চলতি বছরে ৬২৩টি নারী ও ৭৬৮টি শিশু ও কিশোরী যৌন নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ২৩১টি, দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১৭ জন নারী, ধর্ষণ-হত্যার শিকার হয়েছেন ১৬ জন নারী, ধর্ষণের চেষ্টার শিকার ১১০ জন ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৪৯ জন নারী। অ্যাসিড নিক্ষেপে আক্রান্ত হয়েছে ১০ জন নারী। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭২। অন্যদিকে ৪২ জন প্রতিবন্ধী নারী ও শিশু বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) `বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৩: এমএসএফ`র পর্যবেক্ষণ` শীর্ষক প্রেস কনফারেন্সে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবনের (সাগর-রুনি হল) এই প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত প্রেস কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করবেন এমএসএফ`র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। এমএসএফ এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন পত্রিকার তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যেমন: ধর্ষণ, দলগত ধর্ষণ-হত্যা ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বিগত সময়ের তুলনায় চলতি বছরে উদ্বেগজনকভাবে ঘটেছে। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতারোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমনে ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা লক্ষণীয় ছিল না। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, অপরাধ প্রতিরোধে দৃশ্যমান সে বিষয়টি দেখা যায়নি। বিচারহীনতা, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা ও অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ক্রমাগতভাবে ঘটেছে।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, এ বছর আত্মহত্যা করেছেন ৫১২ জন নারী। এ ছাড়া অপহরণ করা হয়েছে ১৫ জন নারীকে, নিখোঁজ রয়েছেন ২২ জন নারী। নারী প্রতি সহিংসতার শিকারে হয়েছেন ১৪ জন প্রতিবন্ধী নারী। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত জটিলতা ইত্যাদি কারণে এ হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।
এ ছাড়া ৭৬৮টি শিশু ও কিশোরী যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ৪৩২ জন শিশু ও কিশোরী ধর্ষণ, ৬৪ জন দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে ২৫ জন শিশুকে, ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন শিশু কিশোরী, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৩০ জন শিশু কিশোরী ও ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন ১১৩ জন শিশু কিশোরী।
অপরদিকে ২০২৩ সালে শিশুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনায় শারীরিক নির্যাতনে ২৫৭ জন, ৫০ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ ২৮৫ জন শিশু কিশোরী হত্যার শিকার হয়েছেন। আত্মহত্যা করেছেন ২৯৫ জন শিশু । অপহরণ করা হয়েছে ৩৭ জন শিশুকে, নিখোঁজ রয়েছেন ৬৪ জন শিশু।
এ বছরে মোট ২৮টি ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা সমাজপতিরা আপোস করেছেন যা প্রচলিত আইনকে অবজ্ঞা করে বেআইনি ভাবে তারা সালিশে মীমাংসার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ ছাড়া ২০২৩ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২১ জন জীবিত ও ৭০ জন মৃত, মোট ৯১ জন নবজাতক শিশুকে পাওয়া গেছে যা অমানবিক ও নিন্দনীয়।