দুই যুগে প্রায় অর্ধশত হামলা হয়েছে কাশ্মীরকে ঘিরে।
কাশ্মীর — এক ভূখণ্ড যেখানে প্রকৃতি অপার সৌন্দর্য বিলায়, আর অন্যদিকে, বহু দশক ধরে চলেছে রক্তাক্ত ইতিহাস। এই ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা রয়েছে নিষ্ঠুর সন্ত্রাসের গল্প। দুই যুগে কাশ্মীরে ছোট বড় বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। সর্বশেষ পহেলগাঁওয়ের বৈসরানে পর্যটকদের ওপর হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। চলুন জেনে নেই দুই যুগে কাশ্মীরে শীর্ষ ১০ টি হামলার ঘটনা।
২০০০ সালের ২১ মার্চ। কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার ছত্তিসিংপোড়া গ্রামে শিখদের ওপর হামলা করা হয়। সেই হামলায়নিহত হন ৩৬ জন। এই সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন ভারত সফরে ছিল। এই হামলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে দোষারপ করেন ভুক্তভোগীরা।
২০০০ সালের অগাস্টে নুনওয়ান বেসক্যাম্পে অমরনাথ যাত্রীদের উপরে হামলা যেখানে ১ ও ২ আগস্টে হামলায় ৮৯ জন প্রাণ হারায়। যদিও বেসরকারি হিসেবে সংখ্যাটা ছিল ১০৫।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর, জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা চত্বরে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ। যেখানে হামলাকারী সহ ৩৮ জন নিহত হয়।
২০০৩ সালের ২৩ মার্চ, পুলওয়ামার নন্দীমার্গে নিহত হন ২৪ জন কাশ্মীরি পণ্ডিত। ২০২২: বিবেক অগ্নিহোত্রী রচিত ও পরিচালিত হিন্দি সিনেমা `দ্য কাশ্মীর ফাইলস` -এর ক্লাইম্যাক্সে গণহত্যার উপর ভিত্তি করে একটি দৃশ্য দেখানো হয়েছে।
২০০৫ সালের ১৩ জুন, আবার সেই পুলওয়ামা — সরকারি স্কুলের সামনে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ যায় ১৮ জনের, আহত ১০০-রও বেশি।
২০০৬ সালের ২৬ মে শ্রীনগরের উপকণ্ঠে জাকুরার বাটাপোরা এলাকায় সন্ত্রাসীবাদীরা একটি পর্যটক বোঝাই বাসে গ্রেনেড ছুড়লে চার জন পর্যটক নিহত এবং ছ’জন আহত হয়েছিলেন। নিহতেরা ছিলেন গুজরাটের বাসিন্দা। ঘটনাচক্রে, সে সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী।
২০০৬ সালের কুলগাম গণহত্যা ছিল ১২ জুন ২০০৬ তারিখে কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার কুলগাম এলাকার ইয়ারিপোরার কাছে নয়জন নেপালি ও বিহারি শ্রমিক এবং একজন মুসলিম কাশ্মীরি ভারতীয় সেনাকে হত্যাকান্ডের শিকার হয়।
২০১৭ সালের ১১ জুলাই, দক্ষিণ কাশ্মীরের বোয়েতাং অঞ্চলে ফের হামলা। অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের বাসে গুলি — প্রাণ হারান ৭ জন। পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইও চলে।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের নিরাপত্তা কর্মীদের বহনকারী একটি গাড়ি বহর জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার লেথোপোড়া (অবন্তীপাড়ার কাছাকাছি) অতিক্রমকালে জম্মু শ্রীনগর জাতীয় সড়কে একটি বাহন-বাহিত আত্মঘাতী বোমা হামলার শিকার হয়। এই হামলার ফলে ৪০ জন কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বল (সিআরপিএফ) কর্মী এবং আক্রমণকারী মারা গিয়েছিলেন।
এবং অবশেষে, ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল — পহেলগাঁওয়ের বৈসরানে পর্যটকদের উপর বর্বরোচিত এলোপাথাড়ি গুলি। এই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন।
এই সমস্ত ঘটনা শুধু পরিসংখ্যান নয়। প্রতিটি মৃত্যুর পেছনে ছিল একটা পরিবার, একটা স্বপ্ন, একটা জীবন।কখনও সংখ্যালঘু, কখনও তীর্থযাত্রী, কখনও শিশু, সর্বশেষ পর্যটকদের ওপর হামলা করা হয়।