মে ১৫, ২০২৫, ০৫:২৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশের যে সদিচ্ছা আছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সেই বার্তা দিতেই ডলারের দাম ‘বাজারভিত্তিক’ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে ডলারের দাম বেশি বেড়ে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে।
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে রাজধানীর বনানীতে ‘সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে মাসিক বিশ্লেষণ’ (এমএমআই) শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি বিশ্লেষণে এখন থেকে প্রতি মাসে এমএমআই আয়োজন করবে পিআরআই। আজ এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার।
ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিনিময় হার “বাজারভিত্তিক” করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নানাভাবে সহায়ক হবে। সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশের যে সদিচ্ছা আছে, সংস্কারের যে তাগিদ আমরা অনুভব করছি, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বার্তা যাবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির বহিস্থ খাত যে ভালো আছে, তা–ও বোঝা যাবে।’
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার পর গতকাল বুধবার টাকার বিনিময় হার কিছুটা ওঠানামা করলেও সেভাবে অবমূল্যায়ন হয়নি। অর্থাৎ অবমূল্যায়নের চাপ দেখা যায়নি। আরও দু–এক দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। তখন বোঝা যাবে, কী হতে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সুন্দর ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। ফলে টাকার বিনিময় হারের অনাকাঙ্ক্ষিত অবমূল্যায়ন বা চাপ আসবে বলে তিনি মনে করেন না।
তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার পর্যবেক্ষণ করবে জানিয়েছেন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি মনে করে, কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে টাকার বেশি অবমূল্যায়ন হয়েছে, তাহলে হস্তক্ষেপ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সেই হাতিয়ার আছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের জন্য খুব বেশি সংস্কার প্রয়োজন হয় না। জাপানের অর্থনীতি মাত্র ১৫ বছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এভাবে এশিয়া অঞ্চলের অনেক দেশের অর্থনীতি ১০–১৫ বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং সঠিক নীতি গ্রহণ করতে হবে এবং সেগুলো বাস্তবায়নে সমন্বয় থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক খুরশীদ আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাইদি সাত্তার ও পিআরআইয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান। জাইদি সাত্তার বৈদেশিক খাত ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পটভূমি নিয়ে আলোচনা করেন।
মূল প্রবন্ধে আশিকুর রহমান বলেন, অর্থনীতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে; কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এই ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে এই পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু দুর্বলতা আছে। এই দুর্বলতার উৎস মূলত অর্থ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। এই দুর্বলতা দূর করতে কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা পৃথক করা এবং বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা সংস্কারের বড় দুটি উদ্যোগ।
আশিকুর রহমানের আশা, ‘এসব সংস্কার মধ্য মেয়াদে ইতিবাচক ফল বয়ে আনলে আমরা যে নিম্ন কর–জিডিপি অনুপাতের সমস্যায় আছি, তা কাটিয়ে উঠতে পারব এবং অর্থনীতি আরও ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনের উপপ্রধান ক্লিনটন পবকে ও দ্বিতীয় সচিব জোশুয়া গ্যাসুটান।