জুলাই ২, ২০২৪, ০৯:১৩ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমবারের মতো জানিয়েছে নিট রিজার্ভের তথ্য। গত ৩০ জুন পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রার নিট সঞ্চিতি উন্নীত হয়েছে ১৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের চুক্তি বাস্তবায়নে জুন পর্যন্ত নিট রিজার্ভ অন্তত ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার রাখার শর্ত ছিল। সেই শর্ত পূরণে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক। তিনি বলেন, “৩০ জুন পর্যন্ত নিট রিজার্ভ ১৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। আর গ্রস রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার।”
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুসারে নিট রিজার্ভ গণনা করা হয়। গ্রস বা মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ জানা যায়।
নিট রিজার্ভের তথ্য এর আগে কখনোই প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনের পর গত বছর ২০২৩ সালের জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বহুপাক্ষিক ঋণদাতা সংস্থাটি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজ অনুমোদনের পর প্রথমবারের মতো আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা পার করেছে বাংলাদেশ।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “পলিসি রেট বা রেপো সুদহার বাড়ায় অর্থনীতিতে এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কারণ গত কয়েক মাস ধরে রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়ছে। জুনেও কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে। তবে আমদানি ব্যয় সংকোচন করে রিজার্ভ ধরে রাখলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তাই আমদানি ব্যয় সংকোচন করা ঠিক হবে না। এতে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় যাতে কষ্ট না হয়, সেদিকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নজর দিতে হবে।”
চুক্তির আওতায় গত ২৭ জুন আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার হাতে পায় বাংলাদেশ। তার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া, আইবিআরডি (ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ও আইডিবি (ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) থেকে মোট ৯০০ মিলিয়ন ডলার ছাড় হয়েছে।
সব মিলিয়ে ২ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছে রিজার্ভে। তাতে বাংলাদেশের রিজার্ভ গ্রস হিসাবে সাড়ে ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের গ্রস রিজার্ভ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। কিন্তু মহামারির সংকট এবং তারপর ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ডলার সংকট দেখা দেয়। তাতে রিজার্ভে চাপ পড়ে ও সরকারকে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে আইএমএফের কাছে ঋণ চাইতে হয়। সেই ঋণের শর্ত হিসেবে বেশ কিছু আর্থিক ও নীতি সংস্কারে মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে যেতে হচ্ছে।
এগুলোর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারমুখী করা, ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়া, ব্যাংক ঋণের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রিজার্ভের নিট হিসাব আইএমএফ স্বীকৃত পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী প্রকাশ, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের মত বিষয় রয়েছে।