ভারতের পাঠ্যবই থেকে সরিয়ে ফেলা হলো বাবরি মসজিদের ইতিহাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জুন ১৬, ২০২৪, ০৮:১৫ পিএম

ভারতের পাঠ্যবই থেকে সরিয়ে ফেলা হলো বাবরি মসজিদের ইতিহাস

বাবরি মসজিদ

ভারতের পাঠ্যবই থেকে বিতর্কিত বাবরি মসজিদের নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এনসিইআরটি) প্রকাশিত দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ে কিছু সংশোধন হচ্ছে বলে বহু আগেই খবর আসছিল। প্রকৃত অর্থে কী এবং কতখানি সংশোধন করা হচ্ছে- সেটা নিয়ে আগে ধারণা করা সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি প্রকাশ হওয়া বইটির নতুন সংস্করণ সামনে আসার পরই অযোধ্যার ইতিহাস সংশোধন করার খবর সামনে এসেছে। এই বইয়ের চার পাতা জুড়ে অগে অযোধ্যার ইতিহাস লেখা ছিল। এখন সেটাকে দুই পাতায় সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে এনসিইআরটি। ভারতের সিবিএসই বোর্ড এ্ববং কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেশটির আইসিএসই ও আইএসই বোর্ডও প্রতিষ্ঠানটির পাঠ্যক্রম মেনে চলে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ রীতিমতো বিতর্কের ঝড় তুলেছে বিরোধী মহলে।

গত সপ্তাহে বাজারে আসে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এনসিইআরটি) প্রকাশিত দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বই। এতে কোথাও বাবরি মসজিদের উল্লেখ করা নেই। শুধু মসজিদটিকে ‘তিন গম্বুজ সংবলিত নির্মাণ’ বলে জানানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, গুজরাটের সোমনাথ থেকে অযোধ্যার উদ্দেশে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রথযাত্রারও কোনও উল্লেখ করা হয়নি। বইটির পাঠ্যসূচিতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় করসেবকদের তাণ্ডবেরও উল্লেখ নেই। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধে, সেই ইতিহাসও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে সে সময় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়াসহ কোনো ঘটনাই বইটিতে রাখা হয়নি।

আগের এনসিইআরটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাবরি মসজিদ ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে। মুঘল সম্রাট জহিরউদ্দিন মুহম্মদ বাবরের সেনাপতি মীর বাকি এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু বইয়ের নতুন সংস্করণে কোথাও বাবরি মসজিদের নামই উল্লেখ করা হয়নি। নতুন সংস্করণে লেখা হয়েছে, ১৫২৮ সালে শ্রী রামের জন্মস্থানে ‘৩ গম্বুজ সংবলিত একটি নির্মাণ’ গড়ে তোলা হয়েছিল, যেখানে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন প্রতীকচিহ্ন দৃশ্যমান ছিল। কাঠামোর অভ্যন্তরে ও বাইরে হিন্দু সৌধের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায। বইয়ের আগের সংস্করণের বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও সংঘর্ষের উল্লেখ ছিল। তবে নতুন সংস্করণে লেখা হয়েছে, অযোধ্যা নিয়ে বিজেপির আফসোসের অন্ত ছিল না।

পুরনো সংস্করণে লেখা ছিলো, ফৈজাবাদ আদালতের নির্দেশে ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাবরি মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার পর দু’পক্ষেই গোলমাল দেখা দেয়। সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রা, সাম্প্রদায়িক অশান্তি, করসেবকদের উন্মাদনা, বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও দাঙ্গার উল্লেখ ছিল বইটিতে।

নতুন সংস্করণে লেখা হয়েছে, শ্রী রামের জন্মভূমিতে মন্দির ভেঙে ৩ গম্বুজ সম্বলিত নির্মাণটি দাঁড় করানো হয় বলে বিশ্বাস জন্মে। মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরও এগোয়নি নির্মাণের কাজ। ফলে হিন্দুদের মনে ধারণা জন্মায়, রাম জন্মভূমি নিয়ে তাদের আবেগকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। অন্যদিকে মুসলিমরা গোটা কাঠামোর ওপর দখলদারি চেয়ে দাবি জানায়। তা নিয়ে দু’পক্ষেই উত্তেজনা বাড়ে; শুরু হয় আইনি টানাপোড়েন। দীর্ঘদিনের এই বিবাদের নিষ্পত্তি চেয়েছিল দু’পক্ষই। ১৯৯২ সালে মসজিদের কাঠামোটি ধ্বংসের পর সমালোচকদের একাংশের মনে হয়েছিল, ভারতীয় গণতন্ত্রের নৈতিকতাই ঝুঁকির সম্মুখীন।

২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা বিবাদ নিয়ে যে রায় তার উল্লেখ রয়েছে নতুন সংস্করণের বইয়ে। ওই অংশে লেখা রয়েছে, বহুধর্ম ও বহু সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক সমাজে এই ধরনের বিবাদের ক্ষেত্রে সাধারণত আইনি পথেই সমাধান বের হয়। আদালত যেভাবে বিতর্কিত স্থানটি রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের হাতে তুলে দেয় এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে মসজিদ নির্মাণের জন্য অন্যত্র জায়গা বরাদ্দের নির্দেশ দেয়, তাতে ভারতীয় সংবিধানের সম্মান রক্ষা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সমাজের বেশির ভাগ লোক সাদরে গ্রহণ করেছে। স্পর্শকাতর একটি বিষয়কে কীভাবে দু’পক্ষের সম্মতিক্রমে গণতান্ত্রিকভাবে সমাধান করা যায়, তার ধ্রুপদী উদাহরণ হলো অযোধ্যার রায়।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Link copied!