পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ভারী বর্ষণজনিত বন্যা ও ভূমিধসে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পার্বত্য প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কমপক্ষে ৭৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং উদ্ধার অভিযানের সময় একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে তাতে থাকা পাঁচ ক্রু সদস্য নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ৯ জন এবং উত্তরের গিলগিট-বালতিস্তানে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করে জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে, এবং বেশ কয়েকটি এলাকাকে দুর্যোগপ্রবণ ঘোষণা করা হয়েছে।
বুনের জেলার একজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি, আজিজুল্লাহ, এএফপি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “আমি একটি প্রচণ্ড শব্দ শুনি, যেন পাহাড় ধসে পড়ছে। বাইরে ছুটে গিয়ে দেখি পুরো এলাকা কাঁপছে, মনে হচ্ছিল যেন কিয়ামতের দিন। পানির তোড়ে মাটি কাঁপছিল, মনে হয়েছিল মৃত্যু আমার সামনে দাঁড়িয়ে।”
খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গদাপুর জানান, খারাপ আবহাওয়ার কারণে এম-১৭ হেলিকপ্টারটি আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী বাজাউর জেলার উদ্দেশে যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত হয়। বাজাউরে এএফপি’র ছবিতে দেখা গেছে, কাদায় ঢাকা পাহাড়ে একটি এক্সকাভেটর পরিষ্কার করছে, আর পাশে নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রদেশটি একদিনের শোক ঘোষণা করেছে।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে, শুক্রবার একটি হিমালয়ান গ্রামে বন্যার পর কাদা ও ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকারীরা অন্তত ৬০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে, এবং আরও কয়েক ডজন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মৌসুমি বৃষ্টি দক্ষিণ এশিয়ার বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রায় তিন-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী। ভূমিধস ও বন্যা এই সময়ে সাধারণ, এবং এ বছরের বর্ষায় ইতিমধ্যে ৩০০-এর বেশি প্রাণহানি ঘটেছে।
জুলাই মাসে, পাকিস্তানের প্রায় ২৫৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার অর্ধেকের বাসস্থান পাঞ্জাবে গত বছরের তুলনায় ৭৩% বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত বর্ষার তুলনায় বেশি মৃত্যুর কারণ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়ার ঘটনা আরও তীব্র হচ্ছে, ফলে বন্যা ও ভূমিধস আরও ঘন ঘন এবং মারাত্মক হয়ে উঠছে।