আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোর আবদৌলায়ে দিয়াবাতের বয়স তখন মাত্র পাঁচ বছর। ওই বয়সেই প্রাণঘাতী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। সেবার কোনোমতে রক্ষা পেয়েছিলেন। তবে তাঁর পরিবারের তিন ও চার বছর বয়সী দুই শিশুর প্রাণ কেড়েছিল মশাবাহী এ রোগ।
আবদৌলায়ে দিয়াবাত এখন দেশটির রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইন হেলথ সায়েন্সের কীটতত্ত্ব ও পরজীবীবিদ্যা বিভাগের প্রধান। ম্যালেরিয়া নির্মূলে বেশ সম্ভাবনাময় একটি কৌশল নিয়ে কাজ করছেন এই বিজ্ঞানী। চাইছেন মশার শরীরের জিনগত পরিবর্তন এনে এ সমস্যার সমাধান করতে।
বুরকিনা ফাসোয় প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর বড় কারণ ম্যালেরিয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সে বছর সারা বিশ্বে এ রোগে মারা গিয়েছিলেন ৬ লাখ ১৯ হাজার জন। রোগটি প্রতিরোধে বুরকিনা ফাসোয় বিশেষ মশারির ব্যবহারসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন দিয়াবাতে।
ম্যালেরিয়া ছড়ায় এ রোগের জীবাণুবাহী স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে। পুরুষ মশা কামড়ায় না। তাই এটি রোগও ছড়ায় না। পুরুষ মশার শরীরে জিনগত পরিবর্তন এনে সেগুলোর প্রজননক্ষমতা নষ্ট করতে চাইছেন দিয়াবাতে। ফলে সেগুলোর সঙ্গে মিলিত হওয়া স্ত্রী মশাগুলো বংশবিস্তার করতে পারবে না।
অধ্যাপক দিয়াবাতে বলেন, ম্যালেরিয়া ঠেকানোর এ কৌশলের খরচও তুলনামূলক বেশ কম। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এ কৌশল প্রয়োগ করে বেশ কয়েক হাজার প্রজনন অক্ষম পুরুষ মশা পরিবেশে ছাড়া হয়েছে। এ নিয়ে চলছে গবেষণা। কৌশলটি পুরোপুরি কাজে লাগাতে আরও কয়েক বছর লাগতে পারে।
ম্যালেরিয়া নির্মূলে দিয়াবাতের এ কৌশলকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে। অনেকে আবার প্রশ্নও তুলেছেন। যেমন এ পদ্ধতির বিরুদ্ধে গিয়ে জার্মানিভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা সেভ আওয়ার সিডস (এসওএস) বলেছে, কোনো প্রাণী যদি মানুষের জন্য ক্ষতিকরও হয়, তারপরও বাস্তুসংস্থানে সেটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই প্রাণীটি নির্মূল করলে বাস্তুসংস্থানের ওপর বড় প্রভাব পড়তে পারে।