“আমার ছেলে জেএমবির সদস্য ছিল। পরবর্তীতে সে অন্য সংগঠনে যোগদান করে। তবে কয়েকদফা গ্রেপ্তার হবার পর জামিন নিয়ে এখন লন্ডন চলে গেছে। আমাদের যোগাযোগ হয়না বললেই চলে।”
রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ বাসায় জঙ্গি হিসেবে আটক সামিউন রহমানের বাবা এ কথা বলেন। শুধু সামিউন নয়, দেশে প্রায় ৫০০ জঙ্গি বর্তমানে জামিনে রয়েছে কিন্তু জনবলের অভাবে নেতৃত্ব পর্যায় ব্যতীত অন্যদের নজরদারির আওতায় আনা যাচ্ছে না।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, জঙ্গিবাদের ঘটনায় সাধারণত সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়। সারা দেশে এ পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইনে প্রায় ২১০০ মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫ হাজার ৫ শতাধিক। এসব আসামি তথা জঙ্গি সদস্যদের মধ্যে দুই হাজারের বেশি জঙ্গি জামিনে রয়েছে। পলাতক রয়েছে তিন শতাধিক জঙ্গি।
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত বিশেষায়িত ইউনিট অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালে চালু হওয়ার পর থেকে তারা জঙ্গিদের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরির চেষ্টা করছেন। ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তারা জঙ্গিবাদ তথা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা পেয়েছেন ২ হাজার ১০০টি। এসব মামলায় ৯ হাজার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ৫৫০ জন জঙ্গি জামিন পেয়েছে।
তারা নিয়মিত জামিন পাওয়া জঙ্গি সদস্যদের মনিটরিং করেন। তবে জনবল স্বল্পতার কারণে কার্যকরীভাবে মনিটর করা যাচ্ছে না। তারা জামিন পাওয়া জঙ্গি সদস্যদের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতি মাসে অন্তত দুই বার মোবাইলের মাধ্যমে সরাসরি জঙ্গি সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, অথবা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এছাড়া তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গেও যোগাযোগ করে জামিন পাওয়া জঙ্গি সদস্যের খোঁজ করেন। এক্ষেত্রে থানা পুলিশের বিভিন্ন বিটের দায়িত্বে থাকা সদস্যদের সহায়তা নিয়ে থাকেন।
অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের গোয়েন্দা সেলের বিশেষ পুলিশ সুপার হাসানুল জাহিদ বলেন, “আমরা জামিনে থাকা জঙ্গিদের নিয়মিত মনিটরিং করে থাকি। একই সঙ্গে তাদের ডি-র্যাডিক্যালাইজেশনের কাজ করছি। জামিনে বের হয়ে এসে যাতে নতুন করে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে না পারে বা সংগঠিত হতে না পারে, তা নজরদারি করা হচ্ছে।”
তবে জঙ্গিবাদ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন এমন বিশ্লেষকরা বলছেন, জামিনে থাকা জঙ্গিদের নিয়মিত নজরদারির কথা বলা হলেও তা আসলে অপ্রতুল। তা না-হলে আমরা মাঝে মধ্যেই দেখতে পাচ্ছি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেই এমন জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার হচ্ছে, যারা আগেও গ্রেফতার হয়ে জেলখানায় ছিল। জামিনে বের হয়ে এসে আবারও জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তাও বলছেন, জামিনে থাকা জঙ্গিদের শতভাগ নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে যারা একটু নেতা টাইপের, তাদেরকে নজরদারি করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ছোট-খাটো বা সদস্য পর্যায়ের ব্যক্তিদের নজরদারি করা যায় না। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত বিশেষায়িত ইউনিটগুলোর এত জনবল নেই।
রাজধানীর বাইরে নজরদারি কম
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট জঙ্গিবাদ দমনে সফল হলেও তাদের অধিক্ষেত্র হলো রাজধানী ঢাকার মধ্যে। ঢাকার বাইরে অপারেশন করতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ বা পুলিশ সদর দফতরের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর সারা দেশের জঙ্গিবাদ দমনে ২০১৮ সালে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট গঠন করা হলেও এখনও জনবল সংকটের কারণে তারা প্রত্যেক জেলায় জেলায় কার্যক্রম চালাতে পারছে না। ঢাকা থেকে টিম পাঠিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।