মে ২৮, ২০২১, ০৭:১২ পিএম
করোনা মহামারির কারনে নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্য অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যার ফলে করোনাকালীন সময়ে মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আরও উদাসীন হয়েছে নারীরা। চলতি বছরে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘মাসিক স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ ও সঠিক পদক্ষেপ’। যদিও মাসিক স্বাস্থ্য খাত বরারবই উপেক্ষিত ছিল কিন্তু করোনা মহামারী মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা আরও জটিল করে দিয়েছে।
সরকারের পরিকল্পনায় নেই মাসিক স্বাস্থ্য
আইসিডিডিআর,বি এর মতে দেশে ৫ কোটি ৪০ লাখ নারী মাসিক সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু যখন কোন পরিকল্পনা নেয়া হয় মাসিক সমস্যা নিয়ে কোন পরিকল্পনা থাকে না। যার ফলে ক্যান্সার, জরায়ুতে ক্ষত, বন্ধ্যাত্ব এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
করোনা মহামারীর কারনে উপার্জনের হার কমেছে প্রায় ৯৬ শতাংশ পরিবারের। এর ফলে বাজেটসহ অন্যান্য খাতে মাসিক সমস্যা প্রতিরোধে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। অন্যান্য দূর্যোগের সময় ত্রাণ হিসেবে মাসিক সংক্রান্ত পণ্য বিতরণ করা হলেও করোনা মহামারীতে এ ধরনের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
করোনা পরিস্থিতিতে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা জরুরী স্বাস্থ্য সহায়তার আওতায় থাকা দরকার : প্লান ইন্টারন্যাশনাল
জনস্বাস্থ্য কর্মী ও মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্যাম্পেইন ডিরেক্টর মার্জিয়া প্রভা বলেন, দেশে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা এখনও স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় আসেনি। যার ফলে করোনা মহামারীর সময়ে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
মহামারীতে ত্রাণ হিসেবে মাসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পণ্য দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি প্রদান করা হয়েছে প্রভার সংগঠন থেকে। গ্রামীন পর্যায়ে নিম্ন আয়ের পরিবারকে যেন এই সুবিধা দেয়া হয় এ জন্য আবেদন করেন তিনি।
প্লান ইন্টারন্যাশনালের হেড অব পলিসি ড. রোশমুন্দ এবদন বলেন, মাসিক স্বাস্থ্য ও জীবাণু প্রতিরোধ ব্যবস্থা করোনা মহামারীতে জরুরী স্বাস্থ্য সেবায় অন্তর্ভূক্ত থাকা উচিৎ। মাসিক এই মহামারীতে থেমে থাকেনি। যার ফলে নিরাপদে এই ব্যবস্থাপনা করা আরও বেশি জটিল হয়েছে।
মাসিক স্বাস্থ্যে পদক্ষেপ ও বিনিয়োগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ডাকসুর সাবেক সদস্য ক্যাম্পাসে ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে স্যানিটারি ন্যাপকিন পাওয়া নিশ্চিত করেন। যা বর্তমান প্রতিপাদ্যর সম্পূরক। দ্য রিপোর্টকে তিনি বলেন, এই যুগে এসেও মাসিক স্বাস্থ্যকে অনেকেই ট্যাবু মনে করে। যা সত্যিই দুঃখজনক। আর করোনাকালীন সময়ে এই আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। তবে কিছু কিছু বেসরকারি সংগঠন এই সময়ে মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে।
সবসময়ই ব্যয়বহুল মাসিক স্বাস্থ্যের পণ্য
‘করোনায় মাসিক স্বাস্থ্য’ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন গত বছরে প্রকাশিত হয়। এ বিষয় উল্লেখ করে প্লান ইন্টারন্যাশনাল বলে, করোনাকালীন সময়ে শুধু মাত্র মাসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পণ্যের দামই বৃদ্ধি পায়নি বরং মানুষের আয়ও কমেছে। যার ফলে এই সংক্রান্ত পণ্য ক্রয়ও কমেছে।
রাজধানীর ঢাকা উদ্যানে বসবাসরত গৃহকর্মী হানুফা (৩৮) নিজের জন্য ছেড়া কাপড় ব্যবহার করছেন। তবে তার মেয়ের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করছে। করোনা মহামারীর শুরুতে কর্মক্ষেত্র হারিয়ে সে ও তার মেয়ে ছেড়া কাপড় ন্যাপকিন হিসেবে ব্যবহার করত। বস্তিতে প্রকাশে সেই ছেড়া কাপড় ধুয়ে শুকাতে দিতেন তিনি। রক্ত দেখে অনেকে হাসাহাসি করত বলেও জানান তিনি।
প্রান্তিক নারীদের অবস্থা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কলকারখানায় নারীদের জন্য মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিশেষ ছুটি থাকে। কিন্তু দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করায় চা শ্রমিকরা মাসিকরত অবস্থায় ২২ কেজির বস্তা নিয়ে পাহাড়ে ওঠার মত ভারী কাজ করে যাচ্ছে।
চা শ্রমিকদের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পণ্য সরবারহ করছে বিভিন্ন সংগঠন কিন্তু মাসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোন পণ্য এখনও সরবারহ করছে না কেউ। তারা ছেড়া কাপড়ই ধুয়ে বারবার ব্যবহার করছে।
যথাযথ পদক্ষেপ জরুরী
বর্তমান প্রেক্ষিতে সরকার ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অধিদপ্তরগুলোকে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জোর প্রদান করা প্রয়োজন। মাসিক স্বাস্থ্যের পণ্য কোন বিলাসীতা নয় বরং জরুরী প্রয়োজনীয় পণ্য এটা নিশ্চিত করতে হবে। যার ফলে জরুরী বরাদ্দের পাশাপাশি ত্রাণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে মাসিক স্বাস্থ্যের পণ্য নিশ্চিত করতে হবে।