তরমুজকে যে কারণে বলা হয় প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৯, ২০২২, ০৬:১০ পিএম

তরমুজকে যে কারণে বলা হয় প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা

গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা এখন। কি ঘরে, কি বাইরে, টেকা যাচ্ছে না একেবারে। বৈশাখের এই দাবদাহকালে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রিতে উঠছে কখনো কখনো। এমনকি রাতেও ওই তাপমাত্রা থাকছে ২৬ থেকে ২৮ ডিগ্রির ঘরে! এরমধ্যে স্বস্তি নিয়ে এসেছে গরমকালের রসালো কিছু ফল। এরমধ্যে তরমুজ হয়তো আলাদাভাবে মনোযোগ কাড়ছে ভোক্তাদের। গরমে এই তরমুজ ঝটপট স্বস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, এ কথা সবাই জানেন। ফলের বাজার ইতিমধ্যেই দখল করে নিয়েছে পুষ্টিগুণে ভরপুর নানা রঙ ও সাইজের সুস্বাদু তরমুজ।

শুধু খেতেই সুস্বাদু এমন যুক্তিটা বোধকরি তরমুজের ক্ষেত্রে খাটে না। বরং পাকা লাল টুকটুকে তরমুজ এরচেয়েও বেশি প্রশংসার দাবিদার। কারণ, তরমুজে রয়েছে যৌণ উত্তেজক উপাদানও! বিশেষ করে পুরুষের ‘বলবৃদ্ধিকারক’ শক্তির জন্য তরমুজের খ্যাতি আছে! অনেকেই হয়তো এই তথ্যটি জানেন না। 

মেডিকেল নিউজ টুডের এক প্রতিবেদন মতে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌণ উত্তেজক ভায়াগ্রার উপাদান আর তরমুজের কিছু উপাদানের মিল রয়েছে। যেমন, তরমুজে রয়েছে উচ্চ মাত্রার এল- সিট্রোলিন। এটি এক প্রকারের অ্যামিনো এসিড। এটি শরীরে পড়লে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তচাপ বাড়ে। যেটি কিনা পুরুষের যৌনক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। ভায়াগ্রাতেও যে উপাদান রয়েছে, সেটিও একই প্রক্রিয়ায় শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেওয়ার কাজটিই করে!  

গবেষকদের বরাত দিয়ে বিখ্যাত মিডিয়া সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আমরা জানি যে, তরমুজে রয়েছে সিট্রোলিন নামের অ্যামিনো এসিড। বিশেষ করে এর খাবার উপযোগী লাল অংশে উপস্থিতি রয়েছে এই অ্যামিনো এসিডের। গবেষক ভিমু পাতিল এ বিষয়ে বলেন, যে পরিমাণ সিট্রোলিন (citrulline) তরমুজের লাল অংশে রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা ধারনা করেছিলেন, আসলে তার চেয়েও বেশি পরিমাণে এটি রয়েছে। ‘তরমুজ কীভাবে প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা হতে পারে?’ এমন একটি প্রশ্নে মিস্টার পাতিল বলেন, ‘তরমুজে সিট্রোলিন আছে, এটা আমাদের জানা কথা। কিন্তু এটা জানতাম না যে, সিট্রোলাইনের পরিমাণ তাতে এতো বেশি থাকতে পারে।'

গবেষণা সূত্র: https://www.cbsnews.com/news/watermelon-a-natural-viagra/

গবেষকরা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “মানবদেহ সিট্রোলিইনকে আরজিনিনিন নামের যৌগ পদার্থে রূপান্তরিত করে। আরজিনিনিন হচ্ছে ভিন্ন মাত্রার অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা নাইট্রিক অ্যাসিডের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে। আবার নাইট্রিক অ্যাসিড দেহের রক্তবাহী শিরা বা ধমনীর প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

আলোচিত ফল এই তরমুজের আরও অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তরমুজে আছে ৯২ থেকে ৯৫ গ্রাম পানি, আঁশ ০.২ গ্রাম, আমিষ ০.৫ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, ক্যালোরি ১৫ থেকে ১৬ মি.গ্রাম। এছাড়াও তরমুজে ক্যালসিয়াম রয়েছে ১০ মি.গ্রাম, আয়রন ৭.৯ মি.গ্রাম, কার্বহাইড্রেট ৩.৫ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.২ গ্রাম, ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি২।

মোটা দাগে তরমুজের আরও উপকারিতা :

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর

তরমুজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে আছে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ তরমুজ খেলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস জনিত অসুস্থতা কমে যায়। এছাড়াও নিয়মিত তরমুজ খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।

চোখ থাকে ভালো

তরমুজে আছে ক্যারোটিনয়েড। আর তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে চোখ ভালো থাকে এবং চোখের নানান সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্যারটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

ওজন কমাতে সহায়ক

তরমুজে আছে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং খুব কম পরিমাণে ক্যালরি। আর তাই তরমুজ খেলে পেট ভরে যায় কিন্তু সেই অনুযায়ী তেমন কোনো ক্যালরি শরীরে প্রবেশ করে না। ফলে তরমুজ খেয়ে পেট ভরে ফেললেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

পানিশূন্যতা দূর করে

তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে। গরমের সময় যখন ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়, তখন তরমুজ খেলে শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয় খুব দ্রুততায়। ফলে শরীর থাকে সুস্থ ও সতেজ।

যাদের তরমুজের প্রতি ততটা ভালোবাসা নেই তারা আরেকবার চেষ্টা করে দেখুন। আর যাদের আছে তারা আরো বেশি করে তরমুজ খেতে শুরু করেন। তবে সেই খাওয়া যেন সীমা না ছাড়ায়, সেটিও খেয়াল রাখুন।

সূত্র: medicalnewstoday

Link copied!