সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২, ১০:২৬ এএম
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টন প্রশ্নে দ্বিপাক্ষিকভাবে অগ্রগতি না হওয়ায় এখন আন্তর্জাতিক তৃতীয় কোন পক্ষের সহযোগিতা নেয়া উচিত বলে মনে করেছেন দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ এখনই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বাইরে বিকল্প বা অন্য কোন পথে যেতে রাজি নয়।
দুই দেশের অভিন্ন নদী আছে ৫৪টি । কিন্তু গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তির ২৬ বছর পর আর মাত্র একটিই নদীর পানি নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে - যেটি হলো কুশিয়ারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
এর পর সেই পুরনো প্রশ্নটিই উঠছে আবার: দুই দেশের মধ্যে যৌথ নদী কমিশন প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরেও অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টন সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কেন, জটিলতা কোথায়? এ নিয়ে এখন বাংলাদেশে চলছে নানা আলোচনা।
দ্বিপক্ষিকভাবে কেন সমাধান হচ্ছে না?
তিস্তা নদীর পানি বন্টনের যে চুক্তি ঝুলে রয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে, সেটি এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আলোচ্য সূচিতেও ছিল না।
ঢাকায় কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন।
দেশের অন্যতম বিশেষঞ্জ ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, দ্বিপক্ষিকভাবে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টনের প্রশ্নে মীমাংসা করা যাচ্ছে না।
তিনি মনে করেন, এখন বাংলাদেশকে তৃতীয় কোন পক্ষের সহযোগিতা নেয়া প্রয়োজন। "যদি আন্তর্জাতিক মহল থার্ড পার্টি (তৃতীয় পক্ষ) এগিয়ে আসে, তখন সমাধান সম্ভব হতে পারে।"
তৃতীয় কোন পক্ষকে আনা যাচ্ছে না কেন
থার্ড পার্টির সহযোগিতার বিষয়ে ড. নিশাত আরও বলেন, "যেমন ধরুন, ইসরায়েল এবং প্যালেস্টাইনের মধ্যে যতটুকু সহযোগিতার চুক্তি হয়েছে, তার প্রধান অংশ পানি সংক্রান্ত। এ ব্যাপারে তাদের বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র এবং নরওয়ে সহযোগিতা করেছে। আমাদের যদি তৃতীয় শক্তি সাহায্য করতো, তাহলে আমরা কিছুটা এগুতে পারতাম। ভারত তাতে রাজি না" তবে বাংলাদেশ এবং ভারত-দু'টি দেশই অভিন্ন নদীর সমস্যা সমাধানে তৃতীয় কোন পক্ষের মধ্যস্থতা বা সাহায্য নিতে রাজি নয়।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই কারণ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মোহসিন বলছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে তিস্তা সহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি নিয়ে কোন অগ্রগতি হচ্ছে না।
সেজন্য এই নদীগুলোতে যুক্ত অন্য দেশগুলোর সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
"আমার মনে হয়, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে পানি বন্টনের বিষয়টা জিম্মি হয়ে আছে। সেই জায়গাটাতে বাংলাদেশ শুড গো ফর অলটারনেটিভ (বিকল্প)।"
অধ্যাপক আমেনা মোহসিন মনে করেন, বাংলাদেশের একটা বিকল্প প্রস্তাব দেয়া দরকার।
তিনি বলেন, "সেখানে অভিন্ন নদীগুলোর সাথে অন্যান্য যে দেশগুলো যেমন নেপাল, চীন আছে, তাদের নিয়ে বৃহত্তর পরিসরে এগুনোর প্রয়োজন রয়েছে।"
বড় বাধা পশ্চিমবঙ্গের আপত্তি
আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনার সমস্যা সমাধানের দাবিতে ভারতেও যারা আন্দোলন করেন, তাদেরও অনেকে মনে করেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বড় বাধা হয়ে রয়েছে।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা একমত হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে তিস্তা চুক্তি ঝুলে রয়েছে।
ভারতের নদীর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্দোলনকারীদের একজন সব্যসাচী দত্ত সম্প্রতি বাংলাদেশ এবং ভারতের অভিন্ন নদীর সমস্যা নিয়ে একটি সম্মেলন করেছেন। সেই সম্মেলনে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা অংশ নিয়েছিলেন।
সব্যসাচী দত্ত বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে তিস্তা ইস্যুতেই সমাধানের চেষ্টা করেছে এবং সেখানে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি চলে আসায় অন্য নদীগুলোর বিষয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি।
"অভিন্ন ৫৪টা নদী আছে। কিন্তু এত বছর তো তিস্তা নিয়েই কথাবার্তা চলতো।"
সব্যসাচী দত্ত বলেন, "তিস্তার বিষয়টা এত বেশি রাজনীতিকীকরণ হয়েছে যে, সমাধানের চেষ্টায় কোন বৈচিত্র ছিল না।
"আমার মনে হয়, নদীর অববাহিকার ভিত্তিতে পানি বন্টনের যে লাভ, সেটা ভারতের নীতিনির্ধারকদের আরও বেশি করে বোঝানো প্রয়োজন।"
"মানে বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং রাজনীতিকে এক জায়গায় আনতে হবে। এখানে রাজনীতিটাই এগিয়ে থাকায় সমস্যা হয়েছে" বলেন মি: দত্ত।
তবে ভারতের ভেতরে রাজনীতি কী আছে এবং তা পানির সমস্যা সমাধানে কী সঙ্কট সৃষ্টি করছে, সেটা বাংলাদেশ সরকার আমলে নিতে চায় না।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারেই আস্থা বাংলাদেশের
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি তাদের নিজেদের বিষয় বলেই বাংলাদেশ মনে করে।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, অভ্যন্তরীণ বিষয় যাই থাকুক না কেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পানি সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট থাকবে বলে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে।
সেজন্য বাংলাদেশ এখনই দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের চেষ্টার বাইরে অন্য কোন পথে যেতে চাইছে না বলে মি: ফারুক উল্লেখ করেন।
"আমরা (বাংলাদেশ ভারতের সাথে) বন্ধুত্ব সম্পর্ক বজায় রেখেই সমাধান করতে চাইছি।"
প্রতিমন্ত্রী মি: ফারুক বলেন, "আমাদের সমুদ্র জলসীমা নিয়ে যে সমস্যা ছিল, সেটা নিয়ে কিন্তু আমরা আলোচনায় চেষ্টা করেছিলাম। যখন আলোচনায় হয়নি। তখন আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে আমাদের পক্ষে রায় পাই।
নদী নিয়ে তথ্য-গবেষণার অভাব?
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার টানা তেরো বছরে ভারতের সাথে সম্পর্ক যেকোন সময়ের তুলনায় ভাল বলে বলা হয়।
কিন্তু বছরের পর বছর ধরে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের চেষ্টায় কোন ফলাফল যে আসছে না, পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত সেখানে নদীগুলোর ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ বা গবেষণায় ঘাটতিকে অন্যতম বাধা হিসাবে দেখেন।
তিনি বলেন, "দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালে সম্মত হয়েছেন যে, নদী এবং অববাহিকা ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবেন। এখন ভারতের তো কোন গরজ নেই।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, "পানি আসছে ভারত থেকে। ভারত ইচ্ছা করলে পানি পুরোটা তুলে নিতে পারে এবং যেটা নিচ্ছে তিস্তা নদীতে, মহানন্দা নদীতে ও আরও অনেক ছোট নদীতে। গোমতী এবং মনু নদীতে ভারতে পানি নিয়ন্ত্রণের অবকাঠামো আছে।
"যেহেতু অববাহিকা ভিত্তিক পানি বন্টনের নীতি ভারত মেনে নিয়েছে, সেজন্য তথ্য সংগ্রহ বা হোমওয়ার্ক আমাদেরকেই (বাংলাদেশ) করতে হবে এবং আমাদেরকেই এগুতে হবে" - মনে করেন ড. আইনুন নিশাত।
দিল্লির কাছেও নানা ব্যাখ্যা রয়েছে অভিন্ন নদীগুলোর পানি সমস্যা সমাধান না হওয়ার প্রশ্নে।
ভারতের সাবেক কূটনীতিকদের অনেকে মনে করেন, অভিন্ন নদীগুলোর ব্যাপারে দুই দেশেরই গবেষণা এবং তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীনা সিক্রি বলেছেন, গঙ্গা নিয়ে সব রেকর্ড থাকায় সেই চুক্তি হয়েছিল।
তিনি উল্লেখ করেন, পানি ব্যবস্থাপনাকে ভিত্তি করে সমাধানের জন্য তথ্য বা রেকর্ড প্রয়োজন।
কিন্তু তিস্তার চুক্তির যে খসড়া করা হয়েছিল, তাতে দুই দেশের মধ্যে কত শতাংশ করে পানি ভাগাভাগি করা হবে-সেটাই শুধু বলা হয়েছিল।
কিন্তু নদীতে পানির কতটা আছে, তার কোন তথ্য ছিল না। এই বিষয়কে বীনা সিক্রিও সমাধানের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হিসাবে দেখেন।
তিনি বলেন, "পানি প্রবাহের তথ্য জানা ছাড়া আলোচনা সম্ভব নয়।"
"কারণ কোন আলোচনায় তথ্য নেয়ার ক্ষেত্রে ভিত্তি হতে হবে পানি প্রবাহের তথ্য। একমাত্র গঙ্গা পানিবন্টনে সব তথ্য এবং রেকর্ড থাকায় সেই চুক্তি হয়েছে" - উল্লেখ করেন বীনা সিক্রি।
তিনি বলেন, "ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে অভিন্ন অন্য কোন নদীর পানি নিয়ে প্রকৃত তথ্য ও রেকর্ড নেই। আসলে নদীগুলোর ব্যাপারে হাইড্রোলজিক্যাল জরিপ করা প্রয়োজন।"
বিশেষজ্ঞরা দু’দেশের স্বার্থকে বড় বিষয় মনে করছেন
দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের ক্ষেত্রে দুই দেশের স্বার্থ বা চাওয়া -পাওয়াকেও বড় বিষয় মনে করেন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা।
ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় দুই পক্ষের দেয়া-নেয়ার যে বিষয় থাকে, সেখানে ভারত তাদের প্রত্যাশার সবই পেয়ে গেছে। ফলে নদীর পানি বন্টনে ভারতের আগ্রহ কমে গেছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, "১৯৯৬ সালের আগে পর্যন্ত ভারত তিক্ত ছিল যে, ভারতের সন্ত্রাসী বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের ভূমিতে প্রশ্রয় দেয়া হতো। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সরকারে এসে তা সম্পূর্ণ বন্ধ করেছেন।"
তিনি উল্লেখ করেন, "ভারতের দ্বিতীয় চাহিদা ছিল ট্রানজিট। আমরা রেল ট্রানজিট দিয়েছি, নৌ ট্রানজিট, রাস্তার ট্রানজিট, বাস ট্রানজিট এবং বিদ্যুতের ট্রানজিটও দিয়েছি।"
ড. আইনুন নিশাত বলেন, "আমরা সব দিয়ে বসে আছি। কিন্তু বিনিময়ে আমরা কি পেতে পারি-সেটা পর্যালোচনা করার বিদ্যা-বুদ্ধি আমাদের এখানে দেখছি না।
"ভারত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল, আমরা কি চাই। আমরা বলেছিলাম গঙ্গার পানি। সেই চুক্তি হয়েছে। কিন্তু চুক্তিটা অত্যন্ত দূর্বল চুক্তি হয়েছে।"
এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যায় ড: নিশাত বলেন, "দুই দেশের মধ্যে কোন সম্পদ নিয়ে যখন চুক্তি হয়, এটার কোন পরিবর্তন যতদিন করা হবে না, ততদিন মুল চুক্তিই চালু থাকবে। কিন্তু গঙ্গারটা তা হয়নি।"
নদী কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় এসে সে বছরই ভারতের সাথে গঙ্গার পানি নিয়ে ৩০ বছরের চুক্তি করেছিল।
এখন কুশিয়ারা নদীর পানি ১৫৩ কিউসেক দুই দেশ প্রত্যাহার করার ব্যাপারে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, সেই বাংলাদেশ সমস্যাগুলো সমাধানে নতুন করে যাত্রা বলে বর্ননা করছে।
তবে এর আগে ২০১৯ সালে ফেনী নদী থেকে ভারতের এক দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সম্মতি দিয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে যৌথ নদী কমিশন গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছরই ১৯৭২ সালে। কিন্তু ৫০ বছর হলেও সেই কমিশনের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
তিন্তা চুক্তি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ার পর ১২ বছর যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকই হয়নি।
এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের আগে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়।
বাংলাদেশের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, এখন নতুনভাবে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ এগুবে বলে তিনি মনে করেন।
"এগুলোর সমাধানতো এক বা দুইদিনে হবে না" - বলেন মি. ফারুক - "বারো বছর পর আমরা যৌথ নদী কমিশনের মিটিং শুরু করেছি। সুতরাং তিস্তা নিয়ে আলোচনা হবে। কুশিয়ারা নিয়ে আমরা সমাধান করলাম।"
"তিস্তা নিয়ে আমরা চাপ সৃষ্টি করেছি। আরও ছয়টা নদী যে, মনু, মুহুরী, গোমতী, খোয়াই, ধরলা, দুধকুমার-এগুলো নিয়েও আলোচনা আগামীতে হবে।"
প্রতিমন্ত্রী ফারুক বলেন, নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। আলোচনার মাধ্যমেই আমরা সুফল আনতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।"
প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, যৌথ নদী কমিশনের পরবর্তী বৈঠক আগামী বছরের এপ্রিল মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এখন থেকে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক নিয়মিত করার তাগিদ বাংলাদেশের থাকবে বলেও তিনি জানান।