ট্রাম্প তার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আরও এক ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি হলেন কাশ প্যাটেল। আমেরিকার অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বাহিনী ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন-এফবিআই-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে।
এ ঘোষণার পরপরই ট্রাম্পের সাবেক স্পিরিচ্যুয়াল অ্যাডভাইজার জনি ম্যুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-হ্যান্ডেলে যেমনটি জানিয়েছেন যে, ‘ঊষা, তুলসি, বিবেক, জয় এবং কাশ। এসব ভারতীয়/হিন্দু আমেরিকান হলো ট্রাম্পের পরবর্তী প্রশাসনের প্রাণস্বরূপ। আমেরিকার একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে তাদের জন্য এটি দারুন ব্যাপার।’
এফবিআই-এর প্রধান হিসেবে কাশ প্যাটেলের নাম ঘোষিত হওয়ার পর অন্তত পাঁচজনকে পাওয়া গেলো যারা ভারতীয় বংশোদ্ভূত বা হিন্দু ধর্মের সঙ্গে যুক্ত। কাশ ছাড়াও বাকি চারজন হলেন- আমেরিকার সেকেন্ড লেডি ঊষা ভান্স, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির ডিরেক্টর তুলসি গ্যাবার্ড, ইলন মাস্কের পাশাপাশি ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত বিবেক রামাস্বামী এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ-এনআইএইচ-এর ডিরেক্টর জয় ভট্টাচার্য।
কাশ প্যাটেল
সদ্য নিযুক্ত এফবিআই প্রধান কাশ প্যাটেলের পুরো নাম কশ্যপ প্রমোদ পটেল। সংক্ষেপে কাশ পটেল নামেও পরিচিত তিনি। ১৯৮০ সালে নিউ ইয়র্কের গার্ডেন সিটিতে জন্ম কশ্যপের। আইন নিয়ে পড়াশোনার জন্য নিউ ইয়র্কে আসার আগে রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে স্নাতক হন তিনি। ব্রিটেনের ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’-এর ‘ফ্যাকাল্টি অফ ল’ থেকে আন্তর্জাতিক আইনেরও ডিগ্রি রয়েছে তার। তিনি কর্মজীবন শুরু করেন আইনজীবী হিসাবে।
কাশ ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিফ অব স্টাফ, ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স-এর ডেপুটি ডিরেক্টর এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সন্ত্রাসদমন দপ্তরের সিনিয়র ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ঊষা ভান্স
ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসতে চলেছেন জেডি ভান্স। জেডি ভান্সের স্ত্রী ঊষা চিলুকুড়ি ভান্সের সঙ্গেও রয়েছে ভারতীয় যোগ। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের ভাদলুরু হলো ঊষার আদি গ্রাম।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় ৫ নারী, এদের সম্পর্কে যা জানা গেছে
আরও পড়ুন: নতুন এফবিআই প্রধান কে এই ক্যাশ প্যাটেল!
ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোতে জন্মগ্রহণ করেন ঊষা। স্নাতক ডিগ্রি করেছেন ইতিহাসে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দর্শনে স্নাতকোত্তর করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২০১৪ সালে কেন্টাকিতে জেডি ভান্সকে বিয়ে করেন ঊষা। জেডি ভান্সের বিশ্বাস, স্ত্রীর হিন্দু ধর্মের প্রতি আনুগত্যই তাকে রাজনৈতিকভাবে এতদূর এগিয়ে দিয়েছে। ঊষা ভান্সের বাবা চিলুকুড়ি রাধাকৃষ্ণান চেন্নাইতেই বড় হয়েছিলেন, পরে তিনি আমেরিকায় চলে যান পড়াশোনার জন্য।
তুলসি গ্যাবার্ড
তুলসী গ্যাবার্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির ডিরেক্টর হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
তুলসী গ্যাবার্ডের পরিচয় সম্পর্কে অনেকেরই কৌতূহল রয়েছে। তার নাম এবং হিন্দু ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের কারণে অনেকেই তাকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলেও অনুমান করেন। তবে তুলসি কিন্তু ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন। যদিও নিজেকে হিন্দু বলেই পরিচয় দিয়ে থাকেন তিনি। ২০১৯ সালে, তুলসী গ্যাবার্ড তার হিন্দু পরিচয় সম্পর্কে ‘রিলিজিয়ন নিউজ সার্ভিস’-এর জন্য একটা প্রতিবেদন লিখেছিলেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, হিন্দু হিসাবে গর্ববোধ করলেও তিনি ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদী’ নন।
১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়ায় জন্মগ্রহণ করেন তুলসি। তার বাবা মাইক গ্যাবার্ড এবং মা ক্যারল গ্যাবার্ড। ১৯৮৩ সালে তুলসী গ্যাবার্ডের বয়স যখন দু’বছর, তখন তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। হাওয়াইতে আসার পর, তার মা ক্যারল হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। তার বাবা একজন রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ছিলেন। হিন্দু ধর্মের প্রভাবের কারণে ক্যারল গ্যাবার্ড তার সন্তানদের হিন্দু নাম রেখেছিলেন।
বিবেক রামাস্বামী
২০২৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের প্রাথমিক নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টক্কর দিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতি বিবেক রামাস্বামী।
এক তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা বিবেকের বাবা-মা ভারতে কেরালা রাজ্য থেকে চলে আসেন আমেরিকার সিনসিনাটিতে। এখানে এসে ওহায়োয় ১৯৮৫ সালে জন্ম হয় বিবেকের।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে ৩৯ বছর বয়সি এই উদ্যোক্তার ২০২৩ সালে মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল আট হাজার কোটি টাকার বেশি।
২০২০ পর্যন্ত নিজেকে অরাজনৈতিক বলে দাবি করা বিবেক ভাবী ট্রাম্প মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ নামে নতুন মন্ত্রকের দায়িত্বে ইলনের পাশাপাশি থাকছেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিবেক রামাস্বামী।
জয় ভট্টাচার্য
যুক্তরাষ্ট্রের বায়োমেডিক্যাল গবেষণা বিষয়ক সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ-এনআইএইচ-এর পরবর্তী ডিরেক্টর হচ্ছেন জয়ন্ত ভট্টাচার্য। তিনি জয় নামেই বেশি পরিচিত। শৈশবেই বাবার কর্মসূত্রে আমেরিকা-যাত্রা করেন তিনি। সেখানকার উচ্চারণে জয় হয়ে যায় ‘জে’। সেই নামেই এখন তাঁর পরিচিতি গোটা বিশ্বে।
জয় ভট্টাচার্যের বাড়ি ছিল পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরে। ১৯৬৮ সালে এখানেই তার জন্ম। বয়স যখন তিন বছর তখন পরিবারসহ পাড়ি জমান আমেরিকায়। পড়াশোনা করেছেন আমেরিকাতেই। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিসিনে এমডি ও অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন জয় ভট্টাচার্য।