ্ব সেরার মঞ্চে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন মেসি, ১১টি। এবারের বিশ্বকাপে তার গোল হলো ৫টি, গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে আগে থেকে শীর্ষে থাকা কিলিয়ান এমবাপের পাশে বসলেন তিনি। ক্যারিয়ারে মেসির মোট গোল হলো ৯৬টি।

নবীন ক্রোয়েশিয়া আর ওই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে প্রথম রাউন্ড থেকে ধূঁকতে থাকা আর্জেন্টিনা দিনকে দিন শক্তিশালী হয়েছে। এদিনও পেনাল্টিতে এগিয়ে যাওয়ার পর আত্মবিশ্বাস আরও জোরদার হয় তাঁদের। ক্রোয়েশিয়ার ওপর তাঁরা বাড়াতে থাকে চাপ। পাঁচ মিনিট পরেই মিলে যায় দ্বিতীয় গোল।

মেসির পাস পেয়ে মাঝমাঠের আগে থেকে দৌড় দেন আলভারেস। সব বাধা পেরিয়ে বক্সের মুখে অবশ্য হারাতে বসেছিলেন পজেশন, তবে প্রতিপক্ষের পায়ে লেগে ফেরা বল দারুণ এক টোকায় সামনে বাড়ান। ওখানেও দলকে বাঁচানোর সুযোগ ছিল ডিফেন্ডার বোর্না সোসার সামনে; কিন্তু তার দুর্বল শটে বল লাগে আলভারেসের বুকে, এরপর ঠাণ্ডা মাথায় ডান পায়ের শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড।

৪২তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারত আর্জেন্টিনা। মেসির কর্নারে আলেক্সিস মাক আলিস্তেরের হেড লক্ষ্যেই ছিল, দারুণ ক্ষিপ্রতায় বল ঠেকিয়ে দলকে লড়াইয়ে রাখেন লিভাকভিচ।

৫৮তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর দারুণ সুযোগ তৈরি করেন মেসি। তবে ছয় গজ বক্সের বাঁ দিক থেকে শট নিতে গিয়ে কিছুটা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি, ঠেকিয়ে দেন লিভাকভিচ। তিন মিনিট পর অন্যপাশের ডি-বক্সে সুযোগ তৈরি করে ক্রোয়েশিয়া; তবে জটলার মধ্যে ঠিকঠাক হেড নিতে পারেননি লভরেন।

জয়-পরাজয় নিয়ে অনিশ্চয়তা যতটুকু ছিল, তা প্রায় শেষ হয়ে যায় ৬৯তম মিনিটে। মেসির জাদু আর আলভারেসের অনায়াস ফিনিশিংয়ে।

অসাধারণ নৈপুন্যে ডান দিক থেকে বল পায়ে এগিয়ে গেলেন মেসি, সাথে পুরোটা সময় লেগে রইলেন ইয়োস্কো গাভারদিওল, অনেকের মতে যে আসরের সেরা ডিফেন্ডার। বক্সে ঢোকার মুখে মেসি থামলেন, করণীয় ঠিক করলেন, ঘুরলেন, এক ঝটকায় একটু এগিয়ে বাইলাইন থেকে বল বাড়ালেন ছয় গজ বক্সে। বাকিটা অনায়াসে প্লেসিং শটে সারলেন আলভারেস।

দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কয়েকবার ফিরে আসার চেষ্টা করেছে ক্রোয়েশিয়া, কিন্তু সেই ফেরা আর হয়ে উঠেনি। ফলে ফাইনালে উঠে যায় ম্যারাডোনার দেশটি। তাঁদের সামনে এখন বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। ফাইনালে তাঁদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স অথবা মরক্কো। এ দুটি দলের মধ্যে কে বিজয়ী তা জানা যাবে বুধবার দিবাগত রাতের ম্যাচেই। 

Link copied!