নভেম্বর ১৬, ২০২৪, ০১:৪২ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব ঘোচাতে এবং নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম হবেন। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প-ইউনূস সম্পর্কের টানাপোড়েন একটি বহুল আলোচিত বিষয়। তবে চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পর্ক এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টার-এর দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, ড. ইউনূস শিগগিরই ট্রাম্পের সঙ্গে পুরনো দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলবেন।
তিনি বলেন, “ট্রাম্প এমন এক সময়ে ক্ষমতায় এসেছেন, যখন ড. ইউনূস বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করছেন।”
কুগেলম্যান আরও বলেন, “ট্রাম্পের বিজয়ের পরপরই ড. ইউনূস তাঁকে যে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন, তা ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ইতিবাচক বার্তা বহন করে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ইউনূসকে একটি বৃহৎ ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে।
আরও পড়তে পারেন: আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন, ভরসা রাখুন: ড. ইউনূস
তিনি বলেন, “ড. ইউনূস এখন ১৭ কোটি মানুষের একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, যার ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও।”
ড. ইউনূস এবং ট্রাম্পের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ২০১৬ সালে। সে সময় ট্রাম্পের জয়কে ‘সূর্যগ্রহণ’-এর সঙ্গে তুলনা করে সমালোচনা করেছিলেন ড. ইউনূস।
অন্যদিকে, ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে ইউনূসের সম্পর্ক বরাবরই হৃদ্যতাপূর্ণ। তিনি বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত।
আইপিএজি এশিয়া-প্যাসিফিক-এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনির খসরু বলেন, “হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণায় আর্থিক সহায়তা প্রদান ট্রাম্পের সঙ্গে ইউনূসের সম্পর্ককে জটিল করেছিল। তবে এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পররাষ্ট্রনীতিকে প্রভাবিত করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সবসময়ই উন্নয়ন, প্রযুক্তি এবং বাণিজ্যে শক্তিশালী।”
আন্তর্জাতিক এই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের ইউনূস সরকার নিঃসন্দেহে সম্পর্ক আরও জোরদার করবে। বিশেষ করে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে। কারণ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
খসরুর মতে, সন্ত্রাসবাদ দমন, মানবাধিকার রক্ষা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখবে।
গত ৩১ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ট্রাম্প একটি পোস্ট করেছিলেন। সেখানে বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা করেছিলেন তিনি।
বিস্তারিত জানতে: ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
ওই পোস্টের প্রসঙ্গ টেনে মাইকেল কুলেগম্যান বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বাংলাদেশকে নিয়ে যে পোস্ট দিয়েছিলেন সেটি তাঁর নীতির প্রতিনিধিত্ব নয়, সেটি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার অংশ ছিল।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও গভীর করার এটাই উপযুক্ত সময়।
অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বাড়াতে একজন দক্ষ লবিস্ট নিয়োগ করা প্রয়োজন, যিনি মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কাছে বাংলাদেশের আবেদনকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারবেন।”
তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেরও উচিত ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ করা। এতে দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।”
অতীতের দ্বন্দ্ব ভুলে ড. ইউনূস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা সম্ভব।
কৌশলগত অবস্থান, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য উভয় দেশের সহযোগিতা সময়ের দাবিতে রূপ নিয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, এই সম্ভাবনাকে দুই পক্ষ কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগায়।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের আসল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে: Bangladesh’s Yunus could ‘bury the hatchet’ with Donald Trump to advance ties