ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তার দখলে কি আসলেই ইলুমিনাতি?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩, ১১:৩৬ পিএম

ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তার দখলে কি আসলেই ইলুমিনাতি?

‘শিরোনামহীন’ ব্যান্ড ইলুমিনাতি অর্থাৎ সিক্রেট সোসাইটির সদস্য। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের মো. সাজিম নামের একজন ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তাঁর একটি ভিডিওতে দাবি করেছেন শিরোনামহীনের বদ্ধ জানালা গানটি নিশ্চিত করে যে তারা ইলুমিনাতির সদস্য।

শিরোনামহীনকে নিয়ে তৈরি ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে, ইলুমিনাতি একটা ওভারহাইপড টপিকে পরিণত হয়েছে।

কি এই ইলুমিনাতি? ইলুমিনাতি মিথ নাকি বাস্তব?

ইলুমিনাতি শব্দের অর্থ আলোকিত জগৎ। ১৭৭৬ সালের ১ মে জার্মানির বেভেরিয়া রাজ্যের ইনগোলসটেড ইউনিভার্সিটির জার্মান ফিলোসোফির শিক্ষক এ্যাডাম ওয়েশপ্টের হাত ধরেই ইলুমিনাতির যাত্রা শুরু হয়। তিনি ৫ জন সদস্যের একটি কমিটি নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্ম ভেদাভেদের উর্ধ্বে গিয়ে মুক্ত চিন্তা করতে পারার মানসিকতা তৈরি করা। মূলত সেকুলারিজমের মনোভাব থেকেই এই সংস্থার উদ্ভব হয়েছিল।

প্রাথমিক অবস্থায় রোমান রূপকথার জ্ঞানের দেবী মিনেরাকে উদ্দেশ্য করে পেঁচাকে তাদের প্রতীকি হিসেবে ব্যবহার করতো, পরবর্তীতে পিরামিডের মাঝে এক চোখ ইলুমিনাতির প্রতীকি হিসাবে ব্যবহার করা শুরু হয়। ইলুমিনাতি বরাবরই গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে কঠোর ছিল, যেন তাদের অস্তিত্ব সর্ম্পকে বাইরের কেউ জানতে না পারে। 

সদস্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তারা শিক্ষিত এবং সৎচরিত্রবান ক্যাথলিকদের নির্বাচন করতেন, অপরদিকে ইহুদি, নারী, ধর্মগুরুসহ অন্যান্য গোপনীয় সম্প্রদায়ের সদস্যের জন্য ইলুমিনাতিতে যুক্ত হওয়ার বিষয় নিষিদ্ধ ছিল। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী শিক্ষানবিশ ধনীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতো। 

একটা সময় পরে তাদের সংস্থার পেছনের উদ্দেশ্যকে ধর্মবিদ্বেষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৭৯৮ সালে জন রবিনসনের লেখা বই “Proofs of A conspiracy”- তে ইলুমিনাতির বিষয়টি উঠে এসেছিল, যেখানে তিনি এটাও জোর গলায় দাবি করেছিলেন যে ফরাসি বিপ্লবের সাথে ইলুমিনাতির সরাসরি সংযুক্ততা রয়েছে। এরপর নানা বিষয়কে বিবেচনা করে ইলুমিনাতিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। 

পরবর্তীতে ২০০০ সালে আমেরিকান লেখক ডেন ব্রাউন এর রহস্য-থ্রিলার উপন্যাস “Angels & Demon”- এর মাধ্যমে ইলুমিনাতি নতুনভাবে আলোচনায় আসে। 

ইলুমিনাতিতে ব্যবহারকৃত প্রতীকিগুলো পিরামিডের মাঝে একটা চোখ, ডেভিল হর্নস ইত্যাদি নিয়েও নানা সময় সমালোচনা হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সকল ধর্মেই চোখের ব্যবহার রয়েছে আবার যেকোনো আর্কিটেকচারাল কাজে ত্রিভুজ বা পিরামিড আকৃতি ব্যবহার করাই লাগে। এদিকে ডেভিল হর্নস ব্যবহার করা হয় কনসার্টের ক্ষেত্রে। 

তবে ইলুমিনাতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে এর অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তামূলক তথ্য পাওয়া যায়নি। বেশকিছু গুজব ছড়ালেও তার সত্যতা প্রমাণ হয়নি। 

এদিকে, সাম্প্রতিক শিরোনামহীনকে নিয়ে ইলুমিনাতির সাথে সংযুক্ত থাকার বিষয়টি নিয়ে যখন তারা তাদের ভেরিফাইড পেজ থেকে জানানো হয়, এই ধরনের কোনো বিষয়ের সাথে তারা যুক্ত নয়। এই ধরনের মিথ্যা গুজবের বিরুদ্ধে তারা আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। তার পরপরই সাজিম নামের ছেলেটি তার ভিডিও সরিয়ে ফেলে নতুন একটি ভিডিওতে ক্ষমা চেয়ে স্বীকার করে নেয়, যে সে ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিল। 

Link copied!