ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২, ০২:২৪ পিএম
পশ্চিমা দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারিকে পাত্তা না দিয়ে গত সোমবার পূর্ব ইউক্রেনের দুটি এলাকাকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের ওই দুই অঞ্চলে সেনা পাঠানোর নির্দেশও দেন তিনি। এরপর থেকেই বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞায় পড়ছে রাশিয়া। নিষেধাজ্ঞা আরোপের সর্বশেষ তালিকায় রয়েছে কানাডা ও জাপান। তাছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নও নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। খবর, রয়টার্স, বিবিসি ও আলজাজিরার।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা
রাশিয়ার ওপর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার প্রথমে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাজ্য। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও আসে নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। আর, ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরদিন মঙ্গলবার প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ স্থগিত করেছে জার্মান সরকার।
এ ছাড়া রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে হঠাৎ রুশ হামলা? কারণ বলছে তুরস্কের একটি পত্রিকা
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহীদের ২ অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার একদিন পর গতকাল রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম দফায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
জাস্টিন ট্রুডো বলেন, “তার সরকার তথাকথিত স্বাধীন রাষ্ট্র দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের সঙ্গে কানাডিয়ানদের যাবতীয় আর্থিক লেনদেন নিষিদ্ধ করবে। এ ছাড়া, রাশিয়ান সার্বভৌম ঋণ ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত থাকা থেকে কানাডিয়ানদের বিরত রাখা হবে।” রুশ পার্লামেন্টের যেসব সদস্যরা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলেও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জানান।
আরও পড়ুন: পশ্চিমাদের পাত্তা না দিয়ে ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু
ট্রুডো আরও বলেন, “ কানাডা রাশিয়া সমর্থিত দুটি ব্যাংকের ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে এবং তাদের সঙ্গে যেকোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ করবে।”
ট্রুডো আরও জানান, তিনি ওই অঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর অনুমোদন দিচ্ছেন।
আরু পড়ুন: পুতিন জিনিয়াস, তিনি তার দেশকে ভালোবাসেন: ট্রাম্প
এদিকে, ইউক্রেনে মস্কোর হস্তক্ষেপকে দেশটির সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে গতকাল রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।
জাপানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছে- জাপানে রাশিয়ান বন্ড ইস্যু নিষিদ্ধ করা এবং নির্দিষ্ট কিছু রুশ ব্যক্তির সম্পদ জব্দের পাশাপাশি জাপানে তাদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা।”
আরও পড়ুন: রাশিয়া ও ইউক্রেন-কার ক্ষমতা কত?
রাশিয়ার আগ্রাসন স্পষ্টভাবেই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে যাচ্ছে মন্তব্য করে ফুমিও কিশিদা বলেন,“আমরা আবারো এসব উদ্যোগের সমালোচনা করছি এবং রাশিয়াকে কূটনৈতিক আলোচনায় ফিরে আসার জন্য জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত, গত সোমবার পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহীদের ২ অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর সেখানে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের নির্দেশ দেন তিনি।
এরপরই মূলত নিষেধাজ্ঞা আসা শুরু করেছে পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষ থেকে। প্রথমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও একই পথ হেঁটেছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাশিয়ার ওপর ‘প্রথম দফার’ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় মূলত রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিশানা করা হয়েছে।
বাইডেন স্পষ্ট করে বলেছেন. “রাশিয়া যদি পিছু না হটে, তাহলে তাদের ওপর আগামী দিনে ধাপে ধাপে আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হবে।”