জুলাই ১২, ২০২৪, ০৮:৩৫ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই সরে দাঁড়ানোর জন্য খোদ ডেমোক্র্যাটদের চাপের মুখে ভুল করে বসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৮১ বছর বয়সের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) স্থানীয় সময় রাতে ন্যাটো সম্মেলনউত্তর সংবাদ সম্মেলনেই একের পর এক ভুল করে এখন তার লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নাম গুলিয়ে ফেলেন তিনি। জেলেনস্কিকে তিনি মুখ ফসকে ডেকেছেন ‘পুতিন’ নামে।
এখানেই থেমে যাননি জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্থলে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম উচ্চারণ করতে শোনা গেছে তাকে। সংবাদ সম্মেলনে এত ভুল করার পরও নির্বাচনী লড়াই করতে বদ্ধপরিকর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) স্থানীয় সময় রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ৭৫তম সম্মেলন শেষে একক সংবাদ সম্মেলনে এই বার্তা দেন তিনি।
ঘণ্টাব্যাপী এই সংবাদ সম্মেলনে বয়স নিয়ে অন্যান্য ডেমোক্র্যাটদের উদ্বেগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বাচনে লড়ার দৃঢ় বার্তা দিয়েছেন বাইডেন। নিজেকে সুস্থ দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে পরাজিত করার জন্য আমিই সেরা প্রার্থী।” এ সময় তার নিজের রাজনৈতিক জীবন, পুনর্নির্বাচিতের আশা, প্রেসিডেন্সি, পররাষ্ট্র নীতি, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ইস্যু ও গাজা যুদ্ধসহ আরও নানা বিষয় উঠে এসেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও মিনিটখানেক কথা বলেন জো বাইডেন। সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনকে রাশিয়ার হামলা থেকে সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরার পর পরই জেলেনস্কিকে ‘পুতিন’ ডেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল করে বসেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বলতে শোনা যায়, “আমি এবার মঞ্চ ছেড়ে দিতে চাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে। যার আছে সাহস, আছে কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা। আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে স্বাগত জানাচ্ছি।” অবশ্য পরক্ষণেই নিজেকে শুধরে নেন বাইডেন। বলেন, “জেলেনস্কি পুতিনকে হারাবেন।”
সংবাদ সম্মেলনে জো বাইডেনকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ওপর তার আস্থা রয়েছে কিনা। জবাবে মুখ ফসকে তিনি বলেন, “দেখুন, আমি ট্রাম্পকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করতামই না, যদি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য না হতেন তিনি।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে জো বাইডেনের বয়স নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। খোদ ডেমোক্র্যাটরাই এখন বাইডেনের সমালোচনা করছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিভিশনে নির্বাচনী বিতর্কে শোচনীয় পরাজয়ের পর পরই যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে লড়তে পারবেন কিনা- সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
কাঁপা কাঁপা গলায় বিতর্ক শুরু, বক্তব্যের মধ্যে খেই হারিয়ে ফেলাকে কেন্দ্র করে ডেমোক্র্যাটরা প্রার্থী বদলের প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অশীতিপর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতা করা থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু বাইডেন জোর গলায় বলে আসছেন, শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ নন। নির্বাচনে লড়বেন তিনি এবং ট্রাম্পকে হারাবেন তিনি।
ন্যাটো সম্মেলনউত্তর সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে ‘স্নায়বিকভাবে সুস্থ’ দাবি করে তিনি বলেন, “আমার কোনও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। কারণ আমি যদি দুই বা সাতজন চিকিৎসকও দেখাই তারপরও আমার সমালোচকরা সন্তুষ্ট হবেন না।”
সূত্র: বিবিসি