নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’ পালনের অংশ হিসেবে শিক্ষকরা শাহবাগে অবস্থান নিতে গেলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। এ ঘটনায় অন্তত ১২০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫। ছবি: মো. সামসুল আলম হাদী/ইউএনবি
তিন দফা দাবিতে কর্মসূচি চলাকালে ‘পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
রবিবার (৯ নভেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আজ (শনিবার) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শাহবাগের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রাথমিক শিক্ষকরা এ পদযাত্রায় যোগ দেন। তবে পুলিশ বাধায় পণ্ড হয়ে যায় তাদের পদযাত্রা।
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’ পালনের অংশ হিসেবে শিক্ষকরা শাহবাগে অবস্থান নিতে গেলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। এতে তাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং শিক্ষকরা বিভিন্ন দিকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন।
আন্দোলনরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর এ সময় লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে অন্তত ১২০ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন শিক্ষক নেতারা। আহতদের অনেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১২০ জন শিক্ষক আহত অবস্থায় হাসপাতালে এসেছেন। অনেকে চিকিৎসা শেষে চলে গেছেন, কেউ কেউ এখনো জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন।’
অন্যদিকে, মুগকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাকিব হোসেন বলেন, ‘কোনো উসকানি ছাড়াই পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে রোববার থেকে দেশের সব শিক্ষক কর্মবিরতি পালন করবেন।’
এর আগে, এ দিন সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। সেখান থেকে পদযাত্রার মাধ্যমে কলম বিসজর্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানান তারা।
শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো— সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড দেওয়া, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড দেওয়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি এবং শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন একাদশ থেকে দশম এবং ত্রয়োদশ থেকে দ্বাদশ গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সহকারী শিক্ষকরা।
অন্যদিকে, সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দাবি আদায়ের সময়সীমা দিয়েছে। দাবি পূরণ না হলে তারা ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
এ ছাড়া ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে অগ্রগতি না হলে পরীক্ষা বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।