গাজায় একটি স্কুলে ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনায় অন্তত ১৬ জন নিহত এবং আরও ডজনখানেক আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার (৬ জুলাই) মধ্যরাতে আল জাউনি স্কুলে হামলায় কাঠামোতে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন ‘সন্ত্রাসীকে’ আঘাত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এই হামলাকে ‘নিরস্ত্র বেসামরিক লোকের ওপর’ চালানো ‘বর্বর হত্যাযজ্ঞ’ হিসেবে দেখছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সেখানে মধ্য গাজার আল নুসেইরাত শরণার্থী শিবির থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া হাজারো শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ধূলাবালি ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ওই এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুরা চিৎকার করছে। তারা সবাই আহতদের সাহায্য করতে দৌঁড়াচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ব্যস্ততম একটি বাজারের কাছাকাছি থাকা স্কুলটির ওপরের তলাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। হামলার আগে ভবনটিকে প্রায় ৭ হাজার শরণার্থী আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে একজন নারী জানান, ওই ভবনে হামলার সময় বেশ কয়েকজন শিশু কোরআন পাঠ করছিল। ওই অবস্থায়ই তাদের মৃত্যু হয়। এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো কোনো সতর্কতা ছাড়াই স্কুলটিকে লক্ষ্যবস্তু করল ইসরায়েল। একটি স্থানীয় সূত্র জানায়, স্কুলটির একটি কক্ষকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
এর আগে জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম ও পুনর্গঠন বিষয়ক সমন্বয়ক সিগরিদ কাগ জানান, গাজা যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ৯০ শতাংশ বেসামরিক লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত ৪ জুলাই নিউ ইয়র্কে রাশিয়া আয়োজিত নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষে গাজার মানবিক পরিস্থিতি তুলে ধরে এই তথ্য জানান তিনি। সিগরিদ কাগ জানান, গাজায় বাস্তুচ্যুতের এই সংখ্যা প্রায় ১৯ লাখ।
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, “ফিলিস্তিনের জনগণ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি বলতে কিছু নেই। জীবন সেখানে বিপন্ন। যুদ্ধ সেখানে শুধু মানবিক সংকটই তৈরি করেনি ব্যাপক আকারে মানবিক দুর্দশাও ডেকে এনেছে। নতুন করে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের বেসামরিক লোকজনকে সরে যেতে ইসরায়েলের দেওয়া নতুন নির্দেশনায় আমি অনেকটাই উদ্বিগ্ন।”
গত ৩ জুলাই হামলা জোরদারের অভিপ্রায়ে গাজার খান ইউনিস শহর থেকে বেসামরিক লোকদের কাছে সরে যাওয়ার নির্দেশ আসে। এর ফলে আড়াই লাখ ফিলিস্তিনি আবার নতুন করে বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সিগরিদ কাগ। বলেছিলেন, ইসরায়েলের হামলার কারণে বারবার গাজাবাসী তাদের আবাসস্থল বদলে বাধ্য হচ্ছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের নজিরবিহীন হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। একই দিন দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসেন হামাস যোদ্ধারা। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
টানা ৯ মাস ধরে উপত্যাকাটিতে দেশটির অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত দেশটির অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৯৮ জনে উন্নীত হয়েছে। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে সেখানকার লোকজনের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। যুদ্ধবিরতির আশায় সম্প্রতি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বেশ কয়েকবার মধ্যস্থতার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের নাকচ করে দেওয়ার কারণে সেসব ব্যর্থ হয়েছে। জিম্মি মুক্তির জন্য চুক্তি করতে আগামী সপ্তাহে তারা মধ্যস্থতাকারী পাঠানোর আশ্বাসও দিয়েছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে ইসরায়েল।
গতকাল শনিবার হামাসের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছে তারা। উভয়পক্ষ এই প্রস্তাবে রাজি হলে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হবে।
সূত্র: বিবিসি