আগস্ট ১৬, ২০২৩, ০৯:৩৯ পিএম
ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের (গভর্নিং বডি) দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাকের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন পাওয়ার জন্য আবেদন করলে আদালত তার জামিন আবেদন ফিরিয়ে দেন।বুধবার (১৬ আগস্ট) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে, আগাম জামিন আবেদনের বিষয়টি শুনানির জন্য উঠলে পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডি) সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদের উদ্দেশে একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আপনি কাজটি নৈতিকভাবে ঠিক করেননি।’
আদালতে আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভুঁইয়া।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভুঁইয়া গণমাধ্যমকে জানান, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের (গভর্নিং বডি) দাতা সদস্য মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ছাত্রীর বাবার দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় জামিন না দিয়ে আবেদন ফেরত দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মোশতাককে হাইকোর্ট যা বললেন: রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, বুধবার বেলা ১১টার দিকে আগাম জামিন আবেদনের বিষয়টি শুনানির জন্য উঠলে মুশতাকের উদ্দেশে আদালত বলেন, “আগে আপনি বিবাহিত ছিলেন কি?’ তখন মুশতাক বলেন, আগের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে। মুশতাকের আইনজীবী বলেন, তাঁদের (ছাত্রী ও মুশতাক) বিয়ে হয়ে গেছে। ছাত্রী প্রাপ্তবয়স্ক। একপর্যায়ে মুশতাকের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনি নৈতিকভাবে কাজটি ঠিক করেননি।’
মুশতাকের আইনজীবী বলেন, ওই মামলার অপর আসামিকে হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ জামিন দিয়েছেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করলে শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আমরা এই আবেদন শুনতে আগ্রহী নই।’ পরে মুশতাকের আইনজীবী আবেদন ফেরতের আরজি জানালে আদালত তা ফেরত দেন।
মোশতাকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা: এর আগে, ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবা মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করেন। ওই মামলায় ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়। আদালত বাদীর (ছাত্রীর বাবা) জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি গুলশান থানাকে এজাহার হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করার আদেশ দেন। সে অনুযায়ী মামলাটি থানা-পুলিশ নথিভুক্ত করে।
মামলার আর্জিতে যা বলা হয়েছে: মামলার আরজিতে বাদী ও ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবা উল্লেখ করেন, ‘তার মেয়ে (ভুক্তভোগী) মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতো এবং ছাত্রীকে ক্লাস থেকে অধ্যক্ষের কক্ষে ডেকে আনতো। খোঁজখবর নেওয়ার নামে ছাত্রীকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতো। কিছুদিন পর মুশতাক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করে এবং তাকে ও তার পরিবারকে ঢাকাছাড়া করার হুমকি দেয়।
এ রকম আচরণের বিষয়ে বাদী কলেজের অধ্যক্ষকে (২ নম্বর আসামি) ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি ‘ব্যবস্থা করতেছি’ বলে অভিযুক্ত মুশতাককে তার অফিস কক্ষে নিয়ে আসেন এবং ছাত্রীকে ক্লাস থেকে ডেকে এনে অফিস কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসামিকে সময় ও সঙ্গ দিতে বলেন।
অধ্যক্ষর কাছে বারবার প্রতিকার চাইলেও কোনও সহযোগিতা না করে বরং অভিযুক্ত মুশতাককে অনৈতিক সাহায্য করে আসতে থাকেন।
পরে বাদী উপায় না পেয়ে গত ১২ জুন মেয়েকে ঠাকুরগাঁওয়ের নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলে মুশতাক তার লোকজন দিয়ে সেখান থেকে তার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর বাদী জানতে পারেন আসামি তার মেয়েকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করছে এবং যৌন নিপীড়ন করছে।’
এই মামলায় হাইকোর্টে আইনজীবীর মাধ্যমে আগাম জামিনের আবেদন জানান খন্দকার মুশতাক আহমেদ। জামিন আবেদনের শুনানি থাকায় আদালতে হাজির হন তিনি।
চেম্বার আদালতে অধ্যক্ষের জামিন বহাল: ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবার দায়ের করা ধর্ষণ মামলার দ্বিতীয় আসামি মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী গত সোমবার (১৪ আগস্ট) হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান। তবে বুধবার ওই জামিনাদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করলে আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দেন। এর ফলে ফাওজিয়া রাশেদীকে হাইকোর্টের দেওয়া আগাম জামিন বহাল রইল। অধ্যক্ষ অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীর আইনজীবী মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
শুনানিতে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়েম মুরাদ। অন্যদিকে ফাওজিয়া রাশেদীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নূরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান।