প্রেস সচিবের ‘নির্দেশনা’ অনুসরণ করছি, বত্রিশে দাঁড়িয়ে ওসি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১৫, ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম

প্রেস সচিবের ‘নির্দেশনা’ অনুসরণ করছি, বত্রিশে দাঁড়িয়ে ওসি

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে কয়েকজন মারধর ও হেনস্তার শিকার হলেও পুলিশ বলছে, তারা সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ‘প্রেস সচিবের নির্দেশনা’ মোতাবেক কাজ করছেন।

শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও হামলাকারীদের ঠেকাতে দেখা যায়নি; কাউকে মারধর করে তুলে দেওয়া হলে পুলিশ তাকে নিয়ে যাচ্ছে।

ঘটনাস্থলে সাদা পোশাকে থাকা ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমা বেলা ১১টার দিকে বলেন, ৩২ নম্বরে নাশকতার পরিকল্পনার কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই।

“সরকারিভাবে যেহেতু তাদের (আওয়ামী লীগ) কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আমরা সেই নির্দেশনা ফলো করব।”

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের দেওয়া ‘নির্দেশনা’ পুলিশ অনুসরণ করছে দাবি করে ওসি বলেন, “আপনারা হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন, কিছুদিন আগে আমাদের যে প্রেস সচিব, তিনি কিছু ইন্সট্রাকশন্স দিয়েছিলেন। সেই ইন্সট্রাকশন্স মোতাবেক আমরা কাজ করব।” খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

এনটিভি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ১০ আগস্ট ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, “বর্তমানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এটি দুঃখজনক। তবে এ দিনটি আগস্টের অন্য ৩১ দিনের মতোই। কেউ ধানমন্ডিতে বা কোথাও কর্মসূচি করতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ৫০তম বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে শুক্রবার ৩২ নম্বর সড়কে বেশ কয়েকজন মারধর ও হেনস্তার শিকার হন। তাদের মধ্যে এক রিকশাচালকও রয়েছেন। তিনি বেলা ১১টার দিকে আসেন ফুলের তোড়া নিয়ে, যার ওপর কাগজে লেখা ছিল ‘১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস’।

তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের উপস্থিতিতেই স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের স্লোগান দেওয়া লোকজন তার ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে। একজন লাফ দিয়ে গিয়ে তার হাত থেকে ফুলের তোড়াটি কেড়ে নেন। চলে মারধর, ভাঙচুর করা হয় তার রিকশাটিও। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই রিকশাচালক।

আজিজুর রহমান নামের ওই রিকশাচালক পরে বলেন, তিনি যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন। চারশ টাকা দিয়ে ফুলের তোড়াটি কিনেছেন।

“আমার অনেক কষ্টের টাকা, আমি দুই বছর ঢাকা শহরে রিকশা চালাই। শুধু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি জন্যি এহানে আইছি।”

এর আগে আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে এক নারীকেও হেনস্তা করা হয়। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।

এছাড়া আরেক ব্যক্তিকে সেখানে মারধর করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

সকালে এক দম্পতি তাদের তিন সন্তানসহ এলে ‘আওয়ামী লীগ সন্দেহে তাদের হেনস্তা করে স্থানীয় বিএনপিকর্মীরা। পরে তাদের সরিয়ে নেয় পুলিশ।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার থেকেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ব্যাপক নিরাপত্তার আয়োজন করে পুলিশ। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দুই প্রবেশমুখে যানবাহন আটকে দিয়ে মানুষের চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় সাঁজোয়া যান ও জলকামান।

দিনটিকে ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে পারেনএমন ধারণা থেকে তাদের ঠেকাতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ৩২ নম্বরে অবস্থান নেয় স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্যরা। তখন থেকেই আওয়ামী লীগ সন্দেহে যাকে তাকে তল্লাশি করা হচ্ছিল।

সেদিন তিনজনকে মারধর করে পুলিশেও সোপর্দ করা হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ সন্দেহে ঢাকা কলেজ ছাত্রশিবিরের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মো. মামুনকে মারধর করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে অবশ্য তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়।

আহত এ শিবির নেতার ভাষ্য, তিনি এখানে আসার পর কিছু লোক তাকে মারধর করে। কাছেপিঠেই পুলিশ ছিল। তিনি অনেক ডেকেও পুলিশের কোনো সাড়া পাননি। এসময় আহাদ নামে ঢাকা কলেজ ছাত্রশিবিরের এক সমর্থককেও মারধরকারীরা ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিয়ে যায়।

ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমা শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বলেন, “এখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। রুটিন যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেটাই মোতায়েন করা হয়েছে। যেহেতু গতকাল বিপুল জনসমাগম ছিল, সেজন্য আমরা বাড়তি কিছু ফোর্স মোতায়েন করেছি। এর বাইরে সেরকম কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আমাদের কাছে নেই।”

এর মধ্যে কয়েকজনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওসি বলেন, “গতকাল বিভিন্ন সন্দেহে কেউ মোবাইল টানা পার্টি, চুরি, ছিনতাইকারী অথবা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্যএমন সন্দেহে পাঁচজনকে আমাদের কাছে হ্যান্ডওভার করা হয়েছে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাইবাছাই করছি। পরে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”  

Link copied!