মে ১৭, ২০২৩, ০৫:২০ এএম
বাংলাদেশের নৌপথকে পৃথিবীর সাথে যুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি।মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ছয়টি প্রকল্পের নির্মাণ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত চুক্তিপত্র সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপ্রতিমন্ত্রী এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. জাহঙ্গীর আলম খানের নামে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “নদীমাতৃক বাংলাদেশকে পৃথিবীর কাছে তুলে ধরতে চাই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে; আরো এগিয়ে যাবে। নৌপথ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে; নৌপথের অনেক সম্ভাবনা আছে। নৌপথের আরো উন্নয়নে প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে জানিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নকে থামিয়ে দেয়ার জন্য অনেকে চেষ্টা করেছে। কুচক্রিমহল পদ্মা সেতুর স্বপ্নের প্রকল্প নিয়ে মহাপরিকল্পনা নিয়েছিল। তারা ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সফল হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও দাতা সংস্থাগুলো দেখেছে বাংলাদেশ অর্থের অপচয় করেনা; সক্ষমতা আছে।বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা আনন্দিত। বিশ্বব্যাংক আমাদের সাথে আছে। পদ্মা সেতু নিয়ে কুচক্রিরা ব্যর্থ হয়েছে; আমরা জয়ী হয়েছি। বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০বছর পূর্তিতে বিশ্বব্যাংক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাদের সদর দফতরে আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্মানিত করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংক কর্তৃপকক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”
আইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি নুসরাত নাহিদ ববি।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপির উপস্থিতিতে চুক্তিপত্রগুলোতে স্বাক্ষর করেন বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষে প্রকল্প পরিচালক মো. আয়ুব আলী। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন লিমিটেডের প্রতিনিধি মুকিতুর রহমান, এনডিই লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান রায়হান মুস্তাফিজ এবং দায়েং (Daeyang) ইন্ডাস্ট্রিয়াল কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে জি হো ইউম (Ji-Ho- Youm)।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সহজতর করার লক্ষ্যে আধুনিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বিআইডব্লিউটিএ’র ছয়টি প্রকল্পের নির্মাণ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত চুক্তিপত্র আজ স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্পগুলো হলো-অবকাঠামোসহ দু’টি জেনারেল কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ, তিনটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ও একটি ডেক এন্ড ইঞ্জিন পার্সোনেল ট্রেনিং সেন্টার (ডিইপিটিসি) এর উন্নয়ন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ৮৩০ কোটি টাকা।জেনারেল কার্গো টার্মিনাল দু’টি হলো- ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জস্থ পানগাঁও এবং ব্রাম্মণবাড়ীয়া জেলার আশুগঞ্জ। প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল তিনটি হলো- চাঁদপুর, বরিশাল ও ঢাকার শ্মসানঘাট। এর মধ্যে শ্মশানঘাট টার্মিনালটি নতুনভাবে নির্মিত হচ্ছে। ডিইপিটিসিটি নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। প্রকল্পগুলোর কাজ এবছরের জুনে শুরু হয়ে ২০২৫ এর মে মাসে শেষ হবে।
পানগাঁও জেনারেল কার্গো টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হবে ১৬৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। তমা কন্সট্রাকশন লিমিটেড কাজটি বাস্তবায়ন করবে। আশুগঞ্জ জেনারেল কার্গো টার্মিনালটি নির্মাণ করবে বাংলাদেশ-কোরিয়ার যৌথ কোম্পানি ‘ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স(এনডিই)-দায়েং।’ এটি নির্মাণে ব্যয় হবে ২১০ কোটি টাকা। প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল চাঁদপুর, বরিশাল ও ঢাকার শ্মসানঘাট নির্মাণে ব্যয় হবে যথাক্রমে ৯৩ কোটি ৪৩ লাখ, ৯৩ কোটি ৩০ লাখ এবং ১৮৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এগুলো বাস্তবায়ন করবে যথাক্রমে তমা কন্সট্রাকশন লিমিটেড, বাংলাদেশ-কোরিয়ার যৌথ কোম্পানি ‘এনডিই-দায়েং’ এবং কোরিয়ার কোম্পানি দায়েং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কন্সট্রাকশন লিমিটেড। ডিইপিটিসি’র কাজটি বাস্তবায়ন করবে এনডিই লিমিটেড, বাংলাদেশ। এজন্য ব্যয় হবে ৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ অঞ্চলের নৌ-করিডোরের সক্ষমতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন এবং একে টেকসই খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌপথ খনন এবং টার্মিনালসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পের আওতায় উক্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে। চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌপথ খনন এবং টার্মিনালসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রাক্কলিত মূল্য ৩৩৪৯.৪২ কোটি টাকা। যার মধ্যে বিশ্বব্যাংক এর প্রকল্প সাহায্য (পিএ) ৩০৫২.৮০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) ২৯৬.৬২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআইডব্লিউটিএ)।