‘নাগরিক সমাজ শক্ত না হলে দেশে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে না’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ০১:৪৮ এএম

‘নাগরিক সমাজ শক্ত না হলে দেশে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে না’

সংগৃহীত ছবি

নাগরিক সমাজ শক্ত না হলে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে না। তাঁদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে শাসকগোষ্ঠী। আর তাই কয় দিন পরপর জনগণই প্রশ্ন করবে ‘বিকল কে? বিকল্প দেখান।’ সুতরাং গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে নাগরিক সমাজ সংস্কার অত্যাবশ্যকীয়।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর লালমাটিয়ায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্টের অফিসে আয়োজিত "নাগরিক সমাজ সংস্কার" শীর্ষক এক আলোচনা সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা এই মন্তব্য করেন। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজের কাজ হল সাধারণ নাগরিকের অধিকারের বিষয় নিয়ে সরকারের সাথে মধ্যস্ততা করা। অথচ আমরা পূর্বে দেখেছি নাগরিক সমাজ হয় কোন দলের অথবা কোন সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছে। বাংলাদেশে সুগঠিত নাগরিক সমাজ নেই। সুতরাং রাষ্ট্রের সংস্কার শুরু করতে হবে, নাগরিক সমাজের সংস্কার করার মাধ্যমে। 

ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সেখানে তাঁর থিসিসের বিষয়বস্তু ছিল ঢাকা শহরের হিজরা সম্প্রদায়ের ওপর। তিনি নিউইয়র্কের দ্য নিউ স্কুলের "সেক্স টেক ল্যাব"-এর সদস্য। এক যুগেরও বেশি গবেষণা অভিজ্ঞতার সাথে, লিঙ্গ, হিজরা জনগোষ্ঠী এবং কুইয়ার স্টাডিজ, অসমতা, শরীর এবং যৌনতা, এবং মেডিকেল অ্যানথ্রোপোলজি বিষয়ে তাঁর আগ্রহ রয়েছে। 

শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রভাষক ড. খান শরীফুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ এখনও স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে বিকশিত হতে পারেনি। কারণ আমাদের উপনিবেশিক আমলের পর থেকে আমাদের যে আইন ও পরিচালনা ব্যবস্থা সব কিছুই উপনিবেশিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর দ্বারা আরোপিত। তাই শুধু চালক পরিবর্তন নয়, পুরো ইঞ্জিন ও বা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। নতুবা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।  

‘পদ্মা সেতু প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের সুষম পুনর্বাসন হয়নি’: বিআইএসআর 


পদ্মা সেতু প্রকল্পের কারণে মানুষের যাতায়াত সহজ হলেও সংলগ্ন এলাকার বসবাসকারী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সুষম পুনর্বাসন হয়নি। এক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেছেন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. খুরশিদ আলম।  

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. খুরশিদ আরও বলেন, যদি নাগরিক সমাজ তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে রাষ্ট্রকে পরামর্শ দিত, তবে এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হত। এখানে রাষ্টের সাধারণ নাগরিক বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে। 

এছাড়াও ওই এলাকার নারীরা সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছে ও এখনও হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিআইএসআর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. খুরশিদ বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় তৎসংশ্লিষ্ট এলাকায় জমির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। এর ফলে একটি পরিবারের ছেলে সন্তানেরা অর্থাৎ ভাইয়েরা ব্যাপকভাবে তাদের বোনদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। যাতে ছেলেরা নিজেরা বেশি সুবিধা পেতে পারে। 
গবেষণার কাজে সংস্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে তিনি এই বৈষম্যমূলক বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন বলে দাবি করেন।

শহীদের মর্যাদার ক্ষেত্রেও পূর্বের পরিচিতি বিবেচ্য? 

ড. খুরশিদ বলেন, বর্তমানে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে মর্যাদাপূর্ণ শহীদ বলে তাঁদেরই নাম মুখে মুখে, যাদের কিনা পূর্বের সামাজিক পরিচিতি তৈরি হয়েছিল। অথচ, যে মুদি দোকানদার, গরীব খেঁটে খাওয়া মানুষরা মারা গেছে তাঁরা গুরুত্বের তালিকায় পিছিয়ে আছে। একটি দায়িত্বশীল নাগরিক সমাজের কর্তব্য এটি যেন বৈষম্যহীনভাবে প্রত্যেকটি শহীদকে দেখা হয় সেই বোধ সাধারণ মানুষের মাঝে জাগ্রত করা। জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার দায়িত্ব নাগরিক সমাজ অর্থাৎ সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের নিতে হবে। এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার দরকার।

এছাড়াও আইনগত বৈষম্য আইন দিয়ে পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু সামাজিক বৈষম্য কিভাবে পরিবর্তন করবেন? এক্ষেত্রে সামাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে গবেষণা চালিয়ে পরবর্তীতে ফলাফল অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও অভিমত দেন তিনি।

ঝাড়ুদার, মেথর, শ্রমিক, মালিক, হিন্দু, মুসলিম সহ সব ধর্ম ও শ্রেণী পেশার মানুষের সমন্বয়ে ‘ওয়ান বাংলাদেশ’ বা একটি অভিন্ন বাংলাদেশের দাবী কেন এখনও ওঠে নি, সে বিষয়ে ড. খুরশিদ বিষ্ময় প্রকাশ করেন। বৈষম্য বিরোধী রাষ্ট্র গড়তে এর বিকল্প নেই বলেও তিনি জানান। 

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিআইএসআর ট্রাস্টের গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্ট একটি বেসরকারি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংস্থা এবং দেশের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। সামাজিক ন্যায়বিচার, উন্নয়ন, এবং মানবাধিকারসহ বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের ওপর গবেষণা, প্রচার ও সহায়তায় আমাদের ফোকাস। বিআইএসআর ট্রাস্ট সামাজিক পরিবর্তন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনের মান উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে। আমাদের কাজ গবেষণা পরিচালনা, শিক্ষামূলক সহায়তা প্রদান, এবং নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অ্যাডভোকেসি করা।

Link copied!