পাকিস্তানে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ ভেঙে্ দেওয়ার পর আজ সোমবার দেশটির অষ্টম তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আজ সোমবার শপথ নেবেন আনোয়ার উল হক কাকার। বেলুচিস্তানে শিক্ষকতা দিয়ে চাকরিজীবন শুরু করার পর রাজনীতিতে প্রবেশ করে বেলুচিস্তানের আওয়ামী পার্টির (বিএপি) এই সিনেটর এখন নেতৃত্ব দিবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের।
রাজনৈতিক মহলে কাকার সেনাবাহিনীর বিশ্বস্ত অনুচর হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালেই তা নিজ চোখে দেখেছে পাকিস্তানের জনগণ। তখন থেকেই দেশটির রাজনীতিতে মৃদু গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে- কাকার ক্যান্টনমেন্টের বন্ধু। সেনাবাহিনীর সঙ্গে গভীর সখ্য আছে তার। কাকার অন্তর্বর্তী প্রধান হওয়া মানে পক্ষান্তরে সেনাবাহিনীই এখন পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার-এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সাথে আনোয়ার উল কাকার। সংগৃহীত ছবি
একসময় নওয়াজ শরিফের দলে ছিলেন কাকার। পরে বনিবনা না হওয়ায় নওয়াজের দলও ছেড়ে আসেন কাকার। গত রবিবার এমন ইঙ্গিতই দেওয়া হয়েছে ইসলামাবাদ ভিত্তিক দেশটির স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে।
শাহবাজ শরিফের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়ে পাকিস্তান মুসলিম লীগে যোগ দেওয়ার জন্য লন্ডনে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কাকার। চলতি বছরের জুন মাসে নওয়াজকন্যা মরিয়ম নেওয়াজের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। তারপরই হুট করে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ক্ষমতায় আসার আগে তার সঙ্গেও বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কাকারের।
তবে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই তার সাথে জড়িয়ে পড়েন বিরোধে। একসময়ের ঘনিষ্ট বন্ধুকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যে মেতে ওঠেন। । পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ক্ষমতায় এলেও পাকিস্তানের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারবে না- এমন মন্তব্যও করেন তিনি। এমনটি পিটিআই কর্মীদের সামরিক আদালতে বিচারেরও দাবি তোলেন তিনি।
এদিকে, কাকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসাবে আলোচনায় আসার পরপরই আসছে জাতীয় নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পাকিস্তানের ডনসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলঅ হয়, তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণ হলো দেশের সেনাবাহিনীর প্রতি তার সমর্থন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে ছয় বছর আগেই এই বীজ বুনেছেন তিনি। ২০১৭ সালে তিনি সেনাবাহিনীর প্রেসক্রিপশনে বেলুচিস্তানে তার নিজের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন এবং প্রতিপক্ষ আব্দুল কুদৌস বিজেঞ্জোকে সমর্থন করেন।
আব্দুল কুদৌস বিজেঞ্জো ছয় মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কাকার ছিলেন মন্ত্রিসভায় তথ্য উপদেষ্টা। আনোয়ার উল হক কাকার ২০১৮ সালের মার্চে পিএমএল-এন-এর সমর্থনে স্বতন্ত্র হিসাবে ছয় বছরের জন্য সিনেটর নির্বাচিত হন। কিন্তু একই মাসে তিনি পিএমএল-এন থেকে দলত্যাগকারীদের একটি দলের অংশ হয়েছিলেন, যারা পরে বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
অপরদিকে, কাকারকে নিয়ে খোদ সমালোচনা করছেন বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টির (বিএনপি-এম) চেয়ারম্যান আখতার মঙ্গল। তিনি কাকারের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে নওয়াজ শরিফকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি এমন একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন যার মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক রাস্তা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।’ তিনি আরও দাবি করেছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত তার দল এবং পাকিস্তানের মধ্যে আরও দূরত্ব তৈরি করবে।”
কে এই আনোয়ার উল হক কাকার? : বেলুচিস্তানে শিক্ষকতা দিয়ে চাকরিজীবন শুরু করে আনোয়ার উল হক কাকার। এরপর ২০০৮ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএলকিউ) দলের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। পরবর্তীতে নওয়াজ শরিফের দলের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সানাউল্লাহ জেহরির মুখপাত্র হিসাবে তিন বছর কাজ করেন। ২০১৮ সালে জেহরিকে পদত্যাগে বাধ্য করে ৬ বছরের জন্য সিনেটর নির্বাচিত হন। আনোয়ার উল হক কাকার পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের বেলুচি আওয়ামী পার্টির (বিএপি) সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি মানবসম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত সিনেটের স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন। ব্যবসা উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, অর্থ ও রাজস্ব, পররাষ্ট্র এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সদস্য হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি।