অক্টোবর ১, ২০২৫, ০৫:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
মেধাতালিকায় হলে সিট বরাদ্দ না পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন আবাসিক হলে প্রশাসনের বিশেষ বিবেচনায় থাকছেন ছাত্রদল-শিবির-বাগছাস ও অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আসন্ন চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীও হয়েছেন তাদের অনেকে। সম্প্রতি এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি হলেই বিশেষ বিবেচনায় কিছু শিক্ষার্থীকে সিট দেওয়ার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় না দেখে তার বাড়ির দুরত্ব ও আর্থিক অক্ষমতার দিকটিকে প্রাধান্য দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো করেই ‘বিশেষ বিবেচনায়’ আবাসিক হলে আসন পেয়েছেন তারা।
সোহরাওয়ার্দী হলের আসন বন্টনে মেধাতালিকায় না থাকার পরেও বিশেষ বিবেচনায় হলে থাকছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের চবির হল সভাপতি ও ভিপি প্রার্থী আবরার ফারাবি, ছাত্রদল সমর্থিত হল সংসদে ভিপি প্রার্থী জমাদিউল আওয়াল সুজাত, কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি প্রার্থী বাগছাস নেতা মাহফুজুর রহমান, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক মো. জাবেদ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলেই রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংঠনগুলোর নেতাসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা আর্থিক বা অন্যান্য সমস্যায় বিশেষ বিবেচনায় হলে থাকছেন।
জানতে চাইলে আবরার ফারাবি বলেন, আমি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হলে এক সিনিয়র ভাইয়ের সিটে উঠি। তিনি হলে থাকতেন না, তাই তার সিটে থেকেছি। পরবর্তীতে, গত মাসে সর্বশেষ এলটমেন্টে ছাত্রত্ব না থাকায় ওই ভাইয়ের সিট বাতিল হয়। এ হিসেবে আমারও সিটে থাকা অবৈধ হয়ে পড়ে। পরে আমি হলের প্রভোস্ট স্যারকে আমার আর্থিক অক্ষমতা এবং হলে আমার বিভিন্ন এক্টিভিটির কথা জানালে তিনি আমাকে বিশেষ বিবেচনায় থাকার সুযোগ দেন।
তিনি আরও বলেন, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে আমার মাস্টার্সের পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। মূলত এ সময়টা হলে থাকার জন্য আবেদন করেছিলাম। হল প্রভোস্ট আমাকে অনুমতিও দিয়েছেন। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়, বরং একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিসেবে আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমি তো অবৈধভাবে হলে থাকছি না।
একই হলে বিশেষ বিবেচনায় থাকা বাগছাসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক ও চাকসুতে স্বতন্ত্র থেকে ভিপি প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রতিটা হলে সিট বরাদ্দের সময় প্রভোস্টের হাতে ১০টি সিট থাকে। আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে যখন হলে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়, তখন প্রশাসন নিয়ম করেছিলো আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিলো, আহত হয়েছে এবং আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বিবেচনার কয়েকটা সিট বরাদ্দ থাকবে। সিট বরাদ্দের সময় আন্দোলনে আহত আমার বিভাগের ছোট ভাই মশিউর না থাকায় আমি আমার নামে সিট নিয়েছিলাম। এখন সিটে সে থাকে, আমি শহরে থাকি। তবে নির্বাচন কেন্দ্রীক ব্যস্ততার কারণে কিছুদিন ধরে আমি ওই সিটে থাকছি।
সোহরাওয়ার্দী হলে বিশেষ বিবেচনায় থাকা হল সংসদে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী জমাদিউল আওয়াল সুজাত বলেন, আমি একটি সিটে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ডাবলিং করছি। তবে জানা গেছে, ওই সিটে বিশেষ বিবেচনায় শুধু তিনিই থাকেন। অন্যজন অভ্যুত্থানের পর প্রথম অ্যালটমেন্ট পেয়েছিলেন। তবে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা এবং দুষ্কৃতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে হল থেকে বের করে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে ওই সিটে বিশেষ বিবেচনায় থাকছেন সুজাত। এদিকে পূর্বে তিনি ছাত্রলীগের সিএফসি গ্রুপের রাজনীতি করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্রদলের আরেক নেতা ও কেন্দ্রীয় সংসদে পাঠাগার সম্পাদক মো. জাবেদ বলেন, আমার মার্কসীটে সিজিপিএ একটু সমস্যা হয়েছিল। পরে আমি মার্কসীট ঠিক করে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. কামাল স্যারের অনুমতি নিয়ে ডাবলার হয়ে হলে উঠেছি। আমি যে সিনিয়রের সাথে ডাবলার ছিলাম, উনি চলে যাওয়ায় আমি এখন একা থাকি। তবে তিনি কোন সিনিয়রের সাথে ডাবলার ছিলেন তার নাম-সেশন কিছুই বলতে পারেননি।
এ বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান বলেন, ১০টি আসন আর্থিক অসচ্ছল কিংবা বাড়ির দূরত্ব বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বন্টন করা হয়। এখানে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় দেখে আসন দেওয়া হয়নি। যারা নিয়মমাফিক আবেদন করেছে বিশেষ বিবেচনায় বৈধভাবে তাদের আসন দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্নাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হলেও ৬০ বছরে আবাসন হয়েছে মাত্র ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ হাজার শিক্ষার্থীদর মধ্যে আবাসিক হলে থাকার সুযোগ পান ৭ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। বাকি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে কটেজ, ভাড়া বাসা ও শহরে থাকেন। খবর দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস।