হ্যারি পটারের লেখক জে কে রোলিং যে কারণে সফল

মুবিন আহমেদ

জানুয়ারি ২২, ২০২৪, ০৯:২৫ পিএম

হ্যারি পটারের লেখক জে কে রোলিং যে কারণে সফল

সংগৃহীত ছবি

ট্রেন লেট হলে আমরা কতো বিরক্ত হই, তাই না? অথচ এই ট্রেনের দেরী হওয়ার কারণেই কিন্তু বিখ্যাত হ্যারি পটার উপন্যাসের জন্ম। সময়টা ১৯৯০, ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডন যাবেন বলে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন হ্যারি পটারের লেখকা জে কে রোলিং। সে ট্রেন এসেছিল নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৪ ঘন্টা পর। এই চারঘন্টা বসে না থেকে এক জাদুকর বালক আর তার জাদুর স্কুলের উপন্যাসের প্লট ভেবে ফেলেছিলেন রোলিং। আর তাঁর সে ভাবনা কোথায় লিখে রেখেছিলেন জানেন? একটি ন্যাপকিনে! হ্যারি পটারের প্রথম বই লেখা শেষ হয়েছিল ১৯৯৫ সালে কিন্তু কোনো প্রকাশকই শুরুতে বইটি ছাপাতে রাজি হন নি। ১২ টি প্রকাশনা সংস্থা ফিরিয়ে দেয়ার পর অবশেষে ব্লমস বারি বইটি ছাপতে রাজি হয়।

১২ জন প্রকাশক জে কে রোলিংকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর পাণ্ডুলিপি হাতে প্রকাশকদের দ্বারে দ্বারে ঘোরার সময়টাতেই   নিজেকে আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে রোলিং বলেন, ব্যর্থতা মানুষের জীবন থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ছেঁটে ফেলে দেয়। হ্যারি পটারের স্রষ্টা বিশ্বাস করেন, ভাবনাটা শুধু মাথার ভেতর লালন করলেই সফল হওয়া যাবে না। সেটা কার্যকর করতে হবে।

জে কে রোলিংয়ের মাথায় যখন হ্যারি পটারের ভাবনা প্রথম এল, তিনি তখন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ভাবনাটা তাঁকে এতই রোমাঞ্চিত করেছিল যে দেরি না করে তিনি ঝটপট সেটা টুকে রেখেছিলেন। পরের ৫ বছর ধরে তিনি হ্যারি পটারের প্রতিটি বইয়ের ভাবনা সাজিয়েছেন এবং সেগুলোকে উপন্যাসে রূপ দিয়েছেন।

রোলিং বিশ্বাস করতেন আত্মবিশ্বাসই সব

‘এটা অনেক বড়!’—এই অভিযোগে প্রকাশকেরা বারবার ফিরিয়ে দিয়েছেন হ্যারি পটারের পাণ্ডুলিপি। কিন্তু রোলিং তাঁর বিশ্বাসে অনড় ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘পৃথিবী বদলে দেওয়ার শক্তি আমাদের ভেতরে আছে, সে জন্য জাদু জানার প্রয়োজন নেই। একটা আরও সুন্দর পৃথিবী আমরা কল্পনা করতে পারি।’

অর্জনই সফলতা নয়

‘একের পর এক অর্জনই জীবনের সব নয়, এটা যখন বুঝবেন, তখনই আপনি ব্যক্তিজীবনে সুখী হতে পারবেন। আপনার জীবন, আপনার যোগ্যতার প্রতিফলন নয়।’

রোলিং মনে করেন, জীবনটা হলো একটা গল্পের মতো। ‘গল্পটা কত বড়, তাতে কিছু যায় আসে না। বরং গল্পটা কতখানি ভালো, দিন শেষে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’

‘অদেখাকে দেখার একটা অনন্য সুযোগ করে দেয় কল্পনাশক্তি। এই শক্তির জোরেই নতুন নতুন আবিষ্কার হয়, উদ্ভাবন হয়,’ বলেছেন জে কে রোলিং। বিভিন্ন বক্তৃতায়, লেখায় তিনি সব সময় কল্পনাশক্তির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, অসম্ভব কোনো কিছুকে অর্জন করতে হলে আগে কল্পনাপ্রবণ হতে হয়। বড় স্বপ্ন দেখার সাহস করতে হয়।

আপনার জীবনের দায়িত্ব কেবল আপনারই

ছেলেবেলায় আমরা পুরোপুরি মা-বাবার ওপর নির্ভরশীল থাকি। বড় হওয়ার পথেও আমরা তাঁদের পরামর্শ, উপদেশ প্রত্যাশা করি। কিন্তু তাই বলে জীবনের ব্যর্থতার দায় মা-বাবা কিংবা অন্য কারও ওপর চাপানোর সুযোগ নেই। নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে শিখলেই আপনার মধ্যে জয়ী হওয়ার ক্ষুধা তৈরি হবে। জে কে রোলিং মনে করেন, ‘আমার জীবনের ব্যর্থতার জন্য দায়ী আমার মা-বাবা—এই অভিযোগ একদিন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে। যখন থেকে আপনি নিজেই আপনার জীবনের চালকের আসনে বসবেন, তখন দেখে সব দায়িত্ব আপনার।’

রোলিং তাঁর জীবনে এই সূত্রগুলো ব্যাবহার করতেন বিধায় জীবনের গতিপথই তাঁকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে।

Link copied!