দেশে গত বছর ধর্ষণের শিকার হাজারও কন্যাশিশু, নিহত ২৭২ জন: রিপোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২৮, ২০২২, ১০:২৪ এএম

দেশে গত বছর ধর্ষণের শিকার হাজারও কন্যাশিশু, নিহত ২৭২ জন: রিপোর্ট

দেশে ধর্ষণ ও কন্যাশিশুদের ওপর নিগ্রহের ভয়াহ একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে একটি সংগঠন। সংগঠনটি তাদের রিপোর্টে বলেছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে অন্তত এক হাজার ১১৭ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ হত্যা করা হয়েছে ২৭২ জনকে। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম নামের একটি সংগঠন এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের উপর একের পর এক নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমগুলোতে। প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, হত্যার শিকার হচ্ছে তারা। বন্ধ হচ্ছে না বাল্যবিবাহের ঘটনাও। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সব তথ্য নিয়ে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছে এই ফোরাম।

বাংলাদেশ ধর্ষণের সংকট: মৃত্যদণ্ড কার্যকর করছে কি? | ডিজিবলিটজ

সংগঠনটির হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের উপর যৌন নিপীড়িন ও নির্যাতনের ঘটনা ছিল ১১৬টি৷ এর মধ্যে ৮৮ শিশু যৌন নিপীড়ন ভোগ করেছে। ২৮ কন্যাশিশু পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে।

সবচেয়ে ভয়াহ চিত্রটি উঠে এসেছে ধর্ষণের পরিসংখ্যানে। গত বছর সারাদেশে এক হাজার ১১৭ কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে৷ ১০০ শিশুই ছিল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন৷ মসজিদ, মাদ্রাসাতেও ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০ জন। ১৫৫টি শিশু দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ ধর্ষণের কারণে পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছে। ধর্ষণের পর ৪৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে। চার শিশু নিজেরা আত্মহত্যা পথ বেছে নিয়েছে। 

২৭২ কন্যাশিশুকে গত বছর হত্যা করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে ৩৭ জনকে পূর্ব শত্রুতার কারণে, ১৩৪ জন পারিবারিক বিরোধে, ৪৫ জন ধর্ষণের পরে, ২৭ জনকে প্রেমের কারণে, নয়জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়৷ আট অপহৃত শিশু, পাঁচ গৃহকর্মী হত্যার শিকার হয়েছে৷ এছাড়া নির্যাতন, নিপীড়ন, সম্পর্কের টানাপোড়েনসহ বিভিন্ন কারণে ২০২১ সালে ২৪২ শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে৷

গত বছর গৃহকর্মে নিযুক্ত ৩৫ কন্যাশিশু নির্যাতন ভোগ করেছে৷ যাদের মধ্যে পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছে। মসজিদ, মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাস্তির নামে নির্যাতন কিংবা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে আরো আট শিশু৷ বন্ধ হয়নি মেয়েদের উপর এসিড সন্ত্রাসও৷ ২০২১ সালে ১০ কন্যাশিশুর শরীরে এসিড ছোঁড়া হয়েছে।

২০২১ সালে ১৯৭ জন মেয়ে শিশুকে অপহরণ ও নয় শিশুকে পাচার করা হয়েছে৷ অপহরণের পর ১০৬ জনকে উদ্ধার করা গেছে৷ পাচার হওয়া নয়জনের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে মাত্র তিনজন৷

কন্যাশিশুরা গৃহেও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে৷ এরমধ্যে স্বামীর নির্যাতনের শিকার ছয়জন, ১৮ জন নিজ বাড়ি, ছয়জন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে নির্যাতন ভোগ করেছে৷ ৪৭টি ইভ টিজিংয়ের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে সংগঠনটি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অন্তত ১৩ কন্যাশিশুকে বাল্যবিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ৮৭ শিশুকে বিয়ে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

সংবাদপত্রে উঠে আসা খবর থেকে কন্যাশিশুর প্রতি অবহেলাজনিত ৩৫টি ঘটনা তালিকাভুক্ত করেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম৷ ৩৩ টি ক্ষেত্রে পরিবারের কাছ থেকে তারা পরিত্যাক্ত হয়েছে, দুইটি ক্ষেত্রে শিশুদের বিক্রি করে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Link copied!