১৩০০ ফুট উচ্চতায় তো আমরা অনেকেই উঠেছি। তবে মাটির ১৩০০ ফুটেরও বেশি নিচে থাকার কথা ভেবেছেন কখনো? বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য না হলেও মাটির ১৩০০ ফুটেরও বেশি নিচে এমনই এক হোটেল রয়েছে ইউরোপের দেশ ওয়েলসের স্নোডোনিয়া পর্বতমালায়। ‘ডিপ স্লিপ’ নামের এই হোটেলটির অবস্থান পরিত্যক্ত একটি খনির মধ্যে। হোটেলটিকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর গভীরতম হোটেল।
কমোরথেন নামে পরিত্যক্ত একটি স্লেট পাথরের খনির প্রায় ১ হাজার ৩৭৫ ফুট গভীরে হোটেলটি অবস্থিত। সেখানে পৌঁছাতে খাড়া এবং দুরারোহ পরিত্যক্ত খনি পথ অতিক্রম করতে হয়। গত এপ্রিলে `গো বিলোও` নামক একটি কোম্পানি ব্যতিক্রমী এ হোটেলটি চালু করেন।
এই হোটেলে থাকতে হলে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। ব্লাইনাই ফেসটিনিওগ শহরের কাছে অবস্থিত গো বিলোওয়ের টানেগ্রিসাই বেস থেকে রোমাঞ্চকর এক যাত্রা শুরু হয় পর্যটকদের। সেখান থেকে হোটেলে নিয়ে যান প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাইডরা। হেলমেট, টর্চ ও বুট পায়ে লাগিয়ে সবাই ঘুরে বেড়ান নতুন এক রাজ্যে।
খনিশ্রমিকদের ব্যবহার করা পুরোনো সিঁড়ি, ক্ষয় হতে থাকা সেতুসহ শরীরের রোম দাঁড় করিয়ে দেওয়া পথ পেরিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করে মাটির ১ হাজার ৩৭৫ ফুট নিচে পৌঁছে যান পর্যটকরা।
‘ডিপ স্লিপে’ হোটেলে পৌঁছানোর কিছু সময় পর থাকে রাতের খাবারের আয়োজন। বড় একটি টেবিলে মাংস এবং সবজির বিভিন্ন পদ পরিবেশন করা হয়। এ হোটেলের তাপমাত্রা সারা বছরই ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকে।
‘ডিপ স্লিপে’ পৌঁছানোর পথ দুর্গম হলেও কেবিনগুলো করা হয়েছে খুব আরামদায়ক। এখানে রয়েছে দুই শয্যার চারটি কেবিন। আর এর বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে কৃত্রিমভাবে তৈরি ডাবল বেডের একটি গুহা-কামরা।
এ ছাড়াও হোটেলটিতে রয়েছে ডাইনিং এলাকা ও টয়লেট। রয়েছে পানি, বিদ্যুৎ ও ওয়াইফাই সুবিধা।
আয়োজকরা দাবি করেছেন এটি এখন পৃথিবীর গভীরতম হোটেল। সুইডেনের সালা রুপার খনির ৫০৮ ফুট গভীরে অবস্থিত একটি স্যুইটকে পেছনে ফেলে এ অর্জন হোটেলটির।
তবে সপ্তাহে শুধুমাত্র একবারই অতিথি সেবা দেয় হোটেলটি। প্রতি সপ্তাহে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত চলে এ অতিথি সেবা। হোটেলে ওঠা-নামার পথ দুর্গম হলেও নিরাপত্তার পুরো ব্যবস্থাই করা হয়েছে এখানে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকেন একজন প্রশিক্ষক ও একজন কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি।
কেবিন ও গুহার খরচ মূলত দুই ধরনের হয় এখানে। কেবিনে থাকলে দুজনের জন্য থাকা-খাওয়াসহ পুরো প্যাকেজ খরচ ৩৫০ পাউন্ড বা প্রায় ৪৭ হাজার টাকা। অপরদিকে গুহা-নিবাসের জন্য গুনতে হয় ৫৫০ ডলার বা প্রায় ৭৪ হাজার টাকা।
হোটেলে আসা অনেক অতিথি বলেন, এখানে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ ভালো ঘুম হয়েছে তাদের। অর্থাৎ বাড়িতে থাকার তুলনায় বেশি বিশ্রাম পেয়েছেন। এজন্যই হয়তো গো বিলোর প্রতিষ্ঠিত এ হোটেলটির নাম শোভা পেয়েছে।