নারায়ণগঞ্জে করোনা টিকা নিয়ে চলছে গণভোগান্তি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২৮, ২০২২, ০৫:৪০ এএম

নারায়ণগঞ্জে করোনা টিকা নিয়ে চলছে গণভোগান্তি

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে কোভিড-১৯ টিকা নিতে গিয়ে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন শতশত টিকা প্রত্যাশী এবং সাধারণ রোগীরা। এতে বেশি ভুগতে হচ্ছে শিক্ষার্থী-নারী-বয়স্ক লোকজনদের। অনেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রোদের প্রখরতা সইতে না পেরে টিকা না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন। টিকা নিয়ে এই ভোগান্তির বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সিটি কর্পোরেশন পরস্পরের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।

রবিবার সকাল দশটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো হাসপাতাল যেনো এক বিশৃঙ্খলার রাজত্ব। হাসপাতালের প্রধান গেট থেকে একদম শেষ প্রান্তের দেয়াল পর্যন্ত মানুষের উপচে পড়া ভীড়। কেউ এসেছেন টিকার প্রথম ডোজ দিতে, কেউবা এসেছেন দ্বিতীয় ডোজ দিতে, কেউবা বুস্টার নিতে। কেউ এসেছেন ফাইজার, কেউ মর্ডানার ডোজ নিতে।

এদের মধ্যে আবার অনেকে হাসপাতালে এসেছেন চিকিৎসা নিতে। নানা সেবা নিতে আসা রোগী আর টিকা গ্রহীতা মিলে একাকার এক অবস্থা। টিকা নিতে আসা মানুষ ছুটছে দিগ্বিদিক। কর্তৃপক্ষের কেউ কোনো তথ্য দেওয়ার অবস্থায় নেই। ফলে কেউ হয়তো টিকা কার্ড নিয়ে দুপুরের খরতাপে হাসপাতালের প্রাঙ্গণের লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে শেষে জানতে পারলেন তাকে টিকা দিতে হবে হাসপাতালের ভেতরের ১১৬ নাম্বার রুমে।

কেউ কর্মস্থলে না গিয়ে ছুটি নিয়ে টিকা দিতে এসেও ব্যর্থ হয়ে টিকা না দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। লাইনের মধ্যে আগে-পরে যাওয়ার বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত তো রয়েছেই।

অনেকে টিকার আবেদন করেছেন চার-পাঁচ মাস হয়ে গেছে, আবার কেউ প্রথম ডোজ নিয়েছেন পাঁচ মাসেরও বেশি কিন্তু দ্বিতীয় ডোজের তারিখ পাচ্ছেন না। এমন সমস্যাসহ অনেক কারিগরী জটিলতা নিয়ে টিকা প্রত্যাশী মানুষ হাসপাতাল-সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাতের কক্ষের সামনে সামনে ঘুরছেন। প্রশ্ন অনেক কিন্তু কারো কাছেই কোনো জবাব নেই।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেডিকেল অফিসার ডা. শেখ মোস্তফা আলী।  তিনি তার কক্ষের সামনে এক এক নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছেন। যেখানে স্পষ্ট করে লেখা: কোভিড-১৯ এর টিকাদান সম্পর্কিত সমস্যার জন্য ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন। এবং পাশাপাশি তিনি ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য’ দিয়ে লিখেছেন, এর সাথে সিটি কর্পোরেশনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

অপরদিকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সিটি কর্পোরেশনকে তাদের হাসপাতালের কয়েকটি কক্ষ দিয়েছেন কোভিড-১৯ এর টিকাদানের জন্য। এছাড়া টিকা প্রদানের সঙ্গে তাদের আর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

২৭ টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত ৭২.৪৩ বর্গ কিলোমিটারেরর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সকল বাসিন্দাদের একটি মাত্র নির্ধারিত টিকা কেন্দ্র ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের এমন বিশৃঙ্খলায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে টিকা প্রত্যাশীদের।

নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে আকলিমাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় কথা হয় গার্মেন্টস কর্মী রেশমার সঙ্গে। তিনি বললেন, আমার বাড়ি মিজমিজি এলাকায়। এক নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমি। আমার মেয়ে স্কুলে টিকা দিতে পারে নাই। তাই ওর টিকার আবেদন করার পর আজকের ডেটে মেসেজ আসছে; তাই আইসিলাম টিকা দিতে। আর আমার বুস্টার ডোজের তারিখ গেছে গত ৩ তারিখে। কাজ করি বলে দিতে পারি নাই। আজকে গার্মেন্টসে যাই নাই। এবসেন্ট দিছি যার জন্য একহাজার টাকা বেতন থেকে কাটা যাইবো। এত কষ্ট করে এত দূর থেকে এসেও টিকা না নিয়া বাসায় যাইতাছি। এই হাসপাতালের যেনো কোনো বাবা-মা নাই। হাসপাতাল একটা জাহান্নামে পরিণত হইছে। যারা টিকা নিতে আসছি তারা যেনো জাহান্নামে নিক্ষেপ হইছি মনে হয়!

আশরাফ নামের এক দিনমজুর জানান, তিনি প্রথম ডোজ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দিলেও দ্বিতীয় ডোজের মেসেজ এখনো পাচ্ছেন না। এই সমস্যা নিয়ে তিনি সিটি কর্পোরেশনের মেডিকেল অফিসারের কক্ষে কয়েকবার যোগাযোগ করে ধমক খেয়েছেন। সেখানে থাকা লাল টি-শার্ট পড়া এক যুবকসহ কয়েকজন তার সমস্যার কথা বলায় চড়াও হয়েছেন। এরপর হাসপাতালে আসলে আবার হাসপাতালের লোকজন বলছেন যে সিটি কর্পোরেশনে যান।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের মেডিকেল আবাসিক অফিসার (আরএমও) ডা. এসকে ফরহাদ বলেন, ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা করে সম্পূর্ণ সিটি কর্পোরেশন, আমরা শুধু আমাদের ভেন্যু দিয়েছি। আর আমাদের জনবল দিয়ে সহযোগিতা করছি। টিকা সংক্রান্ত সকল তথ্য সিটি কর্পোরেশনের ভলেন্টিয়াররা আপডেট করে। এখন কোনো কারণে যদি কারো তথ্য আপডেট না হলে সেতো সিটি কর্পোরেশনের কাছেই যাবে। এখানে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের অফিসিয়াল দায়িত্ব নেই।

কয়েকবার সিটি কর্পোরেশনের মেডিকেল অফিসার ডা. শেখ মোস্তফা আলীর সাথে সাক্ষাৎ করতে তার কক্ষে গিয়েও না পেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এই টা তো ফোনে বলা যাবে না। সরাসরি আইসেন কথা বলবো। এখন লোকজন আছে ঘন্টাখানেক পর কল দেন।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন আবুল ফজল মো. মশিউর রহমান বলেন, ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল সেন্টারটি হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের। ভ্যাকসিন নেওয়ার এসএমএস পাঠায় সিটি কর্পোরেশন।  সিটি কর্পোরেশনকে আমরা সহযোগিতা করে থাকি। তবে তাদের দায়িত্ব তাদেরই।

Link copied!