গত কয়েক বছরে শীতের তীব্রতার থেকে কুয়াশার প্রভাবটা যেন একটু বেশিই। এ বছর উত্তরবঙ্গে হঠাৎ করেই সোমবার রাত থেকে দুপুর অবধি কুয়াশার প্রভাব দেখা গিয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীতেও কুয়াশায় প্রকোপ বেড়ে গেছে। মূলত মেঘের স্তর অনেকটা নিচু হওয়ার ফলে এমনটা হয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুল হক দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘শীতের এই মৌসুমে আকাশে এক ধরনের লো ক্লাউড চলে আসছে। এটাকে এ্যাস্টিক ক্লাউড বলে। লো ক্লাউড হওয়াতে কুয়াশা বেশি হচ্ছে। কুয়াশার হাইটটা খুবই কম, ৬০০-৮০০ ফিটের কম হবে।’
এ ধরনের কুয়াশা কেন হয় সাধারণত এ উত্তরে আজিজুল হক বলেন, শীতের কারণে সাগরে এক ধরনের জলীয় বাষ্প তৈরি হয়। এই জলীয় বাষ্প থেকে বৃষ্টিপাত হয় না, বরং ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয়। এজন্য একে লো ক্লাউড বলে। এটাকে এক ধরনের পিসিপিটিশন বলে, বৃষ্টিপাত হলে যেমন পানি আকারে প্রকাশ পায় কিন্তু এ ধরনের জলীয় বাষ্প লো ক্লাউড হয়ে কুয়াশা আকারে প্রকাশ পায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আরও বলেন, ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর মেরুর দিকে ঘন কুয়াশার মাত্রা বেশি হবে। কোথাও কোথাও কুয়াশার দৃশ্যমান ১০০ মিটারের নিচে নেমে আসবে। যেহেতু একশো মিটারের তার মানে খুবই সামান্য পরিমাণে রাস্তা বা যাতায়াত ক্ষেত্রে সব দেখা যাবে। এই ধরনের কুয়াশা দুপুর বারোটা অবদি বিরাজ করবে এবং এই ধরনের ঘন কুয়াশা উত্তরাঞ্চলে বেশি হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১৩ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হালকা শীত বিরাজ করবে। দেশের উত্তরাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, রংপুর বিভাগে দশের নিচে তাপমাত্রা চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকায় শীতের মৌসুমে হালকা বৃষ্টিপাতের প্রসঙ্গে আজিজুল হক বলেন, একে এক ধরনের মিস্ট (mist) বা ফগ বলা হয় । এটা কুয়াশার একটা অংশ। এটাও এক ধরনের পিসিপিটিশন। শীতকালেই এ ধরনের লো ক্লাউড তৈরি হয়ে জলীয়বাষ্প ন্যায় প্রকাশ হতে থাকে। যার ফলে দিনের তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং স্বাভাবিক যে তাপমাত্রা আছে সেটাও কমে যায় । যার ফলে শীতের অনুভূতি বেশি হতে থাকে । তবে ঢাকায় কিন্তু আজ (সোমবার) ঢাকার তাপমাত্রা কিন্তু বারো ডিগ্রির উপরে প্রায় ১৬তে আছে।’
বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে যাওয়াতে কালো কুয়াশার কোনো আভাস আছে কি না জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, এ ধরনের কুয়াশা আমাদের দেশে খুবই কম হয়। সেজন্য আমাদের এখন পর্যন্ত আমাদের আসলে কোনো রিসার্চ নেই। তবে এ ধরনের কুয়াশা দেশের উত্তরাঞ্চলের দিকে বিশেষ করে বাংলাবান্ধা, পঞ্চগড় এই অঞ্চলগুলোতে হতে পারে।
নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায়ই কালো কুয়াশা হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত এই অঞ্চলগুলো হিমালয়ের কাছে হওয়ায় ওই অঞ্চলে হওয়া কালো কুয়াশার দরুণ এর প্রভাবটা উত্তরাঞ্চলে বেশি পড়ে। হিমালয়ের নিকটবর্তী বলতে গেলে নেপাল বা ইন্ডিয়াতে কালো কুয়াশার পরিমাণটা খুবই বেশি কারণ তাদের অঞ্চলগুলো কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ এত বেশি যে তা লো ক্লাউড হয়ে ঘন কুয়াশা আকারে পড়তে থাকে। এটার প্রভাবেই দেশের উত্তরাঞ্চলে কালো কুয়াশার প্রভাবটা থাকে।