জুন ২৯, ২০২৫, ১২:০৯ পিএম
দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের দেশ সার্বিয়ায় আগাম নির্বাচনের দাবিতে এবং প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচের ১২ বছরের শাসনের অবসান চেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে।
শনিবার রাজধানী বেলগ্রেডে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে পুলিশ।
বিবিসি লিখেছে, এ কর্মসূচিতে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষের সমাগম হয়, নিকট অতীতে এত বড় জমায়েত দেখা যায়নি। ছাত্র নেতৃত্বাধীন এ আন্দোলন দেশটির ‘জনতাবাদী সরকারের’ ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। ‘আমরা নির্বাচন চাই!’- এই স্লোগানে মুখর ছিল জনতা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে দাঙ্গা পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছোড়ে এবং অনেক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে।
প্রেসিডেন্ট ভুচিচ অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন চাওয়া এই বিক্ষোভকারীরা ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ অংশ, যারা সার্বিয়াকে দখল করতে চায়।
তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, “তারা সার্বিয়াকে উৎখাত করতে চেয়েছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।”
বেলগ্রেডের হাই কোর্টের এক বিবৃতি অনুযায়ী, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে শুক্রবার পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের সংঘাতে জড়ানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে পুলিশমন্ত্রী বলেছেন, সংঘাতের জন্য যারা দায়ী, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধসহ সার্বিয়াজুড়ে মাসের পর মাস ধরে চলা এই বিক্ষোভে গলদঘর্ম হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভুচিচ। তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালে, একই বছর সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।
ছাত্রদের প্রতি সংহতি জানাতে উত্তরের শিদ শহর থেকে এসেছেন ৩৭ বছর বয়সী স্লাজানা লোজনোভিচ।
তিনি শনিবার রয়টার্সকে বলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলো দখল হয়ে গেছে... এবং প্রচুর দুর্নীতি হচ্ছে। নির্বাচনই সমাধান, কিন্তু আমার মনে হয় না তিনি (ভুচিচ) শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়বেন।”
ভুচিচ এর আগে আগাম নির্বাচন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। পার্লামেন্টের ২৫০টি আসনের মধ্যে ১৫৬টিই তার প্রগ্রেসিভ পার্টি নেতৃত্বাধীন জোটের।
বিরোধীদের অভিযোগ, ভুচিচ ও তার শরিকরা সংঘবদ্ধ অপরাধ, দুর্নীতি, বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন ও সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছেন। যদিও ক্ষমতাসীনরা সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
বিবিসি লিখেছে, ভুচিচ রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপ্রার্থী হলেও ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেনি।
গত বছরের ১ নভেম্বর নভি সাদ রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৬ জনের মৃত্যু হলে আন্দোলনে নামেন ছাত্র, বিরোধী রাজনীতিক, শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও কৃষকরা। ওই দুর্ঘটনার জন্য দুর্নীতিকে দায়ী করছেন বিক্ষোভকারীরা।
ঘটনার পর তখনকার প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুচেভিস পদত্যাগ করেন।
শনিবারের বিক্ষোভ শেষে আয়োজকরা এক বিবৃতি পাঠ করেন, যেখানে সার্বিয়দের ‘স্বাধীনতা নিজের হাতে তুলে নিতে’ আহ্বান জানানো হয়। দেওয়া হয় ‘সবুজ সংকেত’।
বিক্ষোভের পর আয়োজকরা এক বিবৃতিতে বলেন, “দাবি মেনে সংঘর্ষ এড়ানোর সব ব্যবস্থা ও সময় ছিল সরকারের হাতে। তার বদলে তারা জনগণের ওপর দমন-পীড়ন ও সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। এখন পরিস্থিতি যদি আরও চরমে পৌঁছায়, তার দায় একমাত্র সরকারের।”