আল জাজিরার প্রতিবেদন

বাংলাদেশে নতুন নির্বাসন: সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দলের ছাত্ররা এখন আত্মগোপনে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ২৭, ২০২৪, ০৫:৫০ পিএম

বাংলাদেশে নতুন নির্বাসন: সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দলের ছাত্ররা এখন আত্মগোপনে

কিছুদিন আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তীর্ণ ক্যাম্পাসের প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন ফাহমি (ছদ্মনাম)। কিন্তু আগস্টের শুরু থেকেই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। 

ফাহমি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য; এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত ও দেশত্যাগে বাধ্য করার আগে, টানা ১৫ বছরেরও বেশি সময় লৌহ মুষ্টিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি শাসন করেছেন; আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনের পর প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেন তিনি।

বুধবার নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের সহিংসতা, হয়রানিসহ গুরুতর অসদাচরণের ইতিহাস রয়েছে।

ফলিত রসায়নের স্নাতকের শিক্ষার্থী ফাহমি আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘খুব বেশিদিন আগে না, আমি এখানে ছিলাম কর্তৃত্বের কণ্ঠস্বর হিসেবে। কিন্তু, এখন আমি পলাতক হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি, যার সম্ভাব্য কোনো ভবিষ্যৎ নেই।’ 

ফাহমির গল্পটি হাজার হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিচ্ছবি হয়ে ভেসে উঠেছে, যারা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; বাংলাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে তাদের শক্তিশালী দখল রাতারাতি ভেঙে পড়েছে। রাজপথে আওয়ামী লীগের পেশি শক্তি হিসেবে পরিচিতি সাবেক ক্ষমতাধরেরা, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জনপ্রিয় বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা এবং ক্ষমতায় থাকাকালীন নানা অভিযোগের কারণে এখন হিংসামূলক প্রতিশোধ, নিধন এমনকি কারাবাসের মুখোমুখি হচ্ছেন।

ফাহমি আল জাজিরাকে বলেছেন যে, তিনি শেখ হাসিনাবিরোধী বিক্ষোভের সময় জনগণের বিরুদ্ধে সরকারের মারাত্মক দমন-পীড়নে সরাসরি অংশগ্রহণ নেননি। বলেন, ‘আমার বোনেরা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলো। তাদের অংশগ্রহণের যুক্তি আমিও বিশ্বাস করতাম; কিন্তু দলীয় বাধ্যবাধকতার কারণে আটকা পড়েছিলাম।

সরকারি চাকরিতে বিতর্কিত কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে জুলাই মাসে প্রাণঘাতি বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি ছিলো, এই সংরক্ষণ পদ্ধতি সরকারদলীয়দের সুবিধা দেয়। যদিও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কোটা বাতিল করে দেয়; কিন্তু দ্রুত এই বিক্ষোভ শেখ হাসিনার ‘স্বৈরাচারী’ শাসনকে অপসারণের আহ্বানে রূপান্তরিত হয় এবং ব্যাপক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। 

সরকারের অবস্থানে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রক্তাক্ত অধ্যায়গুলির মধ্যে একটিতে রূপ নেয়। কারণ, নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের মারধর ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং গুলি চালায়। তিন সপ্তাহে এক হাজারের বেশি নিহত এবং আরও কয়েক হাজার মানুষ গ্রেপ্তার হয়। 

গত পাঁচ আগস্ট ৭৭ বছর বছর বয়সী শেখ হাসিনা একটি সামরিক হেলিকপ্টারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেন। তার বাসভবন, সংসদ ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনাগুলো গুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। 

কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের সাথে সহিংসতার সমাপ্তি ঘটেনি। এতোদিন ক্ষমতায় যারা ছিলেন, তারা এবার আক্রমণের নিশানার নতুন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ, সমর্থক ও শিক্ষার্থীসহ শতশত জনকে আক্রমণ বা হত্যা করা হয়। অনেকে আত্মগোপনে চলে যান, পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময়ও আটক হয়েছেন অনেকেই। 

ফাহমি বলেন, বিক্ষোভকারীরা ঢাকা থেকে ১৭৩ কিলোমিটার দুরে নোয়াখালী জেলায় আমাদের পরিবারের বাড়ি এবং কোল্ড স্টোরেজে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার অবস্থান প্রকাশ না করলে, ছোট ভাইকে নিখোঁজ করার হুমকি দেয়। 

যদিও এখন পর্যন্ত তারা ফাহমির ভাইকে নিখোঁজ করে দেয়নি। তবে সে যে মাদ্রাসায় পড়ে, সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। 

ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে ফাহমি বলেন, আমি ভালো ছাত্র ছিলাম। রাজনীতি নিয়ে খুব কমই চিন্তা করতাম। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের রাজনীতি এড়িয়ে যাওয়ার উপায় ছিলো না, এটা ছিলো অনিবার্য। হয় আপনি যোগ দেবেন, নয়তো ভুক্তভোগী হবেন। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা আরও উজ্জল হবে।

‘সংকুচিত চাকরির বাজারে এটি একটি আকর্ষণীয় প্রণোদনাও। দুই বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর মা, দুই বোন ও ছোট ভাইয়ের প্রতি দায়িত্ব বেড়ে গেছে,’ যোগ করেন তিনি।

সংকটে হাজার হাজার

ফাহমির ঘটনাটাই একমাত্র নয়। আওয়ামী লীগের হিসাবে, সারাদেশে তাদের ছাত্র উইংয়ের ৫০ হাজারের মতো সদস্য কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে এবং তারা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া নিয়ে অগ্নি পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে। 

ফাইনাল টার্ম পরীক্ষায় বসতে গিয়ে গত ১৮ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেত্রী শাহরিন আরিয়ানা। পরিবারের দাবি তাকে ভুয়া অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রলীগ নেতা সৈকত রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অবশ্য পুলিশ দাবি করেছে যে, এই দুজনই আগের মামলার মুখোমুখি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ দেখাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তারা। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবুর রহমান আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘অন্যান্য শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় ছাত্রলীগের কোনো নেতার সঙ্গে বসতে রাজি হয়নি। যে কোনো ধরনের মব জাস্টিস এড়াতে আরিয়ানা ও রায়হানকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিলো। আমরা হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো। 

গত ২৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সময় আরও দুই ছাত্রলীগ নেতা, ফিনান্স বিভাগের আবুল হাসান সাইদী এবং নৃবিজ্ঞানের কাজী শিহাব উদ্দিন তৈমুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং সেই অনুযায়ীই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগবিরোধী সহিংসতার ঢেউ এসে পড়েছে দলটির ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর উপকণ্ঠে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে সাত সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে হত্যা করা হয় আরেক ছাত্রলীগ নেতা মাসুদকে। 

‘মাত্র এ ঘটনাগুলো সামনে এসেছে,’ আল জাজিরাকে বলেছেন রেদওয়ানুল করিম সাগর নামের ছাত্রলীগের একজন সিনিয়র নেতা। তিনি সুজন নামেই বেশি পরিচিত, এখন রয়েছেন আত্মগোপনে। প্রায় ছয় ফুট লম্বা সুজনের পরনে ছিল একটি চূর্ণবিচূর্ণ কালো শার্ট এবং চাপাবিহীন প্যান্ট, তার চুল ছাঁটা ছিল না।

আল জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি বারবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, এ বৈঠক সম্পর্কে অন্য কেউ জানেন কিনা। তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ অনেক বানোয়াট মামলা রয়েছে। প্রায় মামলাই এমন অঞ্চলে হয়েছে, যেখানে আমরা কখনও যাইনি। 

শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ২৩ অক্টোবর একটি গেজেট জারি করে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ নামে এমন একটি আইনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যেটি করা হয়েছিলো হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই। 

জুলাইয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অন্যান্য গ্রুপ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানোর পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। 

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি তোলাদের একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, ছাত্রলীগ বাংলাদেশে সংগঠন চালাতে পারবে না। দেশব্যাপী তাদের সব নেতাকর্মীকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।

ছাত্রলীগের নেতৃত্বে গত ১৫ জুলাই আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে, যে মামলায় তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩৯১ জনকে নাম উল্লেখ করে এবং আরও এক হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। 

ছাত্র লীগ নিষিদ্ধ করার পর ঢাকায় অন্তত ১০ জন নেতা এবং সারাদেশে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের বিষয় আল জাজিরাকে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই গ্রেপ্তারের প্রায় সবই করা হয়েছে জুলাইয়ের বিক্ষোভের ঘটনায় দায়ের করা মামলায়। কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নয়; সন্দেহভাজন হিসেবে এবং মূলত ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

সুজন নামের সেই ছাত্রলীগ নেতা আল জাজিরাকে বলেছেন, তিনি এখন গোপন অবস্থানে থাকছেন। গত ২১ অক্টোবর আল জাজিরার টিম একটি নির্জন রাস্তার ধারে, খালের উপরে কাঠ ও বাঁশের তৈরি একটি ছোট ক্যাফেতে দেখা সুজনের সঙ্গে দেখা করে। এটি এমন একটি জায়গা, যার আশেপাশে কোনো বসতি নেই এবং রাস্তা দিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোও খুব একটা সেখানে থামে না। 

আল জাজিরার দলটি সুজনের সঙ্গে অল্প আলো থাকা একটি কোণার দিকে বেঞ্চে বসে। সুজন জানালার দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিচ্ছিল। তার চোখে ছিলো উদ্বেগের ছাপ। এমন সময় যাত্রীদের পানি নেয়ার জন্য দুটি গাড়ি সেখানে কিছুক্ষণের জন্য থামে। একজন চওড়া কাঁধওয়ালা লোক বেরিয়ে আসার সাথে সাথে সুজনের মুখ উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণের জন্য তার কণ্ঠস্বর থেমে যায়। 

এরপর আবার বলতে শুরু করেন, ‘আমি এমন এক প্রজন্মে বড় হয়েছি, যারা শুধু আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখেছে। তাদের সহযোগী হওয়াই ছিলো আমার একমাত্র বিকল্প। 

সুজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ফাইনাল পরীক্ষার আগেই আগস্টের অভ্যুত্থান তাকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করে। 
বর্তমানে ভারতে নির্বাসিত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছেন।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, এই সরকার বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দাবি করছে। কিন্তু হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।
তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, আনুমানিক এক লাখ সদস্যবিশিষ্ট দেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার পরিণতি বহন করতে হতে পারে সমগ্র বাংলাদেশকে। 

‘কীভাবে ড. ইউনূস বাংলাদেশের তরুণদের উল্লেখযোগ্য অংশকে বাদ দিয়ে একটি ভালো ভবিষ্যৎ গড়ার আশা করতে পারেন,’ প্রশ্ন করেন তিনি। একইসঙ্গে খালিদ মাহমুদ জোর দিয়ে বলেন, তার দল সবসময় সদস্যদের প্রতি অনুগত থাকে। যখন সঠিক সময় হবে, আমরা তাদের (ছাত্রদের) অধিকারের জন্য লড়াই করবো এবং নির্ভয়ে তাদের শিক্ষা শেষ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। 

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করলে সরকার কি পারবে অপসারণ করতে?

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপপ্রেস সচিব আজাদ মজুমদার আল জাজিরাকে বলেন, প্রত্যেকে নিয়মিত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে যোগদানের জন্য স্বাধীন, যদি না তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ থাকে।

তবে মব জাস্টিসের সহিংসতা থেকে ছাত্রদের এবং নির্বিচার গ্রেপ্তার এড়াতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার যোগ করার কিছু নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের আধিপত্যের সময় ক্যাম্পাসে যে সহিংসতা ছিলো সাধারণ ঘটনা, নতুন বাংলাদেশে তার পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিত নয়। সহিংসতার সম্মুখীন না হয়ে সব শিক্ষার্থী যাতে স্নাতক করতে পারেন, তা নিশ্চিত করাই কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য।

ভাগ্যের উলটাপালটা

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে লৌহ মুষ্টিতে ক্যাম্পাস দখলে রেখে শাসন করেছে ছাত্রলীগ। সে সময় সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল উপস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম হলেও, প্রায় সময়ই ছিলো রক্ষণাত্মক ভূমিকায়। আর জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জোরপূর্বক আন্ডারগ্রাউন্ড করা হয়।

১৬ বছরের বেশি সময় ধরে অসংখ্য মিডিয়া রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে, শিবিরের সাথে সম্পর্ক থাকার সন্দেহে ছাত্রলীগের সদস্যরা অনেক ছাত্রকে ক্যাম্পাস থেকে জোরপূর্বক বের করে দিয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে বা এমনকি নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার একই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিলো, যা এখন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। ড. ইউনূসের সরকার শিবিরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। 

কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম প্রকাশ্যে আনা হয়েছে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি। ঢাবির শিবির সভাপতি আবু সাদিক কায়েম বলেন, ছাত্রলীগ আধুনিক দাস ব্যবস্থা তৈরি করেছে। হলে সিট পেতে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে হতো। বিরোধিতাকারীরা জীবন্ত অগ্নিকুণ্ডের সম্মুখীন হয়। কেউ বেঁচে থাকার জন্য, কেউবা ব্যক্তিগত লাভের জন্য যোগ দিয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনটি পড়ুন: Bangladesh’s new outcasts: Students from ex-PM Hasina’s party now in hiding

Link copied!