ডিসেম্বর ২০, ২০২৩, ০১:১৯ পিএম
কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনের সাপোর্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. হাসিবুল ইসলাম কক্সবাজার এক্সপ্রেস সম্পর্কে কিছু তথ্য জানান। তিনি বলেন, একটি টিকিটের জন্য অনলাইনে একসাথে দুই লাখ মানুষ চেষ্টা করে। যার ফলে টিকিট পান না। কিন্তু যাদের ভাগ্য ভালো তারা পান।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে টিকিট কাউন্টারের সামনে ভিড় করেছে বহু মানুষ। কিন্তু কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের কোনো টিকিট না থাকার পাশাপাশি অনলাইন টিকিট বিক্রির অ্যাপেও কোনো টিকিট থাকে না।
মূলত এমন পরিস্থিতি শুরু হয়েছে পহেলা ডিসেম্বর থেকে। কক্সবাজার থেকে ঢাকায় প্রথম যাত্রী নিয়ে রেল চলাচলের পর থেকে টিকিট নিয়ে কক্সবাজারে শুরু হয় এমন হইচই।
অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজারে রেলের টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। এ বিষয়ে টিকেট প্রত্যাশীরা বলছেন, কয়েকদিন ধরে চেষ্টার পরও অনলাইনে টিকেট বুকিং করা সম্ভব হচ্ছে না। শেষমেষ সরাসরি আইকনিক স্টেশনের কাউন্টারে গিয়ে টিকিট মিলছে না।
আইকনিক স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট কাটতে আসা নারী শায়লা রহমান বলেন, আসলে কক্সবাজার ট্রেনের টিকিটগুলো কোথায় যাচ্ছে? আমরা পাচ্ছি না, টিকিটটা আসলে পাচ্ছে কে? কারা পাচ্ছে এবং কীভাবে পাচ্ছে এটা আসলে সরকারের দেখা দরকার।
টিকিট সংগ্রহ নিয়ে এক টিকেট প্রত্যাশী বলেন, “ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসার সময় ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করার চেষ্টা করছিলাম। সাধারণ ১০দিন আগে সকাল ৮টা থেকে টিকিট কাটা শুরু হয় অনলাইনে। তাই আমরা ঠিক ৮টার আগে বসেছিলাম অনলাইনে টিকিট কাটবো, পরে ৮টার সময় দেখি কোন টিকিট নেই। কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে স-শরীরে দেখতে আসলাম কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যায় কিনা কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হয়েছি ”
আইকনিক স্টেশনে ৭দিন ধরে টিকিট কাটতে আসা আব্দুল্লাহ বলেন, “টিকিট কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু স্টেশনে পাশে চায়ের দোকানে এক টমটম চালক বলছে, তোমার কয়টা টিকিট লাগবে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওদের হাতে যদি টিকিট থাকে কাউন্টারে টিকিট থাকবে না এটা কীভাবে হয়।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের নিয়োজিত অনলাইন বুকিং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দাবি, ট্রেনের টিকেট কোনোভাবেই অবৈধ পন্থায় বিক্রি সম্ভব নয়। আর সিন্ডিকেট করে কালোবাজারে টিকেট বিক্রির অভিযোগ সত্য নয় বলে জানিয়েছে স্টেশন মাস্টার।
টিকিট কালোবাজারি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করে মো. হাসিবুল ইসলাম বলেন, কালোবাজারি যদি হয়ে থাকে তাহলে কালোবাজারিরা সকাল বেলায় টিকিটগুলো অনলাইনে সংগ্রহ করছে। আর তারা বাইরে বিক্রি করছে। এখানে যে আমার নাম উঠে আসছে এটা কোনোভাবেই আমার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
আইকনিক স্টেশনের মাস্টার মো. গোলাম রব্বানী বলেন, কালোবাজারে টিকিট যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ট্রেনের টিকিট মূলত শতভাগই অনলাইনে নিয়ন্ত্রিত। প্রতিদিন সকাল ৮টায় ২ লাখের বেশি মানুষ চেষ্টা করে। ৭৮০টি সিট। একজন তার এনআইডির বিপরীতে ৪টা করে টিকিট কাটতে পারেন।
যার ফলে অনেকেই টিকিট পাচ্ছেন, আবার অনেকেই পাচ্ছেন না। কাউন্টারেও একই অবস্থা। কোনো কারণে কেউ টিকিট ছেড়ে দিলে তা কাউন্টারে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।
এদিকে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে কক্সবাজারে ট্রেনের টিকেট সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে কালোবাজারি হচ্ছে কি না, কারা জড়িত এসবের তদন্ত করতে র্যাবকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
কক্সবাজারস্থ-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কক্সবাজারে ট্রেন টিকিট কালোবাজারি হচ্ছে কিনা তা তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে আদালত। তবে মামলার কোনো তদন্তভার দেয়া হলে এক্ষেত্রে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে ছায়া তদন্ত শুরু হয়েছে। যখনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাব তখনই পূর্ণাঙ্গ তদন্তের কার্যক্রম শুরু হবে। তদন্তের মাধ্যমে এর নেপথ্যে কারা আছে সেটা বের করে আনার চেষ্টা করব।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’ নামের আরও একটি নতুন ট্রেন চালুর কথা জানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।