মার্চ ২২, ২০২১, ০৯:৫৫ পিএম
বঙ্গবন্ধুর অবিরাম সংগ্রামের ফলে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এর জন্য অদম্য নেতৃত্ব এবং নিরবচ্ছিন্ন উদ্যোগ দেখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী। তিনি বলেন, ‘তরুণ বয়স থেকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনন্য সাধারণ নেতা, চমৎকার সংগঠক, ব্যক্তিত্বে দৃঢ় সংকল্প এবং লড়াকু যোদ্ধা।’
সোমবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে ‘নেপাল-বাংলাদেশ সম্পর্ক: বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী’ শীর্ষক বক্তব্য রাখার সময় তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন নেপালের এ রাষ্ট্রপধান।
নেপালের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অবিরাম সংগ্রাম ও অবিচল নেতৃত্বের ফলে তাকে ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিল সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, যা গোটা জাতি তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নিয়েছিল।
‘বাংলা ভাষার জন্য গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ছিল বঙ্গবন্ধুর। এ কারণে জনগণকে নিয়ে বাংলা ভাষাকে রক্ষা ও প্রসারে অগ্রগামী ভূমিকায় ছিলেন তিনি। নিপীড়িত, বঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষের জন্য গভীর তার সহমর্মিতা ছিলো।’
নেপালি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘অনলবর্ষী বক্তা, সংগঠক ও যোদ্ধা হিসাবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন এবং অর্জন করেছিলেন নতুন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য। এ অঞ্চলের মানুষের কাছেও তিনি পূজনীয় নেতা।’
নেপালের প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে নিবিড় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটেছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিকসহ অন্যান্য নৈকট্যের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি জন্মলগ্নের সম্পর্কের কথাও বলেন নেপালের প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান।
নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী এর আগে বাংলাদেশে ব্যক্তিগত সফরের কথা স্মরণ করেন। ওই সফরের সঙ্গে এবারের পার্থক্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এবারের সফরে আমি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বড় একটি জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র সীমা থেকে বের করতে সফল হয়েছে। এই ধারা এখনও চলছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের ক্রমাগত অগ্রগতিই জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন।’
বাংলাদেশকে ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও জনগণের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখে আমি আনন্দিত। দুই দেশের মধ্যে নিবিড়, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত আছে অনেক দিন ধরেই। ভৌগোলিকভাবে দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব কম।’
‘ভৌগোলিক নৈকট্য, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত সাদৃশ্য, পারস্পরিক সমর্থন ও শুভেচ্ছা এই সম্পর্ককে জোরালো করেছে। ১৯৭১ সএলর ৮ এপ্রিল দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে সম্পর্ক জোরালো হওয়া অব্যাহত আছে।’
বঙ্গবন্ধুর ’সোনার বাংলা’র স্বপ্নের সঙ্গে নেপালের ‘সমৃদ্ধ নেপাল, সুখী নেপালি’ সংকল্পের মিল থাকার কথাও জানান প্রেসিডেন্ট ভাণ্ডারী। তিনি বলেন, ‘নেপালকে সমৃদ্ধ দেশ করার জন্য আমাদের সব কার্যক্রম। আমি বিশ্বাস করি, উন্নয়নের মাধ্যমে নেপাল ও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখবে।’
আকাশ, স্থল ও রেলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের যোগাযোগ বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট।