ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২, ০৬:৩১ এএম
ভারতে চলমান হিজাব–বিতর্কে সরাসরি হস্তক্ষেপে আবারও নারাজ হলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা আজ শুক্রবারও জানিয়ে দিলেন, প্রয়োজন বোধ করলে ঠিক সময়ে তারা ব্যবস্থা নেবেন। অবিলম্বে হস্তক্ষেপের দাবি নাকচ করে আবেদনকারীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এভাবে বিষয়টির জাতীয়করণ করবেন না। হস্তক্ষেপ করতে হলে আমরা উপযুক্ত সময় করব।’
ভারতের দক্ষিণি রাজ্য কর্ণাটকের বিভিন্ন জেলার কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। হিজাবের বিরুদ্ধে গেরুয়া চাদর ও ওড়না পরে হিন্দু শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন। সৃষ্টি হয়েছে অনাবশ্যক বিতর্ক ও উত্তেজনা। ছাত্রীদের কেউ কেউ ধর্মীয় আচারের স্বাধীনতা চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
উত্তেজনা প্রশমনে গোটা রাজ্যে স্কুল–কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কর্ণাটক হাইকোর্টের বেঞ্চ এই পরিস্থিতিতে শিক্ষালয় খোলার আরজি জানিয়ে বলেছেন, বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন ধর্মীয় পোশাক পরে স্কুল–কলেজে না আসেন।
বিষয়টির স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। কিন্তু প্রধান বিচারপতি রমনা তাতে রাজি হননি। তাঁর যুক্তি ছিল, আগে কর্ণাটক হাইকোর্ট মামলা শুনুন। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত নেবে।
বৃহস্পতিবার কর্ণাটক হাইকোর্টের সুপারিশ জানার পর তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে আরও একবার সেই অনুরোধ করা হয় আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু দ্বিতীয়বারও তা নাকচ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অনুগ্রহ করে এটা নিয়ে চাপ দেবেন না। জাতীয় স্তরে ছড়াবেন না।’ তিনি বলেন, ‘কী ঘটছে সব আমরা জানি। রাজ্য পর্যায়ের বিষয় জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে আসবেন না। অন্যায্য কিছু হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
বিজ্ঞাপন
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিজাব–বিতর্কের জাতীয়করণ না করার অনুরোধ জানালেও ঘটনা হলো, এই বিতর্ক কর্ণাটকের সীমানা পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পৌঁছে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে পক্ষে–বিপক্ষে মতামত। সংসদের উভয় কক্ষেও বিভিন্ন সদস্য ঘটনার উল্লেখ করেছেন। যেভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিক্ষোভ শুরু হয়েছে মধ্যপ্রদেশ, পুদুচেরি, দিল্লি, কলকাতাসহ বেশ কিছু রাজ্য ও শহরে। শুধু দেশ নয়, অবাঞ্ছিত এই বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও। এককথায়, কর্ণাটকের হিজাব–বিতর্কের আন্তর্জাতিকীকরণ হয়ে গেছে।
বিতর্ক শুরুর পরপরই নোবেল জয়ী ইউসুফজাই মালালা গত বুধবার উদ্বেগ প্রকাশ করে টুইট করেছিলেন। হিজাব–বিতর্কের ছবি দিয়ে এবং এ–সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে তিনি টুইটে লিখেছিলেন, ‘কলেজ আমাদের বাধ্য করছে হিজাব ও লেখাপড়ার মধ্যে একটি বেছে নিতে। হিজাব পরে স্কুলে যেতে না দেওয়ার বিষয়টি ভয়ংকর। নারীদের কম অথবা বেশি পোশাক পরা নিয়ে আপত্তি জানানো অব্যাহত রয়েছে। ভারতীয় নেতারা, মুসলিম নারীদের এভাবে প্রান্তবাসী করে রাখা বন্ধ করুন।’
মালালার পর এবার এ বিষয়ে আপত্তি জানালেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফুটবলার পল পগবা। গত বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের এই খেলোয়াড় ইনস্টাগ্রামে হিজাব–বিতর্কের এক ক্লিপিং জুড়ে দেন। লন্ডনভিত্তিক এক সংগঠনের দেওয়া ৫৮ সেকেন্ডের ওই ক্লিপিংয়ের শিরোনাম, ‘হিজাব পরার জন্য ভারতের কলেজে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম ছাত্রীদের হেনস্তা করেই চলেছে।’ গেরুয়াধারী হিন্দুত্ববাদী জনতা কীভাবে হিজাব পরা ছাত্রীদের হেনস্তা করছে, তারই টুকরো টুকরো ছবি ছিল ওই ক্লিপিংয়ে।
কর্ণাটকের উদুপি জেলার সরকারি এক কলেজে এক মাস আগে হিজাব পরার দাবিতে প্রথম সরব হয়েছিলেন ছয় ছাত্রী। তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্যও নেট মাধ্যমে ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছে। জেলা পুলিশের কাছে এক ছাত্রীর অভিভাবক এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে বলেছেন, তাঁর কন্যা ও তাঁর বান্ধবীদের নাম, ফোন নম্বর, ফেসবুক অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য নেট মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে বিপদে পড়তে হতে পারে।
পুলিশ সুপার বিষ্ণুবর্ধন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। তথ্যাদি হাতে এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।