ইংল্যান্ড-ফ্রান্স ‘যুদ্ধ’ জয় করে সেমিতে উঠে গেল ফরাসিরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ১১, ২০২২, ১০:৪৪ এএম

ইংল্যান্ড-ফ্রান্স ‘যুদ্ধ’ জয় করে সেমিতে উঠে গেল ফরাসিরা

ইংল্যান্ড বনাম ফ্রান্স শতবর্ষব্যাপী রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। সেই যুদ্ধ শুরু হয় ১৩৩৭ সালে। ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড অবৈধভাবে ফ্রান্সের সিংহাসন দাবি করলে ওই যুদ্ধ শুরু হয়। সেটি ছিল ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে দীর্ঘকালীন যুদ্ধ। প্রথমে ইংল্যান্ড জয় পেলেও পরে ঘুরে দাঁড়ায় ফরাসিরা। জোয়ান অফ আর্ক এবং পরে নেপোলিয়নের হাতে পরাস্ত হয় ইংলিশরা। সেই যুদ্ধের দামামাই যেন বহুকাল পর আবার বেজে উঠেছিল কাতারের আল বায়েত স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালের খেলায়। এবারও ‘যুদ্ধে’ হার মানলো ব্রিটিশরা। 

আজ শনিবার দিবাগত রাতে এই কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে দুই পক্ষেই উত্তেজনা ছিল। ফুটবল শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে ইংরেজ এবং ফরাসিদের লড়াইও দীর্ঘ দিনের। তাই এই ম্যাচ ঘিরে বাড়ছিল উত্তেজনার পারদ। ইংরেজরা ১০ ডিসেম্বরের ম্যাচকে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল যুদ্ধ হিসেবে। কিন্তু শেষ লড়াইয়ে পরাজয়ই মানতে হল তাঁদের।

আল বায়েত স্টেডিয়ামে এদিন ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়েছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ১৬ মিনিটের মাথায় অউরিলিয়ে শুয়েমিনি দূরপাল্লার গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ইংলিশদের সমতায় ফেরান ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন। ৭৭ মিনিটে ফের ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন অলিভিয়ের জিরুদ। সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ডও। কিন্তু পেনাল্টি মিস করেন কেইন।

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে ফ্রান্স। দশম দেম্বেলের ক্রসে নিচু হেড করেন অলিভিয়ের জিরুদ। তবে দুর্বল হেড সহজে গ্লাভসবন্দী করেন পিকফোর্ড। ১৪ মিনিটেরে সময় দারুণ এক আক্রমণ থেকে এমবাপ্পে বক্সে বল বাড়ান, তবে দেম্বেলে ঠিকমত পা লাগাতে পারেননি।  

১৬তম মিনিটে অবশ্য কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পেয়ে যায় ফ্রান্স। দ্রুত আক্রমণে ওঠা ব্লুরা থ্রি লায়নদের ডিবক্সের বাইরে পাস খেলতে থাকে। একসময় বল পেয়ে আকস্মিক শট নেন শুয়েমিনি। ডি বক্সের অনেক বাইরে থেকে নেয়া শটটি ঠেকানোর চেষ্টা করলেও বলের গতির সঙ্গে পেরে ওঠেননি ইংল্যান্ড গোলরক্ষক পিকফোর্ড।

ফ্রান্সের আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণে ভীতি ছড়াচ্ছিল ইংল্যান্ডও। হ্যারি কেইন-বুকায়ো শাকারা ফ্রান্সের জমাট রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। বলের দখল ও আক্রমণে ইংলিশরাই এগিয়ে প্রথমার্ধে।

২৫তম মিনিটে বল দখলে নেওয়ার লড়াইয়ে ফ্রান্সের ডিবক্সে পড়ে যান হ্যারি কেইন। ইংলিশরা পেনাল্টির দাবি জানালে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে তা নাকচ করে দেন রেফারি।

২৮ মিনিটে হ্যারি কেইনের দূরপাল্লার শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান ফ্রান্স গোলরক্ষক হুগো লরিস। কর্নার থেকে জটলায় গোলের সম্ভাবনা জাগলেও ক্লিয়ার করে ফ্রান্সের ডিফেন্ডাররা।  

বড় ম্যাচে দুই দলই রক্ষণ সামলে আক্রমণে ওঠেছে বারবার। মাঝে মাঝে দূরপাল্লার শটে পরীক্ষা নিয়েছে বিপক্ষের গোলরক্ষকের। ইউরোপীয় পাওয়ার ফুটবলের যে গতি, পুরো খেলা জুড়েই ছিল সেটি।  

৪৬ মিনিটে লুক শর পাস থেকে বেলিংহ্যামের দূরপাল্লার শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান লরিস। কর্নার থেকে দারুণ সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু বলে পা ছোঁয়ানোর আগেই ধরে ফেলেন লরিস। প্রথমার্ধে ১-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় ফ্রান্স।

৬৯ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ম্যাগুয়ের। ফ্রিকিক থেকে ডিবক্সে ভেসে আসা বলে হেড নিয়েছিলেন এই ইংলিশ ডিফেন্ডার। তবে অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সাইডপোস্টের পাশ দিয়ে বাইরে চলে যায়। ৭১ মিনিটে সুযোগ নষ্ট করেন শাকা। ফ্রান্সের ডি বক্সে ক্রস করেছিলেন লুক শ। শাকা পা লাগালেও তা লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। ৭৪ মিনিটে হার্নান্দেজের বাড়ানো বল থেকে জিরুদের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৭৬ মিনিটে জিরুদের হাফভলি অবিশ্বাস্যভবে ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড।

৭৭ মিনিটে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। আগের দুবার বঞ্চিত হলেও এবার আর জিরুদকে আটকে রাখতে পারেনি ইংলিশরা। হেড থেকে এই বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ গোলটি করেন তিনি।

৮১ মিনিটে নিজেদের ডিবক্সে মাউন্টকে সরিয়ে বল দখলে নিতে যে ধাক্কাটি মারেন থিও হার্নান্দেজ, সেটি পেনাল্টিতে রূপ পায়। ইংলিশদের জোরালো আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভিএআর দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট কিক নেন রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হ্যারি কেইন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। স্নায়ুর চাপে তিনি নিজেকে সামলে উঠতে পারেননি। ফলে তিনি বল পাঠিয়ে দেন গোলবারের উপর দিয়ে আকাশের ঠিকানায়।

এরপর সমতায় ফেরার অনেক চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায়নি ইংল্যান্ড। যোগ করা সময়ের অন্তিম মুহূর্তে ফ্রি-কিক পায় ইংল্যান্ড। শেষ সুযোগে ফ্রি-কিক নিতে আসেন মার্কাস রাশফোর্ড। তাঁর ফ্রি-কিক অল্পের জন্য পোস্ট উঁচিয়ে মাঠের বাইরে চলে গেলে রেফারি শেষ বাঁশি বাজান। এরপরই ফরাসি নীল শিবির মেতে উঠে বুনো উল্লাসে। 

Link copied!