ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি স্থল নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। এর প্রভাবে টানা বৃষ্টি চলছে সারাদেশে। এমন বৃষ্টি আরও পাঁচ দিন চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরই মধ্যে বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের কয়েকটি নদীর পানি বেড়েছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন মহানগরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে উপকূলের অনেক এলাকা। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অন্তত দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি কয়েকশ পরিবার চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় বলা হয়, শুক্রবারও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির কারণে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোয় অস্থায়ী জলাবদ্ধতা এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর আশেপাশের পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। বর্তমানে এটি উড়িষ্যা ও আশেপাশের এলাকায় স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শনিবার রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
রোববার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সোমবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
মঙ্গলবার ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
নদীর পানি বাড়ছে
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ইতোমধ্যে দেশের কয়েকটি নদীর পানি বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ফেনী জেলার মুহুরী, সিলোনিয়া ও ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে লালমনিরহাট, নীলফামারী, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। টানা বৃষ্টিতে দ্বীপের পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মাঝেরপাড়া, নজরুলপাড়া ও কোনাপাড়া এলাকায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, দ্বীপের একমাত্র স্লুইসগেট বন্ধ করে দেওয়ায় পানি জমে আছে, নামতে পারছে না। সমুদ্র উত্তাল থাকায় দুদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, একটি স্লুইসগেট বন্ধ থাকায় এ সমস্যা হয়েছে। গেট খোলার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
দেশের আট বিভাগেই ভারী বর্ষণের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও বরিশালের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে।