জানুয়ারি ১১, ২০২৫, ০২:১৩ এএম
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক), সম্পূরক শুল্ক এবং অন্যান্য কর বৃদ্ধি করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে দুটি অধ্যাদেশ জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই কর বৃদ্ধি কার্যকর করে। এতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মুঠোফোন ও ইন্টারনেট সেবায় খরচ বাড়লো
সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মুঠোফোনে কথা বলার খরচ আগের চেয়ে বেড়ে যাবে। পাশাপাশি, ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচও বাড়বে। কারণ, মুঠোফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহার করে সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত জুনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছিল। এর ফলে মোবাইল অপারেটরগুলো তাদের সেবার দাম বাড়ায়, যার প্রভাব সরাসরি মুঠোফোন গ্রাহকদের ওপর পড়ে। এখন নতুন করে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে এই খরচ আরও বাড়তে চলেছে।
তৈরি পোশাকের দামে ভ্যাটের চাপ
ব্র্যান্ডের দোকান বা বিপণিবিতান থেকে তৈরি পোশাক কিনতে হলে এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ ভ্যাট দিতে হবে। পোশাকের আউটলেটের বিলের ওপর ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে পোশাকের দাম বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এই ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে ব্যবসা কমে যেতে পারে। নতুন এই ভ্যাট হার ব্র্যান্ডেড এবং ব্র্যান্ডবিহীন উভয় ধরনের পোশাকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে এমনিতেই পোশাক ব্যবসায় মন্দা চলছে। এর মধ্যে রোজার ঈদের আগে ভ্যাট বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত ব্যবসার গতি আরও শ্লথ করে দেবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন মিষ্টি, বিস্কুট, ফল, ফলের রস, সবজির রস, টমেটো সস, এবং গৃহস্থালীর পণ্য যেমন কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু, সাবান ও ডিটারজেন্টের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এছাড়া রেস্তোরাঁ এবং নন-এসি হোটেলের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। রেস্তোরাঁয় মদ সরবরাহের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, সিগারেটের চার স্তরে মূল্য ও কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। নিম্ন স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার দাম ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা করা হয়েছে, এবং সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। উচ্চ স্তরেও শুল্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি দাম বেড়েছে।
আকাশপথেও নেই স্বস্তি
আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আকাশপথে ভ্রমণের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানযাত্রায় শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার টাকা হয়েছে। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশ ছাড়া এশিয়ার অন্যান্য দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে শুল্ক ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইউরোপ এবং আমেরিকা ভ্রমণের ক্ষেত্রে শুল্ক আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে পূর্বে এই শুল্ক ছিল ৩ হাজার টাকা, তা এখন ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, বিমান টিকিটের দামের সঙ্গে এই শুল্ক যাত্রীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে।
ব্যবসায়ীদের জন্যও দুশ্চিন্তা
বর্তমানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক লেনদেন হলে টার্নওভার কর দিতে হতো। এখন বার্ষিক লেনদেন ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা হলেই টার্নওভার বা লেনদেন কর দিতে হবে।
গত ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। পরে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। জাতীয় সংসদ না থাকার কারণে সরকার এই সিদ্ধান্ত অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর করেছে।