জুলাই ২০, ২০২৩, ০২:৫৩ পিএম
চলচ্চিত্র: ইল মারে (IL MARE)
দেশ: কোরিয়া (২০০০)
ধরন: টাইম ট্রাভেলিং রোমান্টিক ফ্যান্টাসি মুভি
দৈর্ঘ্য: ১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট
পরিচালক: Lee Hyun-seung
রেটিং: 7.5/10 IMDb
89%Rotten Tomatoes
রিমেক: লেক হাউস (হলিউড-২০০৬)
মুভি দেখেছি এ জীবনে বহু। এখনো দেখি। অখ্যাত, বিখ্যাত নানা ধরনের এবং নানা দেশের মুভি দেখি। ব্যতিক্রমী কাহিনী বা নির্মাণের মুভি খুঁজে খুঁজে দেখি। দেশের ছবির বাইরে ইরান-তুরান, চীন-জাপান, হলিউড-বলিউড যা মন চায় দেখি। দেখতে দেখতে হলিউডের পর সবচেয়ে বেশি মুভি দেখা হয়েছে বোধ হয় কোরিয়ান মুভি। কোরিয়ান মুভি দেখার শুরুটা সম্ভবত ২০০৩ সালের দিকে, এই বিষয়ের প্রেক্ষাপট নিয়েও বড় একটি গল্প লেখা যাবে। সেটি আজ না হয় থাক। অন্য কোনোদিন বলা যাবে সেই গল্প।
প্রতিটি কোরিয়ান মুভিতে সব সময়ই একটা নতুনত্ব থাকে; সেটা হোক অ্যাকশন, রিভেঞ্জ, রোমান্টিক, ওয়ার বা থ্রিলার। মুভির গল্পও থাকে নতুন। এই ব্যাপারটি আমাকে খুব টানে। আজ এরকম একটি রোমান্টিক-ফ্যান্টাসি মুভির কথা লিখছি। কারণ, এই মুভিটি কোরিয়ান মুভিগুলোর মধ্যে আমার দেখা সেরা মুভিগুলোর একটি।
অনেকে ইতিমধ্যে হয়তো ভাবছেন, রোমান্টিক মুভি যেহেতু, অনেক রোমান্টিক সিনটিন থাকবে হয়তো মুভিতে। অবাক করা বিষয় হল, পুরো ছবিতে এক সেকেন্ডেরও রোমান্টিক সিন নেই! ফলে এটি যে একটি পারিবারিক মুভি, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। নতুনত্বের এটিও একটি দিক। নতুনত্বের অন্য দিকটি হলো, মুভির গল্পটির স্থান একই কিন্তু দুটি ভিন্ন সময়।
দুটো পৃথক সময়ে জীবন কাটানো নায়ক-নায়িকাকে মুভিতে এমন সমান্তরালভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, মাথা নষ্ট এক গল্প। ধরেন এখন ১৯৯৭ সাল। এর দুই বছর পরের সময়ে অর্থাৎ ভবিষ্যতের ১৯৯৯ সালে বাস করছেন নায়িকা। অথচ নায়কের সাথে তার দিব্যি যোগাযোগ স্থাপন হচ্ছে চিঠি চালাচালির মাধ্যমে এই বর্তমান মানে ৯৭ সালের সময়েই! আর সেই যোগাযোগটি আবার একটি রহস্যময় ডাকবাক্সের মাধ্যমে হচ্ছে। যে ডাকবাক্সটি কিনা একটি সমুদ্রতীরবর্তী একাকি দাঁড়িয়ে থাকা সৌখিন রোমান্টিক বাড়ির সামনে স্থাপন করা। ওই বাড়ির নাম ইল মারে। মুভির নামকরণটি করা হয়েছে ওই বাড়ির নামেই। (ইল মারে ইতালিয়ান শব্দ। যার অর্থ সাগর।)
ভবিষ্যতের একজন মানুষের সাথে কীভাবে এই বাস্তবিক বা বর্তমানের সশরীরে যোগাযোগ? অবিশ্বাস্য এই বিষয়টিই পরিচালক তার নিখুঁত নির্মাণ, সুন্দর লোকেশন, শ্রুতিমধুর আবহ সংগীতের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।
মুভির শুরুই হয় নায়িকার একটি চিঠি পোস্ট করা নিয়ে। যে চিঠিতে তিনি নায়ককে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘ম্যারি ক্রিস্টমাস অ্যান্ড হ্যাপি নিউইয়ার। আপনার আগে এই একাকি বাড়িতে আমিই ছিলাম! আমার কিছু চিঠি আসার কথা। এ রকম কোনো চিঠিপত্র এলে আমাকে ফরোয়ার্ড করবেন। বাধিত হবো। ২১ ডিসেম্বর ১৯৯৯।’
(১৯৯৭ সালে ডাকবাক্স খুলে নায়ক পেলেন এ চিঠি। পেয়ে তো তিনি তাজ্জব। একে তো এখন ৯৭ সাল, তারওপর ব্রান্ড নিউ এই বাড়িটিকে চিঠির মালিক দাবি করছেন তিনি এ বাড়িতে আগেই বসবাস করতেন!)
এরপর থেকে যতো চিঠি নায়িকা ওই ডাকবাক্সে দিয়ে গেছেন, সেগুলোতে প্রতিদিনকার ডায়েরি লেখা ছিল। ফলে এগুলোর ভবিষ্যদ্বানী সব ঠিকঠাক ফলে গেছে! যেমন একদিন চিঠিতে নায়িকা লিখলেন, ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি আজকের দিনটা থেকে কয়েকদিন ভীষন তুষার পড়ল। আপনি যদি সত্যি সত্যি ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারির সময়টায় এ মূহুর্তে থেকে থাকেন, চমৎকার তুষারপাতময় দিন কাটাবেন আশা করি। আর ভাল কথা, ঠাণ্ডা থেকে দূরে থাকবেন। কারণ, ফ্লু খুব ছড়িয়েছে এবার। আকাশ পরিষ্কার। নায়ক অপেক্ষায় আছেন, সত্যি সত্যি তুষারপাত হয় কিনা দেখার জন্য। আকাশের লক্ষণও সেরকম ছিল না যে তুষারপাত হবে। কিন্তু সবকিছু সত্য করে দিয়ে পরক্ষণেই আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। তুষারপাত শুরু হয়। এরকম ডায়েরি নিয়ে লেখা প্রতিটি চিঠির ঘটনাগুলো মিলে যায় হুবুহু যেহেতু নায়িকা ভবিষ্যতে বাস করছেন! এক পর্যায়ে নায়িকা একটা অনুরোধ করে চিঠি লেখেন, যার ভাষ্য: তার বাগদত্ত্বা দুই বছর আগে তাকে ছেড়ে গেছে। সে যেন তাকে ছেড়ে না যায়, সেই অনুরোধটি যেন তাকে করা হয় (যেহেতু ঘটনাটি দুই বছর পর আবারও ঘটতে যাচ্ছে। এই ঘটনার ওপর এখনো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।) ওই বাগদত্তা আমিরকায় গেছেন অ্যানিমেশনের ওপর পড়ালেখা করতে। গিয়ে সেখানে আরেক জনের সাথে সম্পর্কে জড়ায়। পরে সে দেশে এসে বিষয়টি খোলাখুলি নায়িকাকে জানায়ও।
ফলে নায়ক এবার সেই বাগদত্তাকে বুঝানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাকে কোথায় গেলে পাওয়া যাবে, সেটিও চিঠিতে লেখা ছিল। কিন্তু চিঠি ডাকবাক্সে ফেলে আসার পরক্ষণেই নায়িকার মনে পড়ে, সেদিন তার বাগদত্বা ঠিকই ফিরে এসেছিল আর তার সামনের রাস্তায় একটি দুর্ঘটনায় এক পথচারি নিহত হয়েছিল। সেই পথচারী আর কেউ নয়, মূল নায়ক যার সাথে তার চিঠি আদান প্রদান হচ্ছে।
তাই নায়িকা নায়ককে সেই জায়গায় যেতে নিষেধ করে আরেকটি সতর্কীকরন চিঠি লিখেন। এরপর তিনি তা পোস্ট করতে সেই ডাকবাক্সের দিকে ছুটতে থাকেন। চিঠিটি ডাকবাক্সে ফেলে কাঁদতে থাকেন তিনি। আর বলতে থাকেন, ওই দুর্ঘটনার আগেই যেন চিঠিটি পায় নায়ক। নাহলে যে কোনোও দিনই আর দেখা হবে না তাদের। শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটার আগে কি চিঠিটি পড়তে পারেন নায়ক?