তুচ্ছ ঘটনায় তুলকালাম কাণ্ড

আহম্মেদ মুন্নী

অক্টোবর ৩, ২০২৩, ০৪:৩৩ পিএম

তুচ্ছ ঘটনায় তুলকালাম কাণ্ড

ফাইল ছবি

গত ১৩ মে কোচিং শেষে বন্ধুর সাথে চা খেতে আসে তাজুল ইসলাম। রাজধানীর শনির আখড়ার দনিয়াতে চা খাওয়ার সময় বন্ধুদের সাথে কথা কাটাকাটিতে ছুরিকাঘাতে নিহত হন তিনি। এদিকে হলের ডাইনিংয়ে বসা নিয়ে হামলার শিকার হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর দুই দফায় হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তুচ্ছ ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা, খুন আর মামলার ঘটনা বেড়েই চলছে। একেকটি ঘটনা আগের ঘটনা থেকেও অমানবিক ও লোমর্হষক হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনমনে। কখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট নিয়ে বাকবিতণ্ডা-হাতাহাতি থেকে শুরু করে খুন করে তবেই ক্ষান্ত হচ্ছে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানের সংখ্যা কমে যাওয়ায় অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।

কথা কাটাকাটিতে হচ্ছে খুনও

রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী আশফাকুর রহমান চৌধুরী শাতিলকে কথা কাটাকাটির মতো তুচ্ছ ঘটনায় হত্যা করে তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু রকি। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে।

অন্যদিকে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার আড়াল গ্রামে ফেসবুক পোস্টে কমেন্টের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে তিনজনের মৃত্যু হয়। নিহত তিনজন হলেন- কাপাসিয়া উপজেলার দক্ষিণগাঁও চরপাড়া গ্রামের মো. নাঈম (১৯), ফারুক হোসেন (২০) ও রবিন (১৫)।

শীতলক্ষ্যা নদীর নরসিংদীর পার এলাকার একজন ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দেন। শীতলক্ষ্যা নদীর অপর পারে গাজীপুরের কাপাসিয়া প্রান্তের কয়েক যুবক সেই পোস্টের বিরোধিতা করে সেখানে কমেন্ট করেন। এর জেরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুই পক্ষের যুবকেরা কাপাসিয়ার আড়াল গ্রামের এমপিএম অ্যাপারেলস কারখানার পাশে জড়ো হয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছুরিকাঘাত ও হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ জন আহত হন।

সামাজিক নিষ্ক্রিয়তাকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক সালমা বেগম দ্য রিপোর্টকে বলেন, শৈশবে যে নৈতিক শিক্ষাটা আমাদের দেওয়া হতো তা বর্তমানের পরিবারের মধ্যে কমে গেছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ওপর জোর দিলেও মানবিক দিকগুলো উপেক্ষিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন , একটি বিষয় হচ্ছে সমাজ ছোটখাট অপরাধ স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে। একসময় সন্ধ্যার পর কাউকে দেখলে বাসায় যেতে বলতো। এখন ভাবে আমার বাচ্চারা তো নয়, তাহলে আমি কেন বলব। এই মানসিকতার কারনে সামাজিক সংহতি অনেকটা নিষ্ক্রিয় হচ্ছে।

তবে এ থেকে উত্তরণের পথ হিসেবে অধ্যাপক সালমা বেগম মনে করেন, সোশ্যাল ইন্টারেকশন বাড়াতে হবে,পরিবেশ ও প্রতিবেশি সাথে সামাজিক এটাচমেন্ট বাড়াতে হবে। পারিবারিক বন্ধন বাড়াতে হবে। নিজের মা অসুস্থ আর সন্তানরা মাদার্স ডে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে সেলিব্রেট করার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবিএম নাজমুস শাকিব বলেন, আগের সামাজিক মূল্যবোধ আর এখনকার সময়টা অনেক পার্থক্য। তবে এই পার্থক্যের জন্য সামাজিক মেলবন্ধন কমে যাওয়াকে দায়ী করেন তিনি।

তিনি বলেন, আগে পাড়া মহল্লায় ক্লাব ছিল, সংগঠন ছিল, উন্মুক্ত মাঠ ছিল। সামাজিক অনুষ্ঠান করার যে সবাই একত্রিত হওয়ার যে বিষয়টা ছিল তার কিছুই এখন নেই। ফলে দূরত্ব বেড়েছে, বেড়েছে ঝুঁকিও।  আবার আবেগ নিয়ন্ত্রণ বা ধৈর্য্য ধরার প্রবণতা কমে গেছে। মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছে। নিজের ওপর নিজে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে, বুঝতে পারছে না নিজেই সে কতটুকু রাগ করছে সে রাগ কতটুকু ক্ষতির কারণ হচ্ছে।

তুচ্ছ ঘটনায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর পরামর্শে নাজমুস শাকিব বলেন, এটা তো একদিনে হয়নি। এসব শিক্ষা পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান থেকে পেতে হবে। সর্বোপরি আমাদের সামাজিক সম্প্রীতি বাড়াতে হবে।

Link copied!