রাশিয়ার কারণেই কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে যাচ্ছে?

মিতালি মন্ডল

এপ্রিল ৩, ২০২৩, ০৩:০৮ এএম

রাশিয়ার কারণেই কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে যাচ্ছে?

গত একবছরের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব রাজনীতিকে অনেকখানি বদলে দিয়েছে। যার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। দীর্ঘ দিন ধরে চলা যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউক্রেন। তবে পুরোসময়েই কূটনৈতিক কৌশল, সামরিক ও আর্থিক সহযোগিতায় ইউক্রেনকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখাসহ একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আর শর্তের বেড়াজালে রাশিয়াকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমারা।

এছাড়াও ইউক্রেনের তদবিরে সাড়া দিয়ে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, হিমার্স রকেট, আব্রামস, লিওপার্ড-টু ট্যাঙ্ক যুক্ত হয়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র ভান্ডারে।

যুদ্ধের দামামা একটু কমে আসলেও গত কয়েক দিন ধরে একটি খবর চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে,সেটি হল চীন হয়তো রাশিয়াকে সামরিক অস্ত্রশস্ত্র জোগান দিতে পারে।সামরিক সরঞ্জামের অভাবে থাকা রাশিয়ার এটি একটি বড় সুযোগ হলেও কতখানি কাজে লাগাতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়।

কেননা, চীন এবং রাশিয়া মৈত্রী জোটে পরিণত হলে, নেটো  ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে একটি পরোক্ষ যুদ্ধ চালালে, তখন বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন বিভাজন দেখা যাবে। এর একদিকে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটো জোট, অন্যদিকে চীন-রাশিয়া এবং তাদের সহযোগী দেশগুলো।

চলমান ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে  ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যে মেরুকরণ দেখতে পাওয়া যায় তাতে করে যুক্তরাষ্ট্র হতে শুরু করে ইউরোপের অনেক দেশই পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।অনেক দেশ অনেক দেশের বাজারে প্রবেশের সুযোগ হারাবে।যার ফলে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হবে,এ পরিস্থিতিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা থেকে যায়।

এরই মধ্যে প্রতিবেশী মিত্র দেশ বেলারুশে কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে রুশ ভূখণ্ডে হামলা হলে ‘সম্ভাব্য সব উপায়’ কাজে লাগানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণা যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত, তা বলাই বাহুল্য।

অন্যদিকে, চীনের ও রাশিয়ার অন্যতম মিত্র দেশ হিসেবে পরিচিত উত্তর কোরিয়াও একের পর এক পরমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে হামলা চালালে বেলারুশ ও উত্তর কোরিয়া স্বাভাবিকভাবে নিরপেক্ষ থাকবে না। তারাও যে রাশিয়ার পক্ষে অস্ত্র ধারণ করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমতাবস্থায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো আবারও মিত্রশিক্তি ও অক্ষশক্তির আবির্ভাব হতে হতে পারে-এর অর্থ বর্তমান বিশ্ব আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ দেখতে পারে।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘাতের নেপথ্যে মূল কারণ মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা। ইইউ ও ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ইউক্রেন। তবে ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্ত হওয়া মানেই রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের হুমকি উল্লেখ করে কিয়েভ ও তার মিত্রদের সতর্ক করে দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ নিয়েই মূলত টানাপড়েন শুরু হয়।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের এরকম এক আশংকার কথা প্রথম শোনা গিয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখে। ইউক্রেনের ওপর একটি নো ফ্লাই জোন আরোপের জন্য যখন নেটোর ওপর চাপ দেয়া হচ্ছিল, তখন সেটা নাকচ করে দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, এটা করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়াকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে হবে, আর সেটার মানে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

Link copied!