ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর আওতায় যৌথ অভিযানে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ০৪ সন্ত্রাসী আটক করেছে নৌবাহিনী।
নৌবাহিনীর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় অভিযান চলাকালে গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানা যায় হাতিয়া থানাধীন ৬নং চরকিং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের কলেজ রোডের হাজী আবুল বাশার মার্কেট এর বিপরীতে কাওসার মিয়ার ব্রিকফিল্ড এলাকায় বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী অবস্থান করছে। পরবর্তীতে নৌবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর একটি দল তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে সেখানে অবস্থানকারী সন্ত্রাসীরা বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থল হতে মোঃ নবির উদ্দিন, মোঃ ইমাম হোসেন ও মোঃ ফখরুল ইসলাম টিপুকে আটক করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে ০১টি বিদেশি পিস্তল (ম্যাগাজিন ও ০১ রাউন্ড গুলিসহ), ০৩টি একনলা দেশীয় বন্দুক, ০৮টি কার্তুজ, ২০টি ককটেল, ০২টি ডেগার, ০৩টি ক্রিজ ও ০১টি তলোয়ার উদ্ধার করা হয়। যৌথ এ অভিযানে নৌবাহিনীর সাথে কোস্ট গার্ড ও পুলিশ অংশগ্রহণ করেন।
অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপে পরিচালিত অভিযানে হুমায়ুন কবির ওরফে বাবুল নামক এক সন্ত্রাসীকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। আটককৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিজ নিজ এলাকায় হত্যা, ডাকাতি, মাদক ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমান সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় অপারেশন ডেভিল হান্টের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দায়িত্বপূর্ণ এলাকাসমূহে নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযান চলমান থাকবে।
এদিকে মৎস্য সম্পদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় বিশেষ কম্বিং অপারেশ পরিচালনায় গত ১২ জানুয়ারি হতে নিয়োজিত রয়েছে। দেশের মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে উপকূলীয় জলাশয় ও নদী অববাহিকায় ১০ মিটারের কম গভীরতায় মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারী সকল অবৈধ জাল অপসারণে ৪টি ধাপে এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
এ অভিযানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে সরকার কর্তৃক জারিকৃত ‘বিশেষ কম্বিং অপারেশন’ আগমী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলমান থাকবে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, খুলনা, মোংলা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, শরীয়তপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ভোলায় নৌবাহিনীর ১১টি জাহাজ ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বোটের মাধ্যমে ‘বিশেষ কম্বিং অপারেশন’ পরিচালনা করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর দায়িত্বপূর্ণ এলাকাসমূহে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ বেহুন্দি জাল, কারেন্ট জাল, মশারী জাল, চটজাল ও টংজাল উদ্ধার করে ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি এসকল অবৈধ জাল ব্যবহার বন্ধে তৎসংলগ্ন এলাকাসমূহে জনসচেতনতা মূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ০৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশেষ কম্বিং অপারেশনের তৃতীয় ধাপ শুরু হয়। আজ মঙ্গলবারও চট্টগ্রামের বহিঃনোঙ্গর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নৌবাহিনী জাহাজ ও বোটের মাধ্যমে ‘বিশেষ কম্বিং অপারেশন’ পরিচালনা করা হয়।
এ সময়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল উদ্ধার এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়। অভিযানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিশেষ টিম, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করছেন।
গতকাল ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ০৬টি দোকান হতে অবৈধ ৩০ লক্ষ ৬ শত ৫০ মিটার চড়ঘেরা জাল, ৬ লক্ষ ১১ হাজার ৫০০ মিটার কারেন্ট জাল, ৩ হাজার ৪ শত মিটার বেহুন্দি জাল ও ২১ লক্ষ ৬০ হাজার মিটার পাইজাল জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক বাজার মূল্য টাকা ২ কোটি ৯ লক্ষ ৩২ হাজার মাত্র।
এছাড়াও অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬ শত ৫০ মিটার জাল, ০৯টি বেহুন্দি জাল ও অবৈধ মাছ উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৭ শত টাকা।
তৃতীয় ধাপে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ২১ কোটি ৬২ লক্ষ ৬ হাজার ৭ শত টাকা মূল্যের অবৈধ জাল ও মাছ জব্দ করা হয়। উক্ত অভিযানে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৭৬ কোটি ৩২ লক্ষ ৫ হাজার ১ শত টাকা মূল্যের অবৈধ জাল ও মাছ জব্দ করা হয়।
অভিযানে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বৈধ মৎস্য আহরণ নিশ্চিত করতে জেলেদের সচেতন হওয়ার আহবান জানানো হচ্ছে। অবৈধ উপায়ে মৎস্য আহরণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।