ইস্তাম্বুলে এত বিড়াল কেন!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ২০, ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম

ইস্তাম্বুলে এত বিড়াল কেন!

ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের অন্যতম প্রাচীন শহর ইস্তাম্বুল। পুরো শহরই যেন বিড়ালের বিচরণ ক্ষেত্র। এ শহরের সরু গলি কিংবা কোনো বাড়ির ছাদ অথবা জানালার কার্নিশে আদুরে প্রাণী বিড়ালকে সব সময়ই দেখা যায়। । এজন্যই হয়তো ইস্তাম্বুলকে বিড়ালের শহর নামেও ডাকেন অনেকে।

সকালের রোদে অলস শুয়ে থাকা, খাবারের খোঁজে দোকানে দোকানে লাফালাফি কিংবা পথচারীর সঙ্গে আদুরে ভঙ্গি। এক কোল থেকে আরেক কোল কিংবা পাশে থাকা কারো সঙ্গে ভাব গড়ে ওঠা। এগুলো সবই ইস্তাম্বুল শহরের অতিচেনা, স্বাভাবিক দৃশ্য। খুব ভিড় থাকা কোনো দোকানেও নিজের আসনটি ঠিক খুঁজে পায় আদুরে বিড়ালগুলো।  এ শহরের জীবনযাপনে বিড়ালের অনুপস্থিতিই যেন অস্বাভাবিক। জীবনযাপনের অন্যসব অনুষঙ্গের মতো বিড়ালের দাপিয়ে বেড়ানো নিয়ে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপও থাকে না এ শহরে। বরং কখনো কখনো বিড়ালই হয়ে ওঠে এ শহরের মানুষের খোশগল্পের অনুষঙ্গ।

পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা পুচকেদের মতো সবাই সবার বিড়ালের নাম জানে। বিড়ালগুলোকে তাদের নাম ধরেও ডাকা হয়। বিড়ালকে নিয়ে মালিকদের গর্ববোধেরও কমতি থাকে না। নতুন বন্ধু কিংবা অপরিচিত কাউকে পেলেই বিড়াল বন্দনায় মেতে ওঠেন মালিকরা। যখন পুরো শহরে শীত নেমে আসে, উষ্ণতাই যখন হয়ে যায় একমাত্র চাওয়া, তখন এ শহরের মানুষ বিড়ালকে শীত কষ্টে রাখেন না। অনেকেই উষ্ণতার জন্য নিজের ঘরে নিয়ে আসেন। অনেকে বিড়ালের জন্যই তৈরি করে আলাদা উষ্ণ ঘর।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামারও আদুরে বিড়াল ছিল হাগিয়া সোফিয়া মসজিদের বাসিন্দা ‘গ্লি’। ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন তুরস্ক সফরে যান হাগিয়া সোফিয়া মসজিদে তার গায়ে হাত বুলিয়ে ছবিতে পোজ দেন। বিশ্বের প্রায় বড় বড় সংবাদ মাধ্যম ওবামার সেই ছবিটি প্রকাশ করে। এরপর থেকেই এই ‘গ্লি’ বিড়ালটি বিশ্ব পরিচিতি পায়। হাগিয়া মসজিদে প্রার্থনা পুনরায় চালু হওয়ার পর তার ভক্ত সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। নামটি তুর্কী ভাষায় দেয়া। ‘গ্লি’র অর্থ ‘ভালবাসার মিলন’ ‘প্রেমের মিলন’। ধূসর রঙ আর সবুজ চোখের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘গ্লি’র  রয়েছে বহু অনুরাগী। গত ৮ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুতে সেখানে হাজার হাজার মানুষ শোক প্রকাশ করেন। ইস্তাম্বুলের লেভেন্ট জেলায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে একটি বেসরকারি ভেটেরিনারি ক্লিনিক এ‘গ্লি’র চিকিত্সা চলছিল। বার্ধক্যজনিত বয়সের কারণেই গ্লি মারা গেছে বলে চিকিতসকরা জানান”। গিলির অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বিড়ালটিকে চূড়ান্ত বিদায় জানানোর খবর পোস্ট করা হয়।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বের আনাচে কানাচে থেকে হাজার হাজার ভক্ত তাদের প্রিয় এই বিড়ালটির মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেন।তুরস্কের বাইরের দেশে এই বিড়ালের প্রতি ভালবাসার অন্যতম কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা ঐতিহাসিক হাজিয়া সোফিয়া মসজিদ দেখতে এসে এই বিড়ালটিকে দেখতে পান এবং ওর প্রেমে পড়েন সবাই। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে কেঁদেছেন অনেক ভক্ত। কমপক্ষে ১৬ বছর ধরে হাগিয়া সোফিয়ায় বসবাসকারী বিড়াল গ্লি আন্তর্জাতিক সংবাদে পরিচিতি লাভ করে বিশেষত লক্ষ লক্ষ পর্যটক যারা এই ঐতিহাসিক মসজিদটিতে পরিদর্শন করেন তাদের বদৌলতে।

ইসলাম বিড়ালকে সম্মানিত প্রাণী বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রশংসিত এ প্রাণী। হযরত কাবশা বিনতে কাব ইবনে মালিক রা. বলেন, ‘আবু কাতাদা রা. আমার কাছে আগমন করলেন। আমি তার জন্য পানিভর্তি একটি অজুর পাত্র উপস্থিত করলাম। এসময় একটা বিড়াল তা থেকে পানি পান করল। তিনি ওই বিড়ালটির জন্য পাত্রটি কাত করে দিলেন। যাতে সে নির্বিঘ্নে পান করতে পারে। কাবশা রা. বলেন, তখন আবু কাতাদা রা. দেখলেন আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। তিনি বললেন, হে ভাতিজি! তুমি কি আশ্চর্য বোধ করছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, রাসুল সা. বলেন, ‘এরা (বিড়াল) অপবিত্র নয়, এরা তোমাদের আশপাশে বিচরণকারী এবং বিচরণকারিনী।’ (নাসায়ি ৩৪১)

লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা তুরস্কের মানুষের বিড়ালের প্রতি ভালবাসার উপর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে গত ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে শিরোনাম দেয়। “Turkey: where pampered cats are top dog”. তুরস্কে এখনও বিড়ালকে জেব্রা ক্রসিং-এ রাস্তা পারাপারে বিড়ালকে পার হওয়ার সুযোগ করে দেন পথচারিরা।

 

Link copied!