আগস্ট ১৫, ২০২৫, ০১:৫২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত রাখার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান যে ‘অর্ধেক দুনিয়া সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার’ হুমকি দিয়েছে তার পাল্টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, তার দেশ পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল সহ্য করবে না।
শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ভারতের ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দিল্লির লালকেল্লায় দেওয়া ভাষণে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে পানি চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে ফের বলেন, পানি ও রক্ত একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।
এপ্রিলে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নয়া দিল্লি পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত ঘোষণা করে।
“সিন্ধু পানি চুক্তিতে ভারতের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। ভারতের নদীগুলোর পানি দিয়ে শত্রু দেশ সেচ দিয়েছে, অথচ তখন আমাদের কৃষকরা পানির অভাবে ভুগেছেন। এখন, ভারতের পানিতে কেবলই ভারত এবং এর কৃষকদেরই অধিকার থাকবে। কৃষকদের স্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থ নিয়ে আপস আমরা আর মেনে নেবো না। আর না,” নিজের টানা ১২তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মোদী এ কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
এদিন ১০৩ মিনিটের ভাষণে ভারতের এ প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ নিয়েও সতর্ক করেছেন। বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের তরুণদের ‘মুখের গ্রাস’ কেড়ে নিচ্ছে।
ভারত মহাকাশে নিজস্ব স্টেশন বানানোর পরিকল্পনা করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, নয়া দিল্লির লক্ষ্য মহাকাশ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া।
এনডিটিভি লিখেছে, টানা ১২টি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দিয়ে শুক্রবার ইন্দিরা গান্ধীর রেকর্ড ভেঙেছেন মোদী। তার সামনে এখন কেবল জওহরলাল নেহেরু, কংগ্রেসের এ নেতা টানা ১৭বার স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
এদিনের ভাষণে মোদী ভারতে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) সরলীকরণের ঘোষণা আসতে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের পারমাণবিক শক্তি এখনকার ১০ গুণ এবং শিগগিরই এ খাতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে প্রবেশাধিকারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলেও শুক্রবার জানিয়েছেন এ বিজেপি নেতা।
ভারতেই যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন নির্মাণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত ও বিস্তৃত করার কথাও এসেছে তার ভাষণে। এ বছরের শেষ নাগাদ বিশ্ববাজারে ভারতের তৈরি সেমিকন্ডাক্টর চিপ আসতে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
তার ভাষণে ছিল অপারেশন সিঁদুরের প্রসঙ্গও। কাশ্মীরে ওই সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত তাদের ভাষায় পাকিস্তানের বিভিন্ন ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল, যার পোশাকি নাম ছিল অপারেশন সিঁদুর। এর পাল্টায় পাকিস্তানও হামলা চালালে বেধে যায় সংঘাত। দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এ সংঘাত স্থায়ী হয়েছিল চারদিন, কেড়ে নিয়েছিল কয়েক ডজন মানুষের প্রাণ।
কাশ্মীরের ওই হামলার পেছনে পাকিস্তানের ইন্ধন ছিল অভিযোগ তুলে নয়া দিল্লি সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে।
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় হওয়া ওই চুক্তি অনুযায়ী, বিপাশা, শতদ্রু, ইরাবতী নদীর শতভাগ পানি পায় ভারত। এর বাইরে সিন্ধু, বিতস্তা, চন্দ্রভাগার ৩০ শতাংশ তারা নিতে পারতো, বাকি ৭০ শতাংশ ছাড়তে হত পাকিস্তানকে।
ভারত চুক্তি স্থগিত করার পর থেকেই ইসলামাবাদ এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। সম্প্রতি তারা নয়া দিল্লিকে চুক্তি পুনরায় কার্যকর করতে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধও জানিয়েছে।
গোল বাধে দেশটির সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যে। যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের এ ফিল্ড মার্শাল সিন্ধু নদীতে ভারত কোনো স্থাপনা নির্মাণ করলে ক্ষেপণাস্ত্র মেরে তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
হাতে ‘ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাটতি নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেছিলেন, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে কোনো যুদ্ধে পাকিস্তান যদি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে তাহলে তারা তাদের সঙ্গে ‘অর্ধেক দুনিয়াও সঙ্গে নিয়ে যাবেন’।
এর পাল্টায় লালকেল্লায় দেওয়া ভাষণে মোদী শুক্রবার বলেছেন, “ভারত পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল সহ্য করবে না। শত্রুরা যদি আর কোনো দুর্বৃত্তপনা করার সাহস দেখায়, তাহলে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী তাদের যথোপযুক্ত জবাব দেবে। ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে রক্ত এবং পানি একসাথে প্রবাহিত হতে দেওয়া হবে না।”