ক্যাশ্যপ প্যাটেলের বয়স মাত্র ৪৪ বছর। তবে এরি মধ্যে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন বারবার। এই তরুণ তুর্কি মার্কিন মুলুকে পরিচিত ক্যাশ প্যাটেল নামে। সেখানে তাকে নিয়ে, আলোচনা-চর্চার শেষ নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বার বিজয়ী করতে, বিশাল ভূমিকা রেখেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্যাশ। তাই ট্রাম্পও তাকে দিতে চান উপযুক্ত প্রতিদান।
ট্রাম্প নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরই, জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে যে, মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর প্রধান হচ্ছেন ক্যাশ। তবে সেই জল্পনা শেষমেষ সত্য হয়নি। কিন্তু ক্যাশ প্যাটেল যে বড় দায়িত্ব পাচ্ছেন, এটা জানেন সবাই। এবার প্রায় নিশ্চিত যে, মার্কিন ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা- এববিআইয়ের শীর্ষকর্তা হচ্ছেন ক্যাশ প্যাটেল।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাশ প্যাটেলকেই এফবিআইয়ের পরিচালক বা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরি মধ্যে এফবিআইয়ের পরিচালক ক্রিস্টোফার ওয়েকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ক্রিস্টোফারের ১০ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। আর ক্যাশ প্যাটেলকে এফবিআইয়ে প্রধান করার জন্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প ডানপণ্থীদের মাধ্যমে চাপও অব্যাহত রাখার কৌশল অবলম্বন করেছেন।
তরুণ ক্যাশ প্যাটেলের ঝুড়িতে রয়েছে অনেক সাফল্যের গল্প। তবে কীভাবে তিনি সাফল্যের এতোটা লম্বা পথ পাড়ি দিলেন? ক্যাশ্যপ প্যাটেলের আদি বাড়ি ভারতের গুজরাটে। তার বাবা-মা বড় হয়েছেন পূর্ব আফ্রিকায়। সত্তরের দশকে ইদি আমিনের স্বৈরাচারী শাসনের সময় উগান্ডা থেকে পালিয়ে যান ক্যাশের মা-বাবা। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন তারা। নিউইয়র্কের গার্ডেন সিটিতে ১৯৮০ সালে জন্ম হয় ক্যাশের।
বিশ্বের অন্যতম জনবহুল, অভিবাসীদের জন্য সুপরিচিত এবং শীর্ষ ধনীদের শহর নিউইয়র্কেই বেড়ে উঠতে থাকেন ক্যাশ। ইহুদি ধর্মতত্ত্ববিদ আব্রাহাম জোশুয়া হেশেলের প্রতি তার ছিলো গভীর অনুরাগ।
ক্যাশ প্যাটেল পড়াশোনা করেছেন বেশ কয়েক জায়গায়। রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে স্নাতক হয়েছেন। ব্রিটেনের ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’-এর ‘ফ্যাকাল্টি অফ ল’ থেকে আন্তর্জাতিক আইনেও নিয়েছেন ডিগ্রি। এরপর একজন পেশাদার আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ক্যাশ। বেশ কয়েকটি জটিল মামলা লড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। খুন, মাদক পাচার এবং আর্থিক অপরাধ বিষয়ক কয়েকটি মামলা তাকে ব্যাপক খ্যাতি এনে দেয়।
২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত সে সময় তার সঙ্গেও কাজ করেন ক্যাশ প্যাটেল। সে সময় প্রেসিডেন্টের উপ-সহকারী এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে সন্ত্রাস দমনের সিনিয়র ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেন তিনি। প্রতিরক্ষা সচিব ক্রিস্টোফার মিলারের ‘চিফ অফ স্টাফ’ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সন্ত্রাস দমনে তার ক্যাশ প্যাটেলের ঝুঁলিতে রয়েছে বড় ধরনের সফলতা। আল-বাগদাদি এবং কাসেম আল-রিমির মতো আইসিস নেতা এবং আল-কায়েদার নেতৃত্ব নির্মূল করাসহ; ট্রাম্প সরকারের তখনকার একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পেছনের অন্যতম মাথা হিসেবে ভাবা হয় ক্যাশকে।
এছাড়াও সে সময় অনেক মার্কিন পণবন্দিকে ছাড়িয়ে আনার ক্ষেত্রে ক্যাশ প্যাটেল রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং ইন্টেলিজেন্স সংক্রান্ত হাউসের স্থায়ী নির্বাচন কমিটির সিনিয়র কাউন্সিল হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই তরুণ।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রভাবিত করার জন্য রাশিয়ার নাক গলানোর যে অভিযোগ উঠেছিলো, সেই অভিযোগের বিষয় খতিয়ে দেখতে যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিলো, সেই কমিটিরও প্রধান ছিলেন এই ক্যাশ প্যাটেল। হয়তো এসব কারণেই তাকে এফবিআইয়ের প্রধান হিসেবে ভাবছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: এবার মার্কিন ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা, পুতিনের হুঁশিয়ারি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা সংস্থা হলো এফবিআই। ক্যাশ প্যাটেল কি পারবেন এই সংস্থাকে নেতৃত্ব দিতে? এমন প্রশ্নও ওঠা শুরু হয়েছে। ক্যাশকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ এফবিআইয়ের অবসরপ্রাপ্ত বিশেষ এজেন্ট ড্যানিয়েল ব্রুনার। তিনি ট্রাম্পের অনুগত মিত্র ক্যাশ প্যাটেলকে নিয়ে একটি ভয়ানক সতর্কতা জারি করেছেন। ড্যানিয়েল মনে করছেন, কোনো সংস্থাকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই ক্যাশ প্যাটেলের; এমনকি একটি কাব স্কাউট দলেও না। অথচ তাকেই বসানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষপদে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের অনুগতদের মধ্যেও ক্যাশ প্যাটেল ব্যাপকভাবে বিতর্কিত একজন ব্যক্তি এবং তাকে মূলত আত্মকেন্দ্রিক হিসেবেই দেখা হয়। তবে ক্যাশ প্যাটেল এফবিআইয়ের পরিচালক হলে ট্রাম্পের রাজনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার মতো বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে বলে সূত্রের বরাতে জানিয়েছে সিএনএন।