ভোগান্তির দিনে ভরসা কেবল বিআরটিসি বাস

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ৬, ২০২১, ০৪:৫০ পিএম

ভোগান্তির দিনে ভরসা কেবল বিআরটিসি বাস

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর রাস্তায় বেসরকারি বাসের দেখা মেলেনি। বেসরকারি গণপরিবহন না পেয়ে ভিড় বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির বাস কাউন্টারে।

শনিবার (৬ অক্টোবর) সকাল ১১টার ফার্মগেটে বিআরটিসির টিকিট কাউন্টারে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। অনেকে বাসে ঝুলে যাচ্ছেন।

মোহাম্মদপুর বিআরটিসি কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সবাই ব্যস্ত নিজেদের টিকিট নিশ্চিতে। কেউ যাচ্ছেন অফিসে, কেউ বা কলেজে, আবার কেউ পরীক্ষা দিতে। যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় ওই বাস স্ট্যান্ডে থাকা ৩৭টি বাসের মধ্যে ৩৫টিই ছেড়ে যেতে দেখা যায় অল্প সময়ের মধ্যে।

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের ট্রাফিক ইনচার্জ মো. হাবিবুর রহমান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘সকালে এমনিই চাপ বেশি থাকে। কিন্তু আজ সব বাসই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে গেছে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে যাত্রীর চাপ অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি।’

টিকিট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী রাশিদা দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘৭টায় বের হয়েছি বাসা থেকে। কিন্তু বাস কাউন্টারে এসে দুইটা বাস মিস করেছি। দীর্ঘ লাইন থাকওলেও আমার সিরিয়াল আসেনি। মাত্রই টিকিট পেলাম, এখন অফিসের দিকে রওনা দেব। অফিস ৯টা ৪৫-এ। জানি না, সময়মতো পৌঁছাতে পারব কি না।’

কথা হয় আরেকজন যাত্রী নীরবের সাথে। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন ফার্মগেটে। নীরব এই রিপোর্টারকে বলেন, ‘আধা ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি সিএনজির খোঁজে। করোনার টিকা নিতে জন্য পিজিতে যাবো। ৩৫০ টাকার নিচে কোনো অটোরিকশা যেতে রাজি হচ্ছে না। বাসে গেলে দেরি হবে। তাই অটোরিকশায় যেতে চাইছিলাম। এরা ফাজলামি শুরু করছে। একদিকে জিনিসপত্রের এত দাম, তার ওপর বাস বন্ধ করে বাকি সব যানবাহনের ভাড়া বাড়ানো, আমরা তো নিশ্বাস নিতে পারব না আর কিছুদিন পর। না খেয়ে মরতে হবে আমাদের।’

আজ শনিবার (০৬ নভেম্বর) সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা। ছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষাও। বিকালে আছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং পাঁচ ব্যাংকের সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষা। পাশাপাশি অনেক বেসরকারি অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খোলা রয়েছে।

সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে গাজীপুরের শিক্ষার্থী নওরিন তপাকে সকালে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রে আসতে হয় সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাড়া করে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস না পেয়ে নিতে হয় এমন সিদ্ধান্ত।   

চোখেমুখে ক্ষোভ নিয়ে তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘ধর্মঘটের কারণে অনেক টাকা খরচ করে আসতে হল। বাসে আসলে খরচ হতো মাত্র ৫০ টাকা। আর এখন অনেক টাকা ভাড়া দিয়েছি। সবাই তো ঢাকায় থাকে না, সবার আর্থিক অবস্থা এক না।’

এদিকে, বাস বন্ধ থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। তারা ১০০ টাকার ভাড়া ৫০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত চাইছেন। অথচ সড়কের এ নৈরাজ্যের বিষয়ে নির্বিকার সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তারা রবিবারের (৭ নভেম্বর) ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর জ্বালানি তেলের মূল্য ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে বাড়ানো হয় কেরোসিনের দাম। ডিজেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা ও তা কার্যকরের পর থেকেই পরিবহন খাতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করে। শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে চলছে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট। তবে পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিকরা আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।

Link copied!