আঞ্চলিক যুদ্ধ কিংবা বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও চিফ অব স্টাফ হার্জি হালেভির বিরুদ্ধে জনসাধারণকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আইজ্যাক ব্রিক।
ইসরায়েলি সংবাদপত্র মারিভে এক নিবন্ধে তিনি লেখেন, “আমাদের দেশের (ইসরায়েল) নেতৃত্ব এখন পাগলের রাজ্যে পরিণত হয়েছে এবং তাদের সিদ্ধান্তগুলো আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে শুরু করেছে। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে যুদ্ধাবস্থা জারি রাখার মধ্য দিয়ে এই তিনজন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছেন এবং দেশের জনসাধারণের ওপর এই অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের কাণ্ডজ্ঞান লোপ পেয়েছে।”
নিবন্ধে তিনি লেখেন, “আট মাস ধরে গাজায় যে যুদ্ধ চলছে, এই তিনজন এরই মধ্যে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। সেই সঙ্গে ইসরায়েলকে ধ্বংসের অভিপ্রায় নিয়েও এগোচ্ছেন। আমরা আমাদের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের চাবিকাঠি আর তাদের হাতে রাখতে পারি না। আমরা যদি সুন্দরভাবে এই বসুধায় বেঁচে থাকতে চাই তাহলে এই তিন নেতার ওপর আস্থা রাখা সমীচীন হবে না। কারণ তাদের হাতে আমরা নিরাপদ নই।”
নেতানিয়াহু, গ্যালান্ট ও হালেভির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে অবসরপ্রাপ্ত এই জেনারেল যুক্তি দেখান, গাজায় যুদ্ধের লাগাম টেনে ধরছেন না। মাতাল গাড়োয়ানের মতো সর্বাবস্থায় সীমালঙ্ঘন করেই যাচ্ছেন তারা। নিবন্ধে তিনি উপস্থাপন করেন, সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি দূতাবা ব্যালেস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢেলেছেন তারা। যে কারণে ইরানের সঙ্গে আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। এমনকি সেটা বিশ্বযুদ্ধেও রূপান্তর হতে পারে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ২২ জন গ্রেপ্তার
গত ২৪ ঘণ্টায় অধিকৃত পশ্চিম তীরে ২২ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বিষয়টি ফিলিস্তিনি কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। গত ৭ অক্টোবর গাজায় অভিযান শুরুর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে ৯ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরে অবস্থানরত আল জাজিরার সংবাদদাতা নিদা ইব্রাহিম জানান, ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনিদের ভয় দেখাতে এই অভিযান পরিচালনা করছে। গ্রেপ্তার হওয়ার এসব ফিলিস্তিনির ওপর চালানো হচ্ছে বর্বরোচিত ও পাশবিক অত্যাচার।
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার হওয়ার এসব ফিলিস্তিনিকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা কিংবা গরম পরিবেশে তাদেরকে রাখা হচ্ছে এবং হয়রানি শেষে তাদের বলা হচ্ছে, তোমাদের ওপর আমাদের কিছুই নেই।”
এর আগে গতকাল সোমবার ৫৫ জন ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েলিরা। তাদের মধ্য থেকে একজন ফারাজ আল শামৌনি (৫৫) আল জাজিরাকে বন্দী থাকাবস্থায় ইসরায়েলি বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে এবং উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বলেছেন, “আমি চাই না আর কোনও ফিলিস্তিনিকে যেন এমন ইন্টারোগেশনের মুখোমুখি হতে না হয়। আমাদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করেছেন। আমাদের ওপর যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে আমাদের। যেখানে আমাদের বন্দী করে রাখা হয়েছিল, সেখানকার অবস্থা অবর্ণনীয়।”
৮ হাজার ৬৭২ জন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে হত্যা
গাজায় অভিযান শুরুর পর থেকে গাজায় ৮ হাজার ৫৭২ জন এবং পশ্চিম তীরে ১০০ জন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, গাজা ও পশ্চিম তীরে অন্তত ৪৯৭ জন শিক্ষককে হত্যা করেছে ইসরায়েলিরা। এছাড়া ৩৫০টিরও বেশি সরকারি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতিসংঘের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সংস্থা পরিচারিত ৬৫টি স্কুল ভবনে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। গাজায় ৬ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারছেন না। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পড়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে হামাস। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। টানা ৯ মাস ধরে উপত্যাকাটিতে দেশটির অভিযান চলছে। এখনও পর্যন্ত দেশটির অভিযানে গাজায় ৩৭ হাজার ৯২৫ জন নিহত এবং ৮৭ হাজার ১৪১ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে সেখানকার লোকজনের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে এরই মধ্যে ইসরায়েল গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা