হালাল হলিডে: জনপ্রিয় হচ্ছে পর্যটনের নতুন আকর্ষণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ০৬:১০ পিএম

হালাল হলিডে: জনপ্রিয় হচ্ছে পর্যটনের নতুন আকর্ষণ

সংগৃহীত ছবি

পর্যটনকে এখন বলা হয় শিল্প। এই শিল্পের অবস্থান বিশ্ব অর্থনীতিতে অনস্বীকার্য। বলতে গেলে, এটা এখন এক নম্বর শিল্প। বিশ্বের জিডিপির ৯ শতাংশ আসে পর্যটনখাত থেকে। যে ১১টি খাতে কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি, পর্যটন তার অন্যতম।

বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলো পর্যটনের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়াদী মুসলিম দেশগুলোতে নিষিদ্ধ কিংবা এর জোগান কম। এ কারণে অমুসলিম দেশগুলোর পর্যটকদের আগ্রহ মুসলিম দেশগুলোতে কম। অন্য দিকে মুসলিম দেশগুলোর ধর্মপ্রাণ পর্যটকদের পক্ষে ‘পশ্চিমা ধাচে’ গড়ে উঠা পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়া সম্ভব নয়।

মুসলিম দেশগুলোতে তাদের জন্য তেমন আলাদা ব্যবস্থা নেই যাতে সেসব দেশে ব্যাপক সংখ্যায় তারা ভ্রমণ করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত ও তুরস্ক উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অন্যতম হলো- ‘হালাল হলিডে’ একটি। হালাল হলিডে ক্রমাগত জনপ্রিয়তা লাভ করছে।

গ্লোবাল মুসলিম ট্রাভেল ইনডেক্স বা বিশ্ব মুসলিম পর্যটন সূচক অনুযায়ী, ২০২২ সালে হালাল পর্যটনের বাজারমূল্য ছিল ২২০ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় অনুসারীর সংখ্যা বিবেচনায় খ্রিস্টানদের পরেই মুসলমানদের অবস্থান। আর অনেক মুসলিম দেশেই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সংখ্যা বাড়ছে। 

পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের মুসলিমদের তাদের বাবা-মায়ের তুলনায় বাড়তি আয়ের পরিমাণ বেশি। ফলে এই আয় থেকে তারা ছুটির দিন বা অবসর কাটানোয় ব্যয় করতে চান।সে কারণে হালাল পর্যটনের বাজার দিন দিন বাড়ছে। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের বিজনেস ডেইলি প্রোগ্রামকে এমনটাই জানিয়েছেন জেহরা রোজ।

তিনি বলেন, “আমার কাছে সাধারণ ছুটির দিন আর হালাল ছুটির দিনের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থা। এছাড়াও হালাল হলিডেতে মুসলিম নারীদের সুইমিং পুলে নামার ক্ষেত্রেও পোশাকে পার্থক্য দেখা যায়। প্রচলিত বিকিনির বদলে বুরকিনি পরে পাবলিক সুইমিং পুলে নামতে দেখা যায় অনেককে।”

বুরকিনি মূলত মুসলিম নারীদের জন্য তৈরি সাঁতারের পোশাক। এই সুইমস্যুটে সারা শরীর ঢেকে রাখা যায়, শুধু মুখ এবং পায়ের পাতা দেখা যায়। জেহরা রোজ বলেন, বেড়াতে গিয়ে সহজেই হালাল খাবার পাওয়ার সুযোগও চান তিনি।

তার মতে, “অন্য যেকোনো জিনিসের তুলনায় যে বিষয়টি নিয়ে সারা পৃথিবীতেই বেশিরভাগ মুসলিম পর্যটক সচেতন থাকেন- সেটি হচ্ছে খাবার। ইসলাম ধর্মে শুকরের মাংস এবং অ্যালকোহলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সে কারণে যে কোনো দেশে ঘুরতে গেলে খাবার হালাল কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হয় মুসলিম পর্যটকদের।”

তিন সন্তানের মা ৩৬ বছর বয়সী হেসার সুকুগলু এডিগুজেল ইস্তাম্বুলের বাসিন্দা। তুরস্কের ভেতর হালাল ছুটি কাটাতে তার কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু তারা যখন কোনো অমুসলিম দেশে ঘুরতে যাওয়ার চিন্তা করেন তখন তাদের অনেক বেশি গবেষণা আর পরিকল্পনা করতে হয়।

তিনি বলেন, “সম্প্রতি আমরা মেসিডোনিয়ায় গিয়েছিলাম। সকালের নাস্তা আমরা হোটেলেই সেরেছি। আর দুপুরের খাবারের জন্য আমরা সেখানকার ঐতিহ্যবাহী দোকানগুলোতে গিয়েছি যেখানে অ্যালকোহল ছাড়াই খাবার পরিবেশন করা হয়।”

তিনি দিনে পাঁচবার নামাজ পড়েন এবং ইসলামি মূল্যবোধ পালনের বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকেন। হেসার সুকুগলু বলেন, “হালাল হোটেলগুলোতে জায়নামাজ তারাই সরবরাহ করে। কিন্তু সাধারণ হোটেলে থাকলে আমাকে সাথে করে জায়নামাজ নিয়ে যেতে হয়।”

গ্লোবাল মুসলিম ট্রাভেল ইনডেক্স বা বিশ্ব মুসলিম পর্যটন সূচক অনুযায়ী, ২০২২ সালে হালাল পর্যটনের বাজার ২২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ছিল। অনেক কোম্পানি হালাল পর্যটন নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছে। আবার অনেকে একে একটি বিকল্প হিসেবে রাখছে।

পশ্চিমা ভোক্তা শ্রেণীকে লক্ষ্য করে গড়ে তোলা বিশেষ ধরণের হোটেলের জন্য সুপরিচিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ। এই দেশটিতে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলিম পর্যটক আসতে শুরু করেছে। মালদ্বীপ একটি মুসলিম দেশ। আর এ কারণে শুরু থেকেই এখানে মুসলিম বান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পর্যটন মন্ত্রী ড. আব্দুল্লা মাসুম।

তিনি বলেন, এই খাত দ্রুত বাড়ছে। আব্দুল্লা মাসুম বলেন, সম্প্রদায় ভিত্তিক বা স্থানীয় পর্যটকদের জন্য এখন এক চতুর্থাংশ হোটেলের বিছানা আলাদা করে রাখা হয়। আইন অনুযায়ী, সব হোটেলে কর্মীদের নামাজের জন্য একটি মসজিদ থাকা বাধ্যতামূলক। তিনি বলেন, আরও বেশি পর্যটক এখন এই মসজিদ ব্যবহার করেন।

আব্দুল্লা মাসুম বলেন, অনেক রিসোর্টে এখন কক্ষ বরাদ্দ, কক্ষের নকশা আর খাবার রান্নার ক্ষেত্রে মুসলিম বান্ধব পরিবেশ রয়েছে। দেশটির অর্থনীতির এক-চতুর্থাংশের বেশি পর্যটন খাতের ওপর নির্ভরশীল।

পরিবর্তন

২০২৩ সালের গ্লোবাল মুসলিম ট্রাভেল ইনডেক্সে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোই প্রথম দিকে রয়েছে যেখানে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে। এই তালিকায় মাত্র দুটি অমুসলিম দেশ রয়েছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর ১১তম এবং যুক্তরাজ্য ২০তম স্থানে রয়েছে।

১৮৯৯ সালে স্থাপিত লন্ডনের পাঁচ তারকা মানের ল্যান্ডমার্ক হোটেলে এখন হালাল মাংস পরিবেশন করা হয়।
হোটেলের কর্মীদের মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ওই হোটেলের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিভাগের পরিচালক ম্যাগডি রুস্তম বলেন, আমাদের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়র পাশাপাশি অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ও রয়েছে। বারে আপনি অ্যালকোহলমুক্ত ককটেল পানীয় পাবেন যা খুবই জনপ্রিয়।আমাদের দুটি প্রবেশপথ রয়েছে। হোটেলের উত্তর দিকের প্রবেশপথটি সংরক্ষিত।

মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ পরিবার বিশেষ করে নারীরা জনসমক্ষে আসতে চান না। এ কারণে তারা উত্তর দিকের প্রবেশপথ ব্যবহার করেন। এখানে একটি বিশেষ লিফটও রয়েছে যেটা সরাসরি তাদের কক্ষে নিয়ে যায় যাতে কেউ তাদেরকে দেখতে না পারে।

Link copied!