দেশের ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ প্রয়োজন হলে বিএনপির সঙ্গে একযোগে কাজ করার বিষয়ে তার দলের প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
রোববার লন্ডনভিত্তিক ‘চ্যানেল এস’ টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “আমি বিএনপির সাথে অনেক ক্ষেত্রে একমত।
“এবং বিএনপি যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলছে, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে, সেটির সাথে আমরা একমত এবং প্রয়োজনে বিএনপির সাথে একযোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করব।" খবর: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাছান মাহমুদের দেশ ছাড়ার খবর এসেছিল। তবে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী ও দলের সংসদ সদস্যদের গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে তিনি কীভাবে বাইরে গেলেন, সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে এখনও।
`আওয়ামী লীগ: তটস্থ, হতাশ, কোণঠাসা?’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ৫ আগস্ট সরকার পতনের প্রায় তিন মাসের মাথায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতার প্রথম কোনো সাক্ষাৎকার।
উপস্থাপক বুলবুল হাসানের সঞ্চালনায় ‘অভিমত’ নামের সাক্ষাৎকারভিত্তিক ওই অনুষ্ঠানে হাছান তার বর্তমান অবস্থান কোথায় তা জানাননি।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামল, জুলাই-অগাস্টের ‘হত্যাকাণ্ড`, আওয়ামী লীগের ফিরে আসা, অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এক প্রশ্নে হাছান বলেন, “বিএনপির অনেক বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত। আমরা এক-এগারোর সরকারের সঙ্গে একযোগেই কিন্তু গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন করেছিলাম এবং গণতন্ত্র ফিরে এসেছে।
"এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেব কিংবা বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যে বক্তব্যগুলো দিচ্ছেন, সেগুলোর অনেকগুলোর সাথে আমরা একমত।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বিশেষ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার আমরা কারা?’- এই যে প্রশ্ন তুলেছেন, আমি এটির সাথে একমত। এমনকি ছাত্রলীগকে কাগজে নিষিদ্ধ করার পর সেটির বিরুদ্ধেও তারা বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তাদের এই বক্তব্যের সাথে একমত।
“এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবসহ তাদের শীর্ষ নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা- এই বক্তব্যের সাথে আমি পুরোপুরি একমত।”
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ প্রশ্ন থেকে শুরু করে দেশে যাতে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না হয়, এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থানকেও ‘সাধুবাদ’ জানানোর কথা বলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
হাছান মাহমুদ বলেন, “জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ হওয়ার পর বিএনপি যে বক্তব্য, সেই বক্তব্যের সাথেও আমরা একমত। একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আমি ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে আমি হামলা করলাম, সেই রাজনৈতিক দলের অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হল- এ নিয়ে সরকারের কোনো বক্তব্য খুঁজে পাচ্ছি না।”
দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে হতাশ হওয়ার কথা তুলে ধরে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “কোনো সরকারই কিন্তু শেষ সরকার নয়, মনে রাখতে হবে; আমাদের ক্ষেত্রে আমরাও শেষ সরকার ছিলাম না।”