যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যে নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে সাজাপ্রাপ্ত এক আসামির। প্রথমবারের মতো বিতর্কিত এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো দেশটিতে। নাইট্রোজেন গ্যাসের সাহায্যে শ্বাসরোধ করে কেনেথ ইউজিন স্মিথ নামে ওই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এর আগে, ২০২২ সালের নভেম্বরে কেনেথ ইউজিন স্মিথের প্রাণনাশক ইনজেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়।
তবে দুই শিরায় ইনজেকশন দেয়ার কথা থাকলেও কারাগারের লোকজন একটি শিরায় সেটি প্রয়োগ করে। আরেকটি ইনজেকশন দেয়ার ঘণ্টাব্যাপী প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে পরে তা বন্ধ করা হয়।
শেষ পর্যন্ত নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ১৯৮৮ সালে একজন যাজকের স্ত্রীকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আদালত।
স্মিথের আইনজীবীরা অপরীক্ষিত এই পদ্ধতিকে "নিষ্ঠুর এবং অস্বাভাবিক" শাস্তি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আলাবামাসহ দেশটির আরও দুইটি রাজ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে নাইট্রোজেন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। সাধারণত এক্ষেত্রে যে প্রাণনাশক ওষুধ ইনজেকশনে ব্যবহার করা হয় সেগুলো পাওয়া কঠিন হয়ে যাওয়ায় এই গ্যাস ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
প্রাণনাশক ওষুধের ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হ্রাসে ভূমিকা রেখেছে।
নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে কীভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়?
অক্সিজেন ছাড়া নাইট্রোজেন গ্যাস নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে কোষগুলো ভেঙে যায় এবং মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। বিশেষভাবে তৈরি একটি মাস্ক পরানো হয় আসামিকে। এ মাস্কের ভেতর দিয়ে অক্সিজেন চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। মাস্কটি নাইট্রোজেনভর্তি একটি সিলিন্ডারের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
আপাতভাবে নাইট্রোজেন বিষাক্ত কোনো গ্যাস নয়। এমনকি বায়ুমণ্ডলের এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে আছে এই নাইট্রোজেন গ্যাস।
কিন্তু ঘনীভূত আকারে থাকা অবস্থায় এই গ্যাসে শ্বাস নিলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় নাইট্রোজেন হাইপোক্সিয়া।
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামাসহ তিনটি রাজ্যে এই প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিধান করা হয়েছে।
এদিকে আলাবামা সরকারের নেয়া এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও স্মিথের আইনজীবী। কিন্তু আলাবামা সরকার নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীর দাবি, পদ্ধতিটি ঝুঁকিপূর্ণ, পরীক্ষামূলক এবং এটি একটি নির্যাতনমূলক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা পদ্ধতি। এমনো হতে পারে, এই পদ্ধতিতে ব্যক্তির মৃত্যু না হয়ে, সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
তবে নাইট্রোজেন ব্যবহার করে ‘অপরীক্ষিত’ ও ‘অপ্রমাণিত’ হওয়ার অভিযোগ আছে।
নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। তবে এবারই প্রথম এই পদ্ধতির ব্যবহার করা হলো।
যদিও সময়ের সঙ্গে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড প্রথার জনপ্রিয়তা ক্রমাগত কমছেই, তবু এর ফলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মাধ্যম হিসেবে নতুন একটি পথ তৈরি হয়েছে।